
ফুটবল মাঠে ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন একজন শিল্পী। দুর্দান্ত গতি আর বাঁ পায়ের অসামান্য নৈপুণ্যে ফুটবলপ্রেমীদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জাদুকরি মুহূর্ত। প্রায় একক নৈপুণ্যে দেশকে এনে দিয়েছেন ৮৬’র বিশ্বকাপ শিরোপা। পরের আসরেও নিয়ে গেছেন ফাইনালে।
ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত দুটি গোল- ‘হ্যান্ড অব গড’ এবং ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। বিস্ময়ের ব্যাপার দুটি গোলই হয়েছিল একই ম্যাচে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে!
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ‘চিরশত্রু’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক গোল দুটি করেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন ফুটবল জাদুকর। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পা থেকে আসা উঁচু বলের দখল নিতে একইসঙ্গে আকাশে ওড়েন ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটন ও ম্যারাডোনা। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা শিলটনের চেয়ে ৮ ইঞ্চি খাটো হলেও ম্যারাডোনা পান বলের নাগাল। বাঁ হাত বাড়িয়ে হেডের ভঙ্গিমায় খুঁজে নেন জাল। ফাঁকি দেন রেফারির চোখ।
এই গোলটি হতে পারতো ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত গোল। কিন্তু এর চার মিনিটের মাথায় ম্যারাডোনা যে অবিশ্বাস্য গোল করেন, তাতে সব মিলিয়ে পুরো গল্পটাই হয়ে ওঠে ফুটবলীয়-পুরাণের অংশ। মাঝমাঠের আগে প্রায় নিজেদের প্রান্ত থেকেই ছয় ইংলিশ ফুটবলারকে পায়ের কারুকাজে বোকা বানিয়ে একাই বল টেনে নিয়ে গিয়ে করেন ম্যাচের এবং নিজের দ্বিতীয় গোল।
ম্যারাডোনার সেরা পাঁচ গোলের মধ্যে এর পরই আসে ৮৬ বিশ্বকাপেই বেলজিয়ামের বিপক্ষে করা গোলটি। সেমিফাইনালের ৫১তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেয়ার পর ৬৩ মিনিটে দুর্বল ডান পায়ে করেন অবিশ্বাস্য সেই গোলটি। ভেঙে দেন বেলজিয়ামের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।
বিশ্বকাপের আগের বছর ১৯৮৫ সালে ঘরের মাঠে জুভেন্টাসের বিপক্ষে ফ্রি কিকে করেন দুর্দান্ত আরেক গোল। মাত্র এক পা এগিয়ে নিখুঁত গতিময় শটের গোলে তখনকার ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে নাপোলিকে জয় এনে দেন মারাদোনা।
শটের গতি আর নিখুঁত লক্ষ্যের আরেকটি উদাহরণ ডিয়েগো ম্যারাডোনা তৈরি করেন ১৯৮৫ সালে। ভেরোনার বিপক্ষে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চোখের পলকে ঘুরে দারুণ ভলিতে জালে বল পাঠান নাপোলির এই প্লে মেকার।
বুধবার রাতে এই কিংবদন্তি জীবনের মাঠ থেকে চির বিদায় নিলেও সমর্থকদের মনে আজীবন থেকে যাবেন ফুটবলের চিরসবুজ তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে।