
উত্থান-পতনের এক অপূর্ব মেলবন্ধনে গড়া যার জীবন। কখনো সাফল্য শিখরে কখনোবা ব্যর্থতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া যার অভ্যাস। প্রশংসায় ভেসেছেন দুয়োধ্বনি শুনেছেন ঢের। নন্দিত-নিন্দিত, বর্ণীল-ধূষর, বৈচিত্রময় এক মহাকাব্যের নাম ডিয়াগো ম্যারাডোনা।
আজ ৬১ বছরে পা দিলেন এ আর্জেন্টাইন ফুটবল গ্রেট। শুভ জন্মদিন ফুটবল ঈশ্বর ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। তবে এবারের জন্মদিন উদযাপনের তেমন ফুরসত নেই। কারণ, সেল্ফ আইসোলেশনে আছেন ম্যারাডোনা। তবে ৬০তম জন্মদিনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডান হাত দিয়ে গোল করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন জীবন্ত কিংদবন্তি।
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনআইরেসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম ডিয়াগো ম্যারাডোনা। ছোটবেলা থেকেই যার কাছে ফুটবল ঝিল জীবনদর্শনের নাম। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে জায়গা হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু, এই বয়সের জন্যই ৭৮ বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি। আলবিসেলেস্তে জার্সিতে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল তার মাহাত্ম্য বোঝায় না। ক্লাব ক্যারিয়ারে নাপোলিকে প্রথম আর শেষ বারের মতো দুবার লিগ শিরোপা উপহার কিংবা উয়েফা কাপ জেতানোও তার গরিমা বোঝাতে যথেষ্ট নয়। তবে কেনো তিনি সেরাদের সেরা, শতাব্দীর শ্রেষ্ট ফুটবলার?
১৯৮৬ বিশ্বকাপটা সব বিশ্বকাপ থেকে আলাদা, মহিমান্বিত শুধুই ম্যারাডোনা জন্য। একক নৈপুন্যে বিশ্বকাপ উপহার দেয়ার নজির ইতিহাসে মেলা ভার। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল হ্যান্ড অব গড নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। একই ম্যাচে গোল শতাব্দীর সেরা গোলের দেখা পান এ কিংবদন্তি।
১৯৯০ এও হট ফেভারিট আর্জেন্টিনা তার নেতৃত্বে ফাইনালে উঠেছিলো ঠিকই কিন্তু টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ এখনো পোড়ায় ম্যারাডোনাকে।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার হওয়া ফুটবলার তিনি। ইতালির বিপক্ষে একম্যাচেই রেকর্ড ২৩ সবমিলিয়ে ৫৩ বার অবৈধ ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু চাঁদের কলঙ্কের মতোই মাদকাশক্তি আর অনিয়ন্ত্রিত জীবন কালোদাগ হয়ে আছে এ ফুটবলারের ক্যারিয়ারে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ডোপ টেস্টে নিষিদ্ধ হওয়া। কোকেন, অ্যালকহল এ ফুটবল গ্রেটের নিত্যসঙ্গী। শেষ বিশ বছরে দু বার হ্যার্ট অ্যাটাক ছাড়াও হেপাটাইটিস, নিওমোনিয়ার মত রোগেও আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
ফুটবলার হিসেবে যতোটা সফল কোচ হিসেবে ততোটাই ব্যর্থ ম্যারাডোনা। সেরা প্রাপ্তি নিজ দেশের দায়িত্ব নেয়া। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার অধীনে কোয়ার্টার ফাইনালে থেমেছে আর্জেন্টিনার স্বপ্নযাত্রা।এছাড়াও ১৯৯৪ থেকে এখনো পর্যন্ত ৭ অখ্যাত ক্লাব সামলেছেন। সবশেষ আর্জেন্টিনার জিমনেশিয়া নামে প্রথম বিভাগের ক্লাবের দায়িত্বে ম্যারাডোনা।
ব্যতিক্রমী জীবনের মতোই এবারের জন্মদিনের ইচ্ছাটাও অদ্ভুতুড়ে ম্যারাডোনার। সঙ্গে প্রশংসা করেছেন মেসি-রোনালদোকে। ফুটবল গ্রেট বলেন, " ইংল্যন্ডের বিপক্ষে বা হাত দিয়ে গোল করেছিলাম। এবারের জন্মদিনে আমার চাওয়া যদি ডান হাত দিয়ে আরো একটা গোল করতে পারতাম। মেসি রোনালদোর পারফরম্যান্সের অর্ধেকও দেখাতে পারে না সমসাময়িক ফুটবলাররা।"
৬০তম জন্মদিন অনেকটাই নিভৃতে একাকী কাটছে ফুটবল ইশ্বরের। দেহরক্ষীর করোনার উপসর্গ দেখা দেয়ায় সেল্ফ আইসোলেশনে জীবন্ত কিংবদন্তি। তবে কোটি ফুটবল ভক্তের মনে, হাজারো ক্রীড়া সাংবাদিকের লেখনীতে অদৃশ্য উদযাপন ঠিকই চলছে বিশ্বজুড়ে।