
শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ভূরাজনীতির জন্য আগামী ‘সাত মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা লিখেছেন।
প্রেস সচিব লেখেন, “আগামী সাত মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতেও পারে, আবার ব্যর্থ করতেও পারে।”
তবে ওই সাত মাস কেন গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যাখ্যা দেননি প্রেস সচিব।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তার সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছর জুন মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন দেবে। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, তারা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই হিসেবে সাত মাস পরে অর্থাৎ ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি নতুন জানালা খুলেছে। চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পশ্চিমা দেশগুলো এখন দক্ষিণ এশিয়াকে সম্ভাব্য উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ পরবর্তী বড় উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।”
“এখন হয়তো অবশেষে বাংলাদেশের সময় এসেছে। আমরা কি এই মুহূর্তকে কাজে লাগাতে পারব?”—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি লেখেন, রাজনীতি এখানে একটি মূল ভূমিকা রাখবে।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে অবকাঠামো ও লজিস্টিক ব্যবস্থার ওপর। তার মতে, উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃহৎ পরিমাণ পণ্য দ্রুত ও কার্যকরভাবে পরিবহনের সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলে পুরো উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে।
শফিকুল আলম বলেন, “লজিস্টিক-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জই হতে পারে সবচেয়ে বড় বাধা। বৃহৎ পরিমাণ পণ্য দ্রুত ও কার্যকরভাবে পরিবহনের সক্ষমতা শিগগিরই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ যে একটি উৎপাদনশীল শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, সে আকাঙ্ক্ষা মুখ থুবড়ে পড়বে।”
এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন। এজন্য বৈশ্বিক মানের পোর্ট অপারেটরদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন শফিকুল।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “যদি সফল হই, তাহলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা যাবে—বাংলাদেশ প্রস্তুত।”
অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়ানোর একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি লেখেন, “শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক বন্দর পরিচালকদের সঙ্গে অংশীদারত্ব ছাড়া এটি সম্ভব নয়। সফল হলে এমন অংশীদারত্ব আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে একটি শক্ত বার্তা পৌঁছে দেবে, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।”
বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল বা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পড়লেই বোঝা যায়, ব্রেটন উডস চুক্তির পর যে পুরনো অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা গড়ে উঠেছিল এবং যা ডব্লিউটিও (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল, তা এখন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”
শফিকুল আলম লিখেছেন, “সেই যুগের সবচেয়ে বড় বিজয়ীরা ছিল জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া; যারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বাজারমুখী রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলে সমৃদ্ধ হয়েছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ধীরে ধীরে এই পথে অগ্রসর হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে ছিল।”