যশোরের শামস উল হুদা ফুটবল একাডেমি হয়ে উঠছে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরির আঁতুড়ঘর। এই একাডেমীর ফুটবলাররা নজর কাড়ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্লাবের। সম্প্রতি একাডেমীর তরুণ ফুটবলার মিনহাজুল করিম স্বাধীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দল এথলেটিকো ভিলা স্যান কার্লোস ক্লাব।
শামস উল হুদা ফুটবল একাডেমী সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বাধীনকে স্যান কার্লোস ক্লাবের সাথে অনুশীলনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পত্রাকারে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে স্বাধীনকে যোগ দিতে হবে আর্জেন্টাইন ক্লাবে।
স্যান কার্লোস ক্লাবের সাথে স্বাধীনের যোগাযোগ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ট্রেইনার অ্যারিয়েল কোলম্যানের মাধ্যমে। তিনি একজন আর্জেন্টাইন। কোলম্যান শামস উল হুদা একাডেমী পরিদর্শনে এসেছিলেন। স্বাধীনের খেলা দেখে মুগ্ধ হন তিনি। তার উদ্যোগে পাঠানো স্বাধীনের ভিডিও নজর কাড়ে স্যান কার্লোস ক্লাব কর্মকর্তাদের।
শামস উল হুদা একাডেমী থেকে ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন হাফিজুর রহমান। ২০২২ সালে ব্রাজিলের সোসিয়েদাদ স্পোর্তিভো দ্য গামা ক্লাবের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পান যশোরের বাঘারপাড়ার নয়ন হোসেন। তিনিও শামসুল হুদা একাডেমীর পরিচর্যায় গড়ে ওঠা ফুটবলার।
স্বাধীন বয়সভিত্তিক ফুটবলের পরিচিত মুখ। খেলেছেন ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের যুব দল নিয়ে অনুষ্ঠিত বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৮ লিগে চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে। আগামী মৌসুমে শেখ জামালের মূল দলে শামস উল হুদা একাডেমীর পাঁচজন ফুটবলারের নিবন্ধন হওয়ার কথা। তাদের একজন স্বাধীন। তিনি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে খেলেছেন ২০২১ সালে। সেখানে ছয় গোলের সাথে আট এসিস্ট করে সবার নজর কাড়েন।
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ ক্লাব ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র লিমিটেড। সেই আসরে আবাহনীর হয়ে খেলেছিলেন শামস উল হুদা একাডেমীর নয়জন ফুটবলার, যাদের একজন স্বাধীন। বলা যায়, আবাহনীর জার্সিতে যুব ক্লাব ফুটবলের শিরোপা জিতেছিল যশোরের শামস উল হুদা ফুটবল একাডেমী।
স্বাধীন ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ সুপার মখ কাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। ছিলেন ২০১৭ সালের নেপালের মাটিতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ দলের অংশ। খেলেছেন ২০১৮ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আসরে।
আর্জেন্টিনার ক্লাব থেকে ডাক পাওয়া স্বাধীন স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত। তিনি বলছেন, আমার কাছে পুরো বিষয়টা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমি নিজে ছোটবেলা থেকে আর্জেন্টিনা আর লিওনেল মেসির ভক্ত। আর্জেন্টিনায় আমি ফুটবল অনুশীলন করতে যাব, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। একাডেমী কর্তৃপক্ষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
স্বাধীনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ফজলুল করিম নিজেও ফুটবল খেলেছেন সেনাবাহিনী দলের হয়ে। বাবার উৎসাহে তিনি বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সাথে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শামস উল হুদা একাডেমীর কর্মকর্তা আর কোচ কাজী মারুফের প্রতি।
২০১১ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে যশোরের শামস উল হুদা ফুটবল একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মোঃ নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। শুরু থেকেই এর সাথে যুক্ত আছেন কাজী মারুফ। তিনিই একাডেমীর ফুটবলার তৈরির প্রধান কারিগর, হেড কোচ।
আর্জেন্টিনায় সুযোগ পাওয়া স্বাধীন প্রসঙ্গে কাজী মারুফ জানালেন, স্বাধীন কয়েক বছর ধরেই বয়সভিত্তিক ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে আসছে। তিনি তুখোড় উইঙ্গার। একদিন বাংলাদেশের সেরা উইঙ্গার হওয়ার সম্ভাবনা তার মধ্যে রয়েছে।
একাডেমীর ছাত্রদের প্রিয় ওস্তাদ কাজী মারুফ বলেন, আমার ছাত্র হাফিজুর এয়ারটেল রাইজিং স্টার হিসেবে ইংল্যান্ডে আর নয়ন ব্রাজিলে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রথম ফুটবলার হিসেবে আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তাহলে তিনি বড় খেলোয়াড় হবেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের আর্জেন্টিনার প্রতি উন্মাদনা নজর কাড়ে বিশ্ব গণমাধ্যমের। আর্জেন্টিনার ফুটবলের কর্তাব্যক্তিরাও হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতি আগ্রহী। ইতোমধ্যে ফুটবলের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ সরকার। যে চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উঠতি ফুটবলারদের সুযোগ দেওয়া হবে আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার। আর ভাগ্যবান হিসেবে প্রথম সুযোগটি পাচ্ছেন শামস উল হুদা ফুটবল একাডেমীর মিনহাজুল করিম স্বাধীন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh