ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গত ২২ এপ্রিল ফুটবল ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী লিমিটেডের মধ্যে খেলা চলাকালে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা বিশ্ব ফুটবলেও বিরল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিট খেলা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ১৫ মিনিট শুরু হওয়ার আগেই আলোকস্বল্পতার কারণে ম্যাচ স্থগিত করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এরপর বাফুফের লিগ কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ফুটবল আইনের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় সংযোজন করেছে। 

বাফুফে সিদ্ধান্ত নেয়, ম্যাচের বাকি ১৫ মিনিট হবে ৫ দিন পর, অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল। এই সিদ্ধান্তটি বেশ আলোড়ন তোলে। কারণ আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের (আইএফএবি) নিয়মাবলিতে এমন কোনো বিধান নেই, যেখানে অতিরিক্ত সময়ের একটি অংশ ভিন্ন দিনে সম্পন্ন করা যাবে। 

বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে ম্যাচ স্থগিত হওয়ার নজির থাকলেও বাংলাদেশের এই ঘটনার মতো বিশেষ কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে। ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডের স্টকপোর্ট কাউন্টি বনাম ডনকাস্টার রোভার্সের ম্যাচটি ২০৩ মিনিট চলার পর অন্ধকারের কারণে বন্ধ করা হয়েছিল। তবে সেখানে পরে আয়োজন করা হয় পুরো নতুন ম্যাচ। ১৯২২ সালে জার্মান চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হামবুর্গ ও নুরেমবার্গের ম্যাচটি ১৮৯ মিনিট চলার পর একই কারণে বন্ধ হয়েছিল এবং পরে পূর্ণ ম্যাচটি পুনরায় খেলা হয়। আধুনিক যুগে ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকায় আলোর অভাবে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। তবে যখনই এমন ঘটেছে, সেখানে পুরো ম্যাচই পুনরায় শুরু করার রীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

এই ঘটনাটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি বাংলাদেশের ফুটবল প্রশাসনের দুর্বল অবকাঠামোর চিত্রকেই ফুটিয়ে তুলেছে। একটি জাতীয় পর্যায়ের ফাইনাল ম্যাচের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকা এবং তা শেষ মুহূর্তে স্থগিত করতে বাধ্য হওয়া আমাদের ফুটবল ব্যবস্থাপনায় গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এটি শুধু একটি ম্যাচের ঘটনা নয়, বরং আমাদের সমগ্র ফুটবল ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। ২৯ এপ্রিল যখন মাঠে বাকি ১৫ মিনিট খেলা হয়, তখন শুধু একটি ট্রফির মীমাংসায় ছিল না, স্থাপিত হয় ফুটবল ইতিহাসে একটি অনন্য নজিরের।