আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ‘দুঃখ’ করবে না কোনো দেশ: প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১৪:৫০

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় বিশ্বের কোনো দেশ দুঃখ প্রকাশ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, “গণতান্ত্রিক বিশ্ব ‘খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত’ দলের পক্ষে কখনও কথা বলবে না।”
উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আসার পরদিন রবিবার সকালে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পাতায় এক স্ট্যাটাসে তিনি এই মত প্রকাশ করেন।
ইংরেজিতে দেওয়া এই পোস্টে শফিকুল একটি সাক্ষাৎকারের কিয়দাংশ তুলে ধরেন। সেখানে প্রশ্ন করা হয়, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?”
জবাবে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে বিশ্বের কোনো দেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তাতে দুঃখ প্রকাশ করবে।”
এই নিষেধাজ্ঞা জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
ওই প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, “এর আগে আমরা দেখেছি, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে শুধু কোনো দলের কার্যক্রম নয়, বরং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যখন তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে বা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানি ও ইতালি নাৎসি এবং ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার উদাহরণ টানেন তিনি। স্পেন ও বেলজিয়ামে কিছু দলকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের জন্য’ নিষিদ্ধ করার কথাও তুলে ধরেন।
“জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) প্রতিবেদন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং দলটির কর্মী ও সহযোগী সংগঠনগুলো মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে,” বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেন শফিকুল। বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকেরা ব্যাংকগুলো লুটে নিয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।”
সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির পক্ষে কেউ কথা বলবে না বলে মনে করেন প্রেস সচিব। বলেন, “গণতান্ত্রিক বিশ্বে এমন কোনো পক্ষ নেই যারা নির্লজ্জ এই খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষে কথা বলবে।”
আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বর্তমান সরকার আশা করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরব হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন পক্ষ।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ওইদিন রাত ১টার দিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি মিছিল যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
পরে হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে শুক্রবার জুমার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে থেকে সরে এসে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
এরপর শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বিশেষ বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ‘আপাতত’ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।