
ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মরক্কোর খেলোয়াড়দের বিজয় উদযাপন। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগন নানারকম কষ্ট আর দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে ইসরায়েলি বাহিনীর জুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতনের মাত্রা। কিন্তু সেভাবে মুসলিম বিশ্ব প্রায়শই ঘটে যাওয়া এসকল ঘটনায় নিশ্চুপ থাকে, তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে মরক্কো বরাবরই সোচ্চার থাকে মানবতার মুক্তির জন্য। তাই এবারের বিশ্বকাপে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটিয়েছে আফ্রিকার দেশটি। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মরক্কোর বিজয় উদযাপন যেন দৃষ্টি কেড়েছে সর্বমহলের।
মূলত প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই এমনটি করা হচ্ছে। চলমান কাতার বিশ্বকাপে ফিলিস্তিন না থেকেও যেন আছে। গতকাল মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) শেষ ষোলোর ম্যাচে মাঠে ফের উড়েছে নিপীড়িত দেশটির পতাকা।
স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় পেয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা মাঠে উড়ান মরক্কোর খেলোয়াড়রা। গতকাল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে দেয় মরক্কো। এতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে দলটি। এটি বিশ্বকাপে মরক্কোর এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্জন।
ঐতিহাসিক বিজয়কে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর উপলক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন মরক্কোর খেলোয়াড়রা। ম্যাচ শেষে বিজয়ী খেলোয়াড়রা মাঠে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেন।
চলতি বিশ্বকাপে মরক্কোর এমন কাজ এই প্রথম নয়। এর আগে গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে উদযাপন করে মরক্কো।
যদিও বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জন্য ফিলিস্তিনকে কয়েক দশক ধরে সমর্থন দিয়ে আসছে কাতার। দেশটিতে প্রায় আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন।
তবে ফিফার আইনে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যানার, পতাকা বা আপত্তিকর অথবা বৈষম্যমূলক প্রকৃতির কোনো কিছু মাঠে প্রদর্শন নিষিদ্ধ। ফলে এর আগে ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শনের জন্য মরক্কোর বিরুদ্ধে জরিমানা জারি করে ফিফা। এবারও জরিমানা গুনতে হতে পারে আশরাফ হাকিমিদের।
তবে এসব জরিমানার বিষয়ে মোটেও চিন্তিত নয় দেশটি। ফিলিস্তিনের জন্য পুরো মুসলিম বিশ্বই যেন এক হয়ে লড়াই করছে। পশ্চিমা বিশ্বের কষাঘাতে দিনকে দিন পিষ্ট হচ্ছে স্বাধীন ফিলিস্তিন দেশ গঠনের সম্ভাবনা।
ফুটবল বিশ্বকাপকে ধরা হয় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অফ দ্য আর্থ’ হিসেবে। আর সেখানে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে জয় উদযাপন করে বিশ্বকে আবারো একটি বার্তা দিলো মরক্কোর খেলোয়াড়েরা যে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চাই।
স্পেনের সাথে মরক্কোর দ্বন্ধটাও বেশ পুরনো। দুই দেশকে পৃথক করেছে জিব্রাল্টার প্রণালী। এছাড়া পেরেজিল দ্বীপ নিয়েও দ্বন্ধ আছে তাদের মধ্যে।
তাই আফ্রিকান দেশ মরক্কোর জন্য এই ম্যাচটি ছিল নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার লড়াই। বিশ্বকাপে শেষবারের মুখোমুখিতে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ড্র হয়েছিল স্পেন-মরক্কো ম্যাচটি।
আলোচিত এই ম্যাচটিও নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষে ড্রতেই শেষ হয়। টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ালে সেখানে মরক্কোর গোলরক্ষক বৌনর দৃঢ়তা ম্যাচ জিতে আফ্রিকান সিংহরা।
জয়ের পর ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে জয় উদযাপন করেন খেলোয়াড়রা। এর আগেও মরক্কোর খেলোয়াড় হাকিমি ও জিয়েচ নিজ ক্লাবের হয়ে ট্রফি জয়ের পর ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে উদযাপন করেছিল। এবার দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা ঘটলো।