সাজাপ্রাপ্তকে ক্ষমায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৮

প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিচার বিভাগের সংস্কার প্রতিবেদন তুলে দেন কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।
দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগ থেকে ক্ষমা করে দেয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন। এর বদলে একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানসহ সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন তুলে দেন।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৮ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে আদালত থেকে চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগ থেকে ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে বোর্ড প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করার রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারে বিষয়ে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।’
নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২০ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
রিটে কোনো নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা করার আবেদন জানানো হয় রিটে।
রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমা করার ক্ষমতা অবাধ, যার কোনো নীতিমালা নেই। কে, কিসের ভিত্তিতে ক্ষমা পাচ্ছেন তার কোনো নীতিমালা নেই। যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এর আগে, ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি মনজিল মোরশেদ রিটটি দায়ের করেন। ওই রিটে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদটিকে সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১, ৩৫, ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল জারির জন্য আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এদিকে, সংস্কার কমিশনের ২৮ দফা প্রতিবেদনে স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠন, বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা, বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, অধস্তন আদালতের ভৌত অবকাঠামো, রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে।