Logo
×

Follow Us

ফুটবল

অবশেষে ‘জিতলেন’ আর্জেন্টিনার মেসি

Icon

খলিলুর রহমান

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২১, ১৩:৩৮

অবশেষে ‘জিতলেন’ আর্জেন্টিনার মেসি

আমেরিকার শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা

ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। সংখ্যার বিচারে এটি একটি শিরোপাই মাত্র; কিন্তু আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসির জন্য এটি কি শুধুই একটি শিরোপা? মোটেই না। ব্রাজিলের মাটিতে জেতা এই শিরোপা আর্জেন্টাইনদের দীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষার ফসল। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এই ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকৃট আর্জেন্টিনা সর্বশেষ মাথায় তুলেছিল সেই ১৯৯৩ সালে। এরপর থেকেই কোপার আরেকটি শিরোপা জেতার অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু আর্জেন্টাইনদের।

বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা মিলে একের পর এক টুর্নামেন্ট এসেছে, বিশ্বজুড়ে মেসি ভক্তরা আশায় বুক বেঁধেছেন মেসিকে ঘিরে। আশায় বুক বেঁধেছেন মেসি নিজেও। তিনি নিজেও খুব করে চাইছিলেন, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে একটা কিছু জেতার। দেশবাসীকে শিরোপা আনন্দে ভাসানোর; কিন্তু প্রতিবারই সেসব সাজানো-গোছানো স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়েছে! মেসি দেশের হয়ে শিরোপা জিততে পারেননি। তিন তিন বার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ হয়েছেন (২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে)। একবার দেশকে তুলেছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনালেও; কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালেও সেই স্বপ্নভঙ্গের গল্প।

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ চিলির কাছে হার। টানা তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারের ধাক্কায় বিশ্বসেরা মেসি যেন আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে পড়েন। তাই তো, ১৬ সালের কোপার ফাইনালে চিলির কাছে টানা দ্বিতীয় বারের মতো হারের পরপরই জাতীয় দল থেকে আচমকা অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন। তখন তার বয়স মাত্র ২৯! দেশবাসী এবং বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধে হঠাৎ নেওয়া সেই অবসর সিদ্ধান্ত থেকে অবশ্য দ্রুতই সরে আসেন মেসি।

কিন্তু যে আশায় ফিরে আসা, সেই স্বপ্ন আবারও ভেঙে খানখান। ২০১৮ বিশ্বকাপ এবং ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকা থেকে আবারও ব্যর্থ মনোরথ নিয়েই ফিরতে হয়ে মেসিকে। তবে এবার দমে যাননি। হাসালেন আর্জেন্টিনাকে। নিজের আজন্ম স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি মেসি জবাব দিয়েছেন নিন্দুকদেরও। এই শিরোপার মধ্য দিয়ে পেলে-ম্যারাডোনার সঙ্গে সর্বকালের সেরার দাবিতেও নিজের অবস্থানটা আরও শক্ত করলেন মেসি।

শুধু কোপার এই শিরোপা নয়, এর আগে ২০০৮ সালে যে অলিম্পিক সোনা জিতেছিলেন মেসি, সেই জয়টিও ছিল এই ডি মারিয়ার সুবাদেই। সেবারও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলের জয় উপহার দিয়েছিলেন ডি মারিয়া। মানেটা স্পষ্ট, দেশের হয়ে মেসির জেতা দুটি শিরোপাই ডি মারিয়ার উপহার। এবারের কোপায় ফাইনালের নায়ক ডি মারিয়া হলেও, মূল নায়ক মেসিই। স্বপ্ন পূরণের নেশায় এবার যেন আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিলেন মেসি। প্রতিটা ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরেছেন সেরারূপে। শুধু ফাইনালেই জ্বলতে পারেননি। তবে মারাকানার ফাইনালে তার সেই ঘামতি দূর করে দিয়েছেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে খেলা বন্ধু ডি মারিয়া। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও গেছে ডি মারিয়ার পকেটেই। তবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সোনার বল, সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার সোনার বুট এবং সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করার পুরস্কার-তিনটিই পেয়েছেন মেসি। 

২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের এই মারাকানা স্টেডিয়ামেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়েছিল মেসির। এবার যেন সেই হতাশার গ্লানি মুছে দেওয়ার পণ করেই ব্রাজিলে গিয়েছিলেন তিনি। সারাজীবনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় মেসি কতটা উচ্ছ্বসিত ছিলেন, সেটি ফাইনাল শেষে মাঠেই দেখা গেছে। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে সে কি উল্লাস তার! তবে মেসির আবেগের প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে আর্জেন্টিনায় পৌঁছানোর পর। বুয়েনস এইরেস বিমানবন্দরে নামার পর স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ও তিন ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ৬ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। 

অনেক আরাধ্য এই শিরোপাটা উৎসর্গ করেছেন তার পরিবার, সতীর্থ, দেশবাসী এবং প্রয়াত গুরু ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। কোপার স্বপ্ন তো পূরণ হলো। এবার নিশ্চয়ই মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণের পালা!

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫