Logo
×

Follow Us

সরকার

ইউনূসকে পাঁচ বছরের প্রধানমন্ত্রী চান সারজিস, হাসনাতের মতে ‘মানুষের অভিব্যক্তি’

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৬:২৪

ইউনূসকে পাঁচ বছরের প্রধানমন্ত্রী চান সারজিস, হাসনাতের মতে ‘মানুষের অভিব্যক্তি’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিতে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পর তাকে ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ছিলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহও।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন করতে আগ্রহী নন জানানোর সাত মাস পর তাকে নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতা সারজিস আলম।

শনিবার নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি তার এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন, তবে এটি তার দলের ইচ্ছা কি না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, যদিও আরেক কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেছেন, তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছেন, ‘এটা সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি।’ 

ঈদের ছুটি কাটাতে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ে অবস্থান করা সারজিস লিখেন, “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আজীবন থাকবে।”


প্রবল গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস যে সরকার ‘সংস্কার’ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে, সরকারে থাকা কেউ নির্বাচন করবে না, এমন কথা বলা হয়েছে একাধিকবার।

ইউনূস নিজেও নিশ্চিত করেছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

ক্ষমতায় যাওয়ার দেড় মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরের শেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট-ফরোয়ার্ড’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন ইউনূস। সেই আয়োজনে তিনি নিশ্চিত করেন যে, ভোটে লড়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সঞ্চালক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, “আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না?”

জবাবে ইউনূস বলেন, “আমাকে দেখে কি আপনার মনে হয় আমি নির্বাচন করব? আমি নির্বাচন করব না।”

সঞ্চালক আবার প্রশ্ন করেন, “তাহলে আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনাই নেই?”

ইউনূস বলেন, “না, না কোনোভাবেই নয়।” 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক আয়োজনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই।

ক্ষমতা নেওয়ার ১৮ দিনের মাথায় গত বছরের ২৬ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণেও ইউনূস দেশ শাসনে তার অনাগ্রহের কথা বলেন।

সেই ভাষণে বলা হয়, “আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।”

সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ছিল, “কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব, যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়, আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।”

গত ১৮ ডিসেম্বর নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনও জানান, সরকারে থেকে নির্বাচন করা যাবে না।

সেদিন তামাবিল স্থলবন্দরের প্রশাসন ভবন, তামাবিল ইমিগ্রেশন, বধ্যভূমি ও স্থলবন্দরের পণ্য পরিমাপ স্কেল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কোন উপদেষ্টা রাজনীতি করে না, আমাদের নির্বাচন করার ইচ্ছাও নেই। যদি সংস্কার শেষে কেউ নির্বাচন করতে চায়, তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।”

এই নীতির ধারাবাহিকতা রেখেই গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভাবের তিন দিন আগে সরকার থেকে পদত্যাগ করে নাহিদ ইসলাম। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে দুই জন প্রতিনিধি যোগ দেন, তাদের একজন ছিলেন তিনি।

ইউনূস ভোটে রাজি নন, উপদেষ্টা পরিষদের কেউ ভোটে অংশ নেবেন না, এমন ঘোষণার মধ্যে ইউনূসকে নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার আগ্রহ কি একান্ত ব্যক্তিগত নাকি এনসিপির দলীয় অবস্থান- এই প্রশ্নে সারজিসের বক্তব্য জানতে পারেনি সাম্প্রতিক দেশকাল।

এই প্রশ্নের জবাব পেতে কল করা হলে তিনি তা কেটে দেন।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ফোন ধরেননি।

পরে এনসিপির মুখ্য সংগঠন (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “সে যে এরকম স্ট্যাটাস দিচ্ছে সেটাও আমি দেখিনি। হতে পারে এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত।” 

সারজিস আলম। ফাইল ছবি 

মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ মেয়াদে পাওয়ার বিষয়ে যে আকাঙক্ষার কথা বলেছেন, সেটি সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি বলে মনে করেন হাসনাত আব্দুল্লাহও।

আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী- এই প্রশ্নে হাসনাত বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনুস ‘স্টেটসম্যান হিসেবে যে-রকম ভালো কাজ করছে’, সেই হিসেবে উনাকে নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়া সাধারণ মানুষের অভিমত। তাদের ইচ্ছা উনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসলে দেশের ভালো হবে।”

তাহলে এটা আপনার দলের অবস্থান কি না- এমন প্রশ্নে এনসিপি নেতা ‘না’ সূচক জবাব দেন।

এনসিপির শীর্ষ নেতারা অবশ্য নানা ধরনের বক্তব্য রাখছেন, একেক জনের কথায় একেক অবস্থান ফুটে উঠছে।

সেনানিবাসে এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে ‘পরিশুদ্ধ রূপে’ ফেরাতে চাপ দেওয়ার কথা জানিয়ে মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর নানা প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সারজিস সেই বক্তব্য ‘সংশোধন করে’ বক্তব্য রেখেছেন।

এর মধ্যে সারজিস আলমের শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে নিজ এলাকা পঞ্চগড় ভ্রমণ, এ নিয়ে দলের সিনিয়র সদস্য সচিব তাসনিম জারার প্রশ্ন তুলেছেন। জবাব সারজিস আবার দাবি করেছেন, ৫০টি গাড়ির ভাড়া দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের ৫০ বছর ধরেই ছিল।

দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি এসব বক্তব্যের মধ্যে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গত ২৫ মার্চ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের দলে শৃঙ্খলাবিধির বিষয়ে একটা প্রস্তাব পাস হয়েছে। কোনো ইস্যুগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলা যাবে, কোনগুলো নিয়ে যাবে না, সেসব নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সব কেন্দ্রীয় নেতা এতে স্বাক্ষর করবেন, এরপর এটি চূড়ান্ত হবে।



Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫