Logo
×

Follow Us

ফুটবল

আত্মঘাতী গোল সমাচার

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৪৭

আত্মঘাতী গোল সমাচার

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আত্মঘাতী গোল করে নিজেদের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন প্যারাগুয়ের ডিফেন্ডার কার্লোস্লভার্তো গামারা, ২০০৬ বিশ্বকাপে। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বল নিজেদের জালেই জড়িয়ে দেওয়া, যা ‘আত্মঘাতী গোল’ বলে পরিচিত। প্রতিপক্ষের কাছে গোল হজম করার চেয়েও এই আত্মঘাতী গোল বেশি কষ্টের ও হতাশার। নিজেদের জন্য নিজেরাই কুয়ো খোদার কষ্টটা তো বেশি হবেই।

আর সেই কষ্টের কাণ্ড যদি ঘটে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপ মঞ্চে, তখন কষ্টের সীমা-পরিসীমা থাকে না। ফুটবলাররা তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকেন আত্মঘাতী গোল করে খলনায়ক না হতে; কিন্তু তার পরও ফুটবলাররা ‘আত্মঘাতী গোল’ এড়াতে পারেন না। বিশ্বকাপেও প্রায় নিয়মিতই হয়ে চলেছে আত্মঘাতী গোল।

বিশ্বকাপের বিগত ২১ আসরে ৫২টি আত্মঘাতী গোল সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। হ্যাঁ, পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৫২টি আত্মঘাতী গোল হয়েছে।

এই ৫২টি আত্মঘাতী গোলের শিকার ৫২ জন ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড়। মানে বিশ্বকাপে কোনো খেলোয়াড়কে দুবার আত্মঘাতী গোলের কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই ‘আত্মঘাতী গোল’-এর যাত্রা শুরু। সর্বশেষ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। ছিল কি, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে বরং ‘আত্মঘাতী গোল’ প্রসার লাভ করেছে।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে সুইডেনের বিপক্ষে মেক্সিকোর ডিফেন্ডার এডসন আলভারেজ দলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে বল নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে দেন।

সর্বশেষ এই বিশ্বকাপেই যে আত্মঘাতী গোল হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ১২টি! সব মিলে বিশ্বকাপের ২১ আসরে আত্মঘাতী গোল ৫২টি। এর মধ্যে ১২টিই  এক আসরে। রাশিয়া বিশ্বকাপেকে অনায়াসে ‘আত্মঘাতী গোল’-এর বিশ্বকাপও বলা যায়!

প্রথম বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল হয়েছিল ১টি। যেটি করেছিলেন মেক্সিকোর ম্যানুয়েল রোসাস। ১৯৩০ সালের ১৬ জুলাই চিলির বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে। ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে বসেন তিনি! সেই শুরু। বিশ্বকাপে ম্যানুয়েল রোসাস যে আত্মঘাতী গোলের যাত্রাটা শুরু করেছিলেন, তার সর্বশেষ শিকার মারিও মানজুকিচ। বিশ্বকাপে সর্বশেষ আত্মঘাতী গোলটি করেছেন ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ড, ফ্রান্সের বিপক্ষে ২০১৮ আসরের ফাইনালে।

শুধু মানজুকিচ নন, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে তার মতো আরও ১১ জন আত্মঘাতী গোলের কষ্টে ভুগেছেন এবং দেশকে ভুগিয়েছেন। 

আত্মঘাতী গোল সংখ্যায় ২০১৮ বিশ্বকাপের পরের আসনেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি আত্মঘাতী গোল হয়েছে ফ্রান্সের এই বিশ্বকাপে। ২০১৪ আসরে হয়েছে ৫টি। ১৯৫৪ ও ২০০৬ আসরে হয়েছে ৪টি করে আত্মঘাতী গোল। ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে হয় ৩টি করে।

২টি করে আত্মঘাতী গোল হয়েছে ১৯৩৮, ১৯৬৬, ১৯৮৬ ও ২০১০ আসরে। ১৯৩০, ১৯৭০, ১৯৮২ ও ১৯৯৪ আসরে হয়েছে ১টি করে আত্মঘাতী গোল। বাকি ৫ আসর- ১৯৩৪, ১৯৫০, ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৯০-তে কোনো আত্মঘাতী গোল হয়নি।

বিগত ২১ আসরের মধ্যে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপটি শুরুই হয় আত্মঘাতী গোল দিয়ে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ১২ মিনিটে হয় প্রথম গোল। যেটি ছিল আত্মঘাতী গোল। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই জড়িয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলো।

বিশ্বকাপে সেটাই ছিল কোনো ব্রাজিলিয়ানের প্রথম আত্মঘাতী গোল। পরে গত ২০১৮ আসরে মার্সেলোর সঙ্গী হয়েছেন ফারনানদিনহো। শুধু ব্রাজিল নয়, বিশ্বকাপে প্রায় সব বড় দলই আত্মঘাতী গোলের শিকার হয়েছে। বিশ্বকাপজয়ী দলগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু ফ্রান্স। দুবারের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স বিশ্বকাপে কখনো আত্মঘাতী গোল হজম করেনি। 

তবে নিজেরা না করলেও তারা আত্মঘাতী গোলের ফায়দা লুটেছে সর্বোচ্চ ৬ বার। মানে বিশ্বকাপে ফরাসিরা আত্মঘাতী গোল পেয়েছে সর্বোচ্চ ৬টি। আর কোনো দল এত আত্মঘাতী গোল পায়নি। এই ৬টির মধ্যে দুটি আসরে (২০১৪ ও ২০১৮) দুটি করে আত্মঘাতী গোলের ফায়দা লুটেছে ফ্রান্স।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২০১৪ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দিচ্ছেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্সেলো।

নিজেরা আত্মঘাতী গোল না করে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা দল এই ফ্রান্স। ৬৬টি ম্যাচ খেলে একটিও আত্মঘাতী গোল করেনি তারা। ফরাসিদের ঠিক বিপরীত মেরুতে অবস্থান মেক্সিকোর। তারা সর্বোচ্চ ৪টি আত্মঘাতী গোলের শিকার হয়েছে; কিন্তু নিজেদের পক্ষে ‘আত্মঘাতী গোল’ পায়নি একটিও।

বিশ্বকাপের ফাইনালে এ পর্যন্ত মাত্র একটিই আত্মঘাতী গোল হয়েছে। ২০১৮ আসরে যেটি গেছে চ্যাম্পিয়ন ফরাসিদের পক্ষে। একে অন্যের বিপক্ষে আত্মঘাতী গোল খাওয়া এবং পাওয়া একমাত্র যুগলবন্দি জুটি পর্তুগাল ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০০২ আসরে একই ম্যাচে দুই দলই আত্মঘাতী গোলের শিকার হয়েছিল।

বিশ্বকাপের একই ম্যাচে দুই দলের আত্মঘাতী গোল করার একমাত্র নজির সেটিই। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দুবার আত্মঘাতী গোলের শিকার হওয়া একমাত্র দল যুগোস্লাভিয়া (বর্তমান নাম সার্বিয়া)। পশ্চিম জার্মানি তথা জার্মানির বিপক্ষে দুবার (১৯৫৪ ও ১৯৯৮) আত্মঘাতী গোলের শিকার হয়েছে তারা। আত্মঘাতী গোল খায়ওনি, পায়ওনি, এমন দলগুলোর মধ্যে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে ক্যামেরুন, ২৩টি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫