আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম
আগামী ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচনে অংশ নেবেন না সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০০৮ সাল থেকে বাফুফের সর্বোচ্চ পদে থাকা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।
সালাউদ্দিন পদত্যাগ করেননি। ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তাতে ফুটবলপ্রেমীদের মনে ফিরেছে স্বস্তি। সালাউদ্দিন পরবর্তী বাফুফে সভাপতি হিসেবে এরইমধ্যে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন তরফদার মো. রুহুল আমিন। সাইফ পাওয়ার টেকের কর্ণধার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তরফদার রুহুল আমিন একজন দক্ষ ফুটবল সংগঠক হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম আবাহনীর চেয়ারম্যান ছিলেন। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব তার নিজের গড়ে তোলা দল। দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে। ক্লাব পর্যায়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আলোচিত ছিলেন।
২০২০ সালে বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সালাউদ্দিনের কূটকৌশল আর সরকারি নানা সংস্থার হুমকিতে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।
এদিকে বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়ালের নামও শোনা যাচ্ছে পরবর্তী সভাপতি হিসেবে। কেউ কেউ বলছেন বর্তমান সহ-সভাপতি এবং পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের নাম। তবে এখনও যেহেতু প্যানেল ঘোষণা হয়নি, কিছুই নিশ্চিত না। তাই রয়ে যাচ্ছে আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা।
২০০৮ সালে অবসরপ্রাপ্ত মেজর আমিন আহমেদ চৌধুরীকে হারিয়ে সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন। এটা সত্যি, সালাউদ্দিনের সময়ে দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা নিরবচ্ছিন্ন মাঠে থেকেছে। কিন্তু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস লিগ, তৃতীয় বিভাগ কিংবা পাইওনিয়ার লিগ নিয়মিত আয়োজন করা হয়নি। এমনকি জেলা লিগ কমিটিগুলো প্রয়োজন মনে করেনি স্থানীয় লিগ আয়োজনের। তাতে খেলোয়াড়দের পাইপলাইন বন্ধ থেকেছে। দেশে এখন মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের তীব্র সংকট।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের ফিফা র্যাংকিং ছিল ১৫১। কিন্তু সালাউদ্দিনের শাসনামলে র্যাংকিং নামে ১৯৭-এ! বর্তমানে র্যাংকিং ১৮৪। অথচ সালাউদ্দিন ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছিলেন, বাংলাদেশ ২০২২ সালের বিশ্বকাপ খেলবে! পরবর্তী সময় জানান, বাংলাদেশকে ফিফা র্যাংকিংয়ের ১৫০তম অবস্থানে নিয়ে আসবেন। মূলত সালাউদ্দিন ‘স্টান্টবাজি’ করে লোক হাসিয়েছেন। কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে পারেননি।
সালাউদ্দিনের ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ কখনও সাফ ফুটবলের ফাইনালে খেলেনি। বয়সভিত্তিক দল আর নারী দলের সাফল্যে নিজের মুখরক্ষা করেছেন। অথচ সাফজয়ী জাতীয় দলের নারী ফুটবলাররাও সালাউদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। সালাউদ্দিন জাতীয় দলের জন্য বিদেশি কোচ, বিদেশের মাটিতে অনুশীলন ক্যাম্প আয়োজন করে চমক দেখিয়েছেন। আবার তার সময়েই বারবার কোচ বদলের ঘটনা ঘটেছে। বিগত ১৫ বছরে জাতীয় দলের কোচ পরিবর্তন হয়েছে ২৩ বার!
সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে ফুটবল উন্নয়নে ফিফার বরাদ্দের ২০ কোটি টাকা খরচের সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত শেষে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। বড় অঙ্কের জরিমানা দেন সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী। এ ছাড়া সিলেট বিকেএসপিতে একাডেমির জন্য ৭ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছিল ফিফা। বাফুফের সেই প্রজেক্ট চলেছিল মাত্র কয়েক মাস। অথচ কোনো অডিট রিপোর্টেই একাডেমি পরিচালনার জন্য ফিফার দেওয়া সাত লাখ ডলারের কথা উল্লেখ করা হয়নি। সব মিলিয়ে বাফুফে সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন থেকেছেন সমালোচনার শীর্ষে।
যা-ই হোক, বাংলাদেশের ফুটবলে সালাউদ্দিন যুগের অবসান হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব আসছে। প্রত্যাশা একটাই, নেতৃত্বে যে বা যারাই আসুন; তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবেন তারা। শক্তিশালী করবেন পেশাদার আর জেলা ফুটবল লিগের কাঠামো। মাঠে ফিরবে দর্শকরা। অন্তত সাফ অঞ্চলে পুনরুদ্ধার হবে বাংলাদেশের ফুটবলের সম্মান।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh