যুদ্ধ-স্যাংশন কল্যাণ বয়ে আনে না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১১

গণভবনে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ছবি: বিটিভি
যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ এবং স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন বিশ্বের কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এগুলো বন্ধ করার জন্য আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’
আজ শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ যান এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন। মিউনিখে অবস্থানকালে তিনি সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার এই সফরকে সফল বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তিনি বিশ্ব নেতাদেরকে বলেছেন, আকার নয়, একটি দেশের নীতির শক্তিই হচ্ছে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তির পথ। এছাড়া বন্ধুপ্রতীম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে এই সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের প্যানেলে তিনি অবিলম্বে গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সব ধরনের শত্রুতা, অবৈধ দখলদারিত্ব ও নিরস্ত্র মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর অমানবিক হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও প্রভাব ফেলে।’
এ প্রসঙ্গে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও বাস্তবায়নের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘মানবতার অস্তিত্বের সংকটের মধ্যে আমি এই কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছি যে, ক্ষুদ্র স্বার্থ কেবল দুর্দশা নিয়ে আসে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে তিনি বিশ্ব নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বহুমুখী নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগণের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি, প্রতিশ্রুত তহবিলের প্রকৃত স্থানান্তর এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছি।’
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
আলোচনার সময় রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে পারস্পরিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন নীতি ও অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গের (অ্যাক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ) সঙ্গে বৈঠকে তিনি মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তিতে অবদানের আলোকে চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত ছাড়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
উচ্চ-মধ্যম আয় ও উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত পথেও বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং গম, ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য খাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতার জন্য তাদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত দ্রুত সমাধানের কার্যকর উপায় খুঁজে বের করার জন্য আমি তাকে আহ্বান জানিয়েছি। আমরা গাজা উপত্যকার সংঘাত নিয়েও আলোচনা করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম ও বেগম মতিয়া চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী উপস্থিত আছেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের পর শেখ হাসিনার এটিই প্রথম সংবাদ সম্মেলন।