
মুহম্মদ ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেস
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অগ্রগতিগুলো তুলে ধরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস।
শুক্রবার
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জাহিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
“ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হতে পারে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ছোট সংস্কারের প্যাকেজে
সম্মত হয়। তবে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হবে যদি দলগুলো বৃহত্তর সংস্কারের
প্যাকেজে সম্মত হয়।”
চার
দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকা পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে
সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পরে প্রধান উপদেষ্টার
রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সৌজন্য
সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান
উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক
নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে জাতিসংঘ মহাসচিবেরকে সংস্কার
প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অগ্রগতিগুলো তুলে ধরেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রাথমিকভাবে প্রায়
১০টি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে তাদের
প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে বলে জাতিসংঘ মহাসচবিকে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
মুহাম্মদ
ইউনূস বলেন, “একবার রাজনৈতিক দলগুলো ছয়টি কমিশনের সুপারিশে সম্মত হলে, জুলাই মাসের
একটি সনদে স্বাক্ষর করবেন। যা দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং রাজনৈতিক, বিচারিক,
নির্বাচন, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের রূপরেখা হবে।”
ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস অন্তর্বর্তী সরকারের
উদ্যোগে শুরু হওয়া সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত’ করেন বলে প্রধান
উপদেষ্টার জানায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি আমি আমাদের
পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে চাই। আমরা এখানে এসেছি আপনাদের সংস্কারগুলোকে সমর্থন
জানাতে। আমরা আপনার সর্বোত্তম শুভেচ্ছা জানাই। এজন্য যা কিছু আমরা করতে পারি, আমাদের
জানাবেন।”
এছাড়াও
সারা বিশ্বে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীর
অবদানের প্রশংসা করে গুতেরেস বলেন, “বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী আমাদের জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কর্মকাণ্ড অসাধারণ। একটি ন্যায়সঙ্গত পৃথিবী গঠনে প্রথম
সারিতে কাজ করছে তারা।”
দক্ষিণ
এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের প্রচেষ্টা, আঞ্চলিক রাজনীতি, সার্ক
এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ
বাড়ানোর জন্য আসিয়ানের সদস্য হতে চায়।”
প্রধান
উপদেষ্টা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বন্দর নির্মাণের কথা উল্লেখ
করেন, যা বাংলাদেশকে ‘একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র’ হিসেবে পরিণত করতে সহায়ক হবে, এবং
এটি বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে।
প্রধান
উপদেষ্টা হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলি থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, নেপাল,
ভুটান এবং ভারতকে নিয়ে একটি দক্ষিণ এশিয়ার গ্রিড তৈরির প্রস্তাবও তুলে ধরেন। তিনি
বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের, যেমন- যুক্তরাষ্ট্র,
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং জাপানের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে।”
দেশের
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মহাসচিবকে অবহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অর্ন্তবর্তী
সরকার একটি ভাঙা অর্থনীতি, দুর্বল ব্যাংকিং খাত, কমে যাওয়া রিজার্ভ এবং
ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পেয়ে ছিল। অর্থনীতি এখন শক্তিশালী করা হয়েছে। রপ্তানি
মাসের পর মাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো হয়েছে।”
তিনি
আরও বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন একটি পরিস্থিতিতে ফিরেছে যে, অন্তর্বর্তী
সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, দেশ আগামী বছর এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। আমরা এলডিসি
থেকে উত্তরণে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
আওয়ামী
লীগের নেতা ও তাদের সহযোগীদের লুট করা অর্থ দেশে ফেরাতে অর্ন্তবর্তী সরকারের
উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার চুরি
হয়েছে। আমরা সেই টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। তবে এটি একটি জটিল এবং দীর্ঘ
প্রক্রিয়া।”
শেখ
হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত পরিচালনা (ফ্যাক্ট
ফাইন্ডিং মিশন) করায় মুহম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্ককে
ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তিনি (ভলকার তুর্ক) চমৎকার কাজ করেছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের
ঘটনা ঘটার পর খুব দ্রুতই তারা সেগুলো নথিভুক্ত করেছেন।”