Logo
×

Follow Us

ফুটবল

কোনটি জেতা কঠিন ইউরো না কোপা আমেরিকা!

Icon

মীর ইফতেখার উদ্দিন ফাহাদ

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১৬:২৭

কোনটি জেতা কঠিন ইউরো না কোপা আমেরিকা!

বাম থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পে, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, ক্রিস্টিয়ান পুলিশিচ ও লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসে মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে শুরু হয়েছে ফুটবল বিশ্বের বড় দুই প্রতিযোগিতা উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) ও কোপা আমেরিকা। যা ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। বলা হয়, ফুটবলের জন্ম ইউরোপে হলেও শৈল্পিক ছোঁয়া পেয়েছে লাতিনে। বিশ্বফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নেও ইউরোপ আর লাতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেনি কেউ। তাই ঘুরেফিরে প্রশ্ন ওঠে, দুই মহাদেশীয় প্রতিযোগিতার মধ্যে কঠিনতম কোনটি?

অনেকে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার অনুপস্থিতিতে ইউরোকে কিছুটা পিছিয়ে রাখতে চান। কিন্তু তাদের পাল্টা জবাব দেওয়া হয় জার্মানি আর ইতালির আটটি বিশ্বকাপ ট্রফির সাফল্যে, যা দুই লাতিন পরাশক্তির সমান।

ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে বরাবর লাতিনের চেয়ে ইউরোপকে ফুটবলে এগিয়ে রাখেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউরো জেতা বিশ্বকাপের চেয়ে কঠিন। এটি বিশ্বকাপের চেয়ে জটিল প্রতিযোগিতা। সব দলই একে অপরকে চেনে এবং প্রায়ই মুখোমুখি হয়। ইউরো জিততে ট্যাকটিক্যালি আপনার দলের খুবই ভালো পারফর্ম করতে হবে।’

এমবাপ্পে ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতলেও ইউরো ট্রফির স্বাদ পাননি। তাই তার কাছে ইউরো কঠিন মনে হতেই পারে। তবে স্প্যানিশ লা লিগার সভাপতি জাভিয়ের তেবাসও এমবাপ্পের কথায় সুর মিলিয়ে ইউরোকে কঠিন বলে মত দিয়েছেন। ফরম্যাট আর প্রতিযোগীদের মানদণ্ড বিবেচনায় ইউরো লড়াই নিঃসন্দেহে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। ইউরোতে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের অনেকগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিরোপাপ্রত্যাশী দলের সংখ্যাও বেশি। আবার শীর্ষ দলগুলোর সঙ্গে অন্যদের গুণগত ব্যবধান কম। ফলে ঘটে যায় নানা অঘটন। ২৪ দলের টুর্নামেন্ট হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং হয়। ইউরো ২০২০-এ ১৫টি নকআউট ম্যাচের মধ্যে আটটি অতিরিক্ত সময়ে গিয়েছিল, যা আসরটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা প্রদর্শন করে। 

এদিকে ২১ জুন থেকে মাঠে গড়ানো ৪৮তম কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টে দলের সংখ্যা বেড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার ১০ দলের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে উত্তর আমেরিকার ছয়টি দেশ। ঐতিহ্যগতভাবে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মতো দলগুলো এই টুর্নামেন্টে প্রাধান্য বিস্তার করে। সম্প্রতি উত্তর এবং মধ্য আমেরিকার দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করা হয়েছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি বলেন, ‘কোপা আমেরিকা সব সময়ই কঠিন প্রতিযোগিতা।।’ মেসি ছাড়াও কোপার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে কথা বলেছেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। অনেকের ভাষায়, ‘এই প্রতিযোগিতা লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, যা বিশ্বকাপের চেয়েও আলাদা।’ 

কোপা আমেরিকার ছোট দলগুলো প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার মতো দলের মুখোমুখি হয়। শারীরিক তীব্রতা এবং অপ্রত্যাশিত প্রকৃতি এটিকে একটি চ্যালেঞ্জিং টুর্নামেন্ট করে তোলে। ইউরোতে যেভাবে প্রতিটি ম্যাচ কঠিন হয়, কোপা আমেরিকাতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বাদে প্রতিটি ম্যাচই অপ্রত্যাশিত হতে পারে, যা খেলোয়াড়দের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

কোপা নিয়ে একটি সমালোচনা রয়েছে। আসরটিতে প্রায় সময়ই ফাইনালের একটি দল ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনার হয়ে থাকে। সেই দিক বিবেচনায় ইউরোতে বড় দেশগুলোর যে কেউ ফাইনালে উঠতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোপা আমেরিকায় সর্বোচ্চ ১৫টি শিরোপা রয়েছে আর্জেন্টিনা আর উরুগুয়ের। ব্রাজিলের ৯টি। তবু ইউরোর তুলনায় কোপাকে এগিয়ে রাখার প্রশ্নে উরুগুয়ের উদাহরণ টানা হয় কম! এটা খুব সম্ভবত বিশ্বব্যাপী ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ভক্ত আধিক্যের জন্য।

ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং শৈলীগত পার্থক্যগুলো প্রতিযোগিতাগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে। ইউরোপীয় ফুটবল তার কৌশলগত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ খেলার জন্য পরিচিত, যেখানে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল উদ্দীপনা এবং স্কিলের জন্য বিখ্যাত। এই পার্থক্যগুলো প্রতিটি টুর্নামেন্টকে অনন্য চ্যালেঞ্জ প্রদান করে এবং খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ধরনের খেলার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য করে। ইউরো প্রতিযোগিতা মূলত কৌশলগত লড়াই এবং শক্তিশালী দলের গভীরতার জন্য পরিচিত। অন্যদিকে কোপা আমেরিকা তার তীব্র শারীরিক ম্যাচ এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিখ্যাত। উভয়েই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রয়েছে শীর্ষ অবস্থানে। তাই বলা যায়, দুটি প্রতিযোগিতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা কঠিনতম বেছে নেওয়াটা আসলে নির্ভর করে ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর। নতুবা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে দুটি টুর্নামেন্টই প্রতিযোগিতামূলক এবং এ ট্রফি দুটি জেতা যে কোনো দলের জন্যই সম্মানজনক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫