নারী সংস্কার কমিশনের ৬টি সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১৪:১০

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। ফাইল ছবি
নারী সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলোর যেন বাস্তবায়ন না হয় সে জন্য স্থগিতাদেশের আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ইসলামিক আইনজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের জন্য আদালতের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রবিবার (৪ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন আইনজীবী রওশন আলী।
রিটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও নারী সংস্কার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী রওশন আলী বলেন, “রিপোর্টের বিভিন্ন সুপারিশ ইসলামী শরীয়ত, আমাদের সংবিধান এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এ রিট আবেদন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। এটি দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংবিধানিক ভারসাম্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রহণ করা একটি আইনগত পদক্ষেপ।”
বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে শুনানি হতে পারে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।
রিটে নারী সংস্কার প্রতিবেদন-২০২৫-এর ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ এবং ১২ অধ্যায়ে থাকা সুপারিশগুলো কেন ইসলামী আইন ও মূল্যবোধের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
রিটে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের অধ্যায় ১১- তে পুরুষ ও নারীর জন্য সমান উত্তরাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব করা সরাসরি কোরআনের সুরা নিসার পরিপন্থী। প্রতিবেদনে বহু বিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব এসেছে। এটি ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত একটি বিধান এবং সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্ম চর্চার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে। এতে ‘মাই বডি, মাই চয়েজ’ স্লোগানকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে শরীয়তের ওপর ভিত্তি না রেখে নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যৌনকর্মকে (সেক্স ওয়ার্ক) বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।এ ধরনের প্রস্তাব ইসলামি মূল্যবোধ এবং সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে লিঙ্গ পরিচয় এবং ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা শরীয়তবিরোধী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গত ১৯ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কমিশন নিয়মিত বৈঠক করে ৪৩টি। পাশাপাশি নারী অধিকারকর্মী, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা হয়।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে বলেছে। সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনে নারী ও মেয়ে শিশুর সুরক্ষা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ এবং জনপ্রশাসনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথাও এসেছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, সব বয়সী নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার প্রস্তাব এসেছে।
নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর থেকে প্রতিক্রিয়া দেখি আসছে দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। তারা নারী কমিশন পুনর্গঠন করার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি কমিশনের ‘বিতর্কিত’ সুপারিশগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ সব সুপারিশ ইসলামী শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অভিযোগ।