বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির অনুমান কমাল এডিবি, থাকবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫৬

গত বছরের জুলাইয়ে সরকার পতন আন্দোলন শুরুর পর থেকেই উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের গতি কমে গেছে। নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে কমেই।
অর্থনীতির বিভিন্ন চালক নিয়ে নানা শঙ্কার মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধারণার চেয়েও কম হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে চালু থাকবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যা।
সংস্থাটি বলছে এই অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যদিও এর আগে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল তারা।
বুধবার প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধির হার কমার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও শ্রমিক অসন্তোষের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের শতাধিক দেশে পাল্টা শুল্ক আরোপের আগে করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট চন্দন সাপকোটা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি আরোপ হলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় ধরনের অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে এতদিনের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক এখন হবে ৫২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরই মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ধাক্কা লেগেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ স্থগিত করছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কৃষি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে।
বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে সামান্য, যা বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতিশীল কিন্তু ধীরগতির প্রসারের ইঙ্গিত দেয়। বিপরীতভাবে সরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে এবং প্রবৃদ্ধিতে বিনিয়োগের অবদান ১ দশমিক ১ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
নিম্ন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কেন
আগের প্রতিবেদনের তুলনায় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর কারণ হিসেবে চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা থামেনি। এডিবি মনে করছে, শ্রমিক অসন্তোষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি কমিয়ে দেবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে গতি থাকলেও এডিবি মনে করে, দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা, রাজনৈতিক পালাবদল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি, শিল্পে অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রাক্কলনের কথা উল্লেখ করে এডিবির পূর্বাভাসের এপ্রিল সংস্করণে বলা হয়েছে, এ সময়ে অর্থনীতি ধীর গতিতে প্রসারিত হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে অনুমান করে এডিবি বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। উৎপাদন খাত স্থিতিশীল হওয়ায় পরবর্তী প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে অনুমান করছে তারা।
সংস্থাটির এ দেশীয় প্রধান হোয়ে য়ুন জেওং মনে করেন, জরুরি কাঠামোগত সংস্কার করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ
প্রতিবেদনে এশীয় দেশগুলোর ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধির অনুমানের তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অনেক কম হবে। কেবল পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ভারতে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মালদ্বীপে ৬ শতাংশ, ভুটানে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নিস্তার নেই
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
এডিবির অনুমান, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে থাকবে, যা সাধারণ মানুষের ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে।
হিসেবে তারা খুচরা বাজারের প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া, বাজার সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না থাকা, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নের কথা তুলে ধরেছে।
স্বস্তি কেবল ‘এক জায়গায়’
এডিবির প্রতিবেদনে কেবল একটি ক্ষেত্রে স্বস্তির বিষয় উঠে এসেছে।
তবে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এতে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে তা কমে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এই অগ্রগতির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমছে এবং রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়ছে।