
লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত
ক্লাব ফুটবল থেকে জাতীয় দল সবখানেই যেন অনন্য এক নাম লিওনেল মেসি। নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে ফুটবল নাম খেলায়। ক্যারিয়ারে অনেক কিছু পেলেও বাকি রয়েছে একটি বিশ্বকাপের। যেখানে আজ রাতে দায়শোধের পালা। সেটি কি করবে ফুটবল, না কি করতে পারবে? কারণ মেসি শিরোপা জিতলে যে জিতে যাবে ফুটবল, এটা বোধকরি তার শত্রুও বিশ্বাস করেন। সে কারণে চিরশত্রু ব্রাজিলের সাবেক খেলোয়াড়রাও একেবারে মন খুলে চাইছেন শিরোপা জিতুক আর্জেন্টিনা। কারণ আর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই মেসির।
যেভাবেই হোক না কেন আজকের ফাইনালটা যে মেসির শেষ সেটা নিজেও পরিস্কার করেছেন এলএম টেন। সে কারণেই কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর দাবি, জাদুকর, সোনালি ট্রফিটা যে তোমায় একটু ছুঁতে চায়! অনেকেরই প্রত্যাশা লিওনেল মেসিকে যদি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারতাম! মেসি যদি একবার গায়ে হাতটা বুলিয়ে দিতেন! বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার কোটি কোটি ভক্তের কাছে এ এক পরম স্বপ্ন, জনম জনমের আকাঙ্ক্ষা। মেসির হাতের ছোঁয়া পাওয়ার তেমন আকুতি কি নেই বিশ্বকাপ ট্রফিটারও! একটা কথা প্রচলিত রয়েছে, মেসি বিশ্বকাপ না জিতলে সেটা মেসির ব্যর্থতা হবে না, ব্যর্থতা হবে বিশ্বকাপ ট্রফিটারই।
অনেক মত আর পক্ষের মধ্যে কথাটা কতটুকু ঠিক কিংবা ভুল, সেই তর্ক পরের। লিওনেল মেসি যে ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন, সেটি নিয়ে তর্ক করবেন না ফুটবল বুঝনেওয়ালা কোনো মানুষ। মেসিকে বাদ দিয়ে কি ফুটবলের ইতিহাস লেখা সম্ভব? স্বপ্নময় ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছুই জেতা হয়ে গেছে বাঁ পায়ের জাদুকরের। প্রাপ্তির খাতায় কেবল একটি ট্রফিই বাকি-বিশ্বকাপ। সেটি জিতলেই ক্যারিয়ারটা পূর্ণতা পাবে এই ফুটবল মহারথীর। না জিতেও তো কিংবদন্তি তিনি হয়ে গেছেন অনেক আগেই। মেসি চাইলে স্পেনের হয়ে খেলতে পারতেন, তার নামের পাশে হয়তো তখন একটি বা দুটি বিশ্বকাপ লেখা থাকতো অনায়াসেই।
কিন্তু এই মেসি যেমন বিশ্ব ফুটবলের রত্ন, আসলে সবচেয়ে বড় রত্ন তো তিনি আর্জেন্টিনার। নিজের দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নটাই তাই মেসি লালন করে গেছেন গত এক-দেড় দশক ধরে। ২০১৪ সালে স্বপ্নপূরণের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। ১২০ মিনিটের প্রাণপন লড়াইয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলেন খুদে জাদুকর। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা যেন তাকে আরেকটু অপেক্ষা করাতে চাইলেন। অতিরিক্ত সময়ের আচমকা এক গোলে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ভাঙলেন জার্মানির গোৎজে।
তাইতো তাকে পেলে এখনো অনেকে খুন করতে চাইবেন? সেই ফাইনালে হারের পর কাঁদলেন লিওনেল মেসি, কাঁদলেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার অগণিত ফুটবল ভক্ত। এরপর কেটে গেছে আটটি বছর। মেসি জানেন, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা কেমন। আর্জেন্টিনাকে ২৮ বছর পর কোপা আমেরিকার ট্রফি জিতিয়েছেন এর মধ্যে, জিতিয়েছেন ফাইনালিসিমার শিরোপাও। যেই মেসির হাত ধরে ট্রফি জিততে না পারার এত বছরের আক্ষেপ ঘুচতে পেরেছে, যেই মেসি আর্জেন্টিনাকে একা কাঁধে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছেন। সেই মেসি বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে শেষ আক্ষেপটাও ঘুচাবেন, এমন আশা করতেই পারেন সমর্থকরা।
কারণ ৩৫ বসন্ত পেরিয়ে আসা মেসি যে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন, এবারের বিশ্বকাপটাই হবে তার শেষ। এবার আর স্বপ্নভঙ্গের কান্না নয়, আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ুক মেসির দুই গাল বেয়ে। সোনালি ট্রফিটায় চুমু খেয়ে মেসি বলুন-সর্বকালের সেরা নিয়ে আর কোনো বিতর্ক রইলো কি! কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী মনেপ্রাণে চাইছেন তেমনটাই। সবচেয়ে বড় কথা আজ রাতেই ফুটবল তার দায়শোধ করার সবচেয়ে বড় সুযোগ পাচ্ছে।