দেশ এখন ‘যুদ্ধাবস্থায়’, সতর্কতা প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৬:২১

ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
বাংলাদেশ ‘যুদ্ধাবস্থায়’ আছে বলে সতর্ক করলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাস্তবতা মেনে পুলিশকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান হানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যুদ্ধাবস্থায় আছি। এই বাস্তবতা মনে রেখেই পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা এই সুযোগে শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করবে, তাই পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।”
রবিবার স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি স্বাধীনদা দিবসের কুচকাওয়াজ আয়োজন না করার কারণ হিসেবে ‘যুদ্ধাবস্থার’’ কথা উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা ওয়ার ফুটিংয়ে (যুদ্ধাবস্থায়) আছি। আমরা আনন্দ করার মেজাজে নেই।”
‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্রও ততই তীব্র হচ্ছে’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, “পুলিশই সম্মুখ সারির মানুষ। তাদের অবহেলা করে দেশ গড়া সম্ভব নয়। আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা গেলে, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা গেলে, সব যুদ্ধেই জয়ী হওয়া সম্ভব।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আইন না থাকলে দেশে গণতন্ত্রসহ কিছুই থাকবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুলিশকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। অতীতে পুলিশ খারাপ মানুষের প্রভাবের শিকার হয়েছে, কিন্তু এখন আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্বও তাদের কাঁধে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ এক বিশাল সম্ভাবনার দেশ। কিন্তু সেই সম্ভাবনা আমরা এখনো বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি। জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে দেশ গড়ার সুযোগ এসেছে, এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।”
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও বাস্তবতা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের সামনে বিশ্ব নেতৃত্বের পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নারীদেরকে আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এটা অনেক বড় কাজ। আমাদের অবহেলার কারণে সমাজে এটা দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের দেশের অর্ধেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কেউ নাই। রাস্তাঘাটে চলতে ভয় পায়। এটা কোন ধরনের কথা! তাদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের আইনি দায়িত্ব। নিজ নিজ এলাকায় সেটি করতে হবে। কোথাও যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পুরনো বাংলাদেশ একটা অন্ধকার যুগ। ভয়ংকর একটা যুগ। সেই ভয়ংকর একটা দিন থেকে সুন্দর ঝলমলে একটা দিনে আসতে চাই। সেটা হলো নতুন বাংলাদেশ। পুলিশ বাহিনীর সমস্যা হচ্ছে ওই অন্ধকার যুগে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি হুকুম পেয়েছে কাজ করেছে। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে তোমাদেরকে ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে (পুলিশ) অনেক দোষ দেয়, আমরা দেখিয়ে দেব- আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমরা ভালো মানুষ।”
বিশেষ এই সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ফারজানা ইসলাম।
রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগের পরিস্থিতিতে সোমবার সারা দেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি জানান, পুলিশের উচ্চপদস্থ ১২৭ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।