বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় রাজধানীর কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। সেসময় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জানায়, স্টেশন দুটি মেরামত করতে মোট প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। এছাড়া এগুলো চালু করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগার কথাও বলা হয়েছিল। 

অথচ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই দুটি স্টেশন চালু করতে খরচ হলো এক কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিগত সরকারের সময় দেওয়া হিসাব ধরলে মেরামতে কম লেগেছে প্রায় ৩৪৮ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা! 

বিপুল অংকের এই পার্থক্যের পর শেখ হাসিনা সরকারের সময়কার ‘দুর্নীতি’ প্রবণতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়া এক বছরের জায়গায় তিন মাসের আগেই এই স্টেশন দুটি চালু করতে পারায় বিগত সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

সংস্কারের পর আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) খুলে দেওয়া হয় মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন। এদিন সেখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের সব স্টেশন মিলিয়ে আরও খরচ লাগবে ১৭ কোটি টাকা। মোট লাগবে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে খরচের এই টাকা মেট্রো থেকেই নেওয়া হবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোর রিভাইস হবে। সব বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। আগামীর প্রকল্প সময়ের আগেই শেষ করতে হবে। সময় বেশি নেওয়া যাবে না। অপচয় রোধ করে করতে হবে।’

মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নানা অজুহাতে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচের টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পে দুর্নীতি নাকি অপচয়, সেটি চিহ্নিত করতে হবে।’ 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। এরপরই দীর্ঘ সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৫ আগস্ট ফের চালু হয় মেট্রোরেল। তবে বন্ধ রাখা হয় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন। এরও ২৬ দিন পর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, কাজীপাড়ায় মেট্রোরেলের স্টেশন মেরামতে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ একই স্টেশন মেরামতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। 

গত ১৯শে জুলাই হামলার ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি সংস্কার করে পুনরায় সচল করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।

গত ২৭ জুলাই সাবেক সড়ক পরিবহনব ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না বলে এক্সপার্টরা  জানিয়েছে।’ স্টেশন দুটি মেরামত করতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে বলেও তখন জানিয়েছিল ডিএমটিসিএল।