বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানি।  

বৃহস্পতিবার অন্তবর্তী সরকারেরর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানির কার্যালয়ে বৈঠকে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা জানান।

চার দিনের সরকারি সফরে সোমবার দোহায় যান ইউনূস। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে তিনি অংশ নেন ‘আর্থনা সামিট ২০২৫-এ।

শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে চলমান আলোচনায় উঠে আসে জ্বালানি, জনশক্তি রপ্তানি, এলএনজি আমদানি, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মতো বিষয়।

“আমরা আপনার ধারাবাহিক নেতৃত্বের ওপর বিশ্বাস রাখি,” বলেন শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানি। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে সংস্কার ও পুনর্গঠনের এ প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

বৈঠকে কাতারের শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে তার পূর্ণ সমর্থন জানান এবং দেশ পুনর্গঠনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, তিনি তার ঘনিষ্ঠ একজন সহকারীকে দায়িত্ব দেবেন যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

প্রধান উপদেষ্টা “নতুন বাংলাদেশ” গঠনের জন্য কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ সহায়তা চান, যাতে দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য বিশেষ করে তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা যায় এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ে তোলা যায়।

“আমাদের তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতে আমরা আপনাদের সহায়তা চাই,” বলেন মুহাম্মদ ইউনুস।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে একটি কারিগরি দল পাঠানোর আহ্বান জানান, যাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যায়।

বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গারা যেন মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আমরা সকল প্রকার সহায়তা চাই।”

তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের সংলাপের সহ-আয়োজনে সহায়তা করার জন্য কাতারকে ধন্যবাদ জানান, যা আর্থনা সামিটের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন, যারা এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং রোহিঙ্গাদের জন্য কাতারের অব্যাহত সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

দুই নেতা গাজা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। মুহাম্মদ ইউনুস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “গাজাবাসীর দুর্দশার বিষয়ে এখনও বিশ্বের অনেক দেশ নীরব।”

কাতারের প্রধানমন্ত্রী গাজা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা আল জাজিরাকে ধন্যবাদ জানান, যারা কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও গাজা সংকট নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছে। তিনি বুধবার আল জাজিরা কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

তিনি বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য কাতারের সহায়তা চান, যার মধ্যে প্রশিক্ষণ এবং ক্রীড়া সুবিধা নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত।

প্রধান উপদেষ্টা কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা শেখ মোহাম্মদ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।