Logo
×

Follow Us

সরকার

আমরা সঠিক পথে, জনগণ আমাদের সঙ্গে: ইউনূস

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১৫:৫০

আমরা সঠিক পথে, জনগণ আমাদের সঙ্গে: ইউনূস

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: রয়টার্স

“বাংলাদেশের বিগত ১৬ বছর যেন ছিল একটানা একটি ‘ভূমিকম্পের’ মতো”—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনোমিস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস এই ভূমিকম্প-সদৃশ সময়কাল বলতে বুঝিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের একটানা ‘দমনমূলক’ শাসনকালকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে এক ‘বৃহৎ গণআন্দোলনের’ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারায় এবং সেই প্রেক্ষিতে বর্তমানে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে দায়িত্বে আছেন ইউনূস। তিনি বলেন, “যা কিছু ধ্বংস হয়েছে, সব কিছুই এখন পুনর্গঠনের চেষ্টায় আছি। আমরা সঠিক পথে আছি, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে—আমরা আশাবাদী।”

দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, শেখ হাসিনার পতনের পর তার সরকারের শাসনামলে যে মাত্রায় সীমালঙ্ঘন বা অপব্যবহার হয়েছিল, সেটি এখন ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। একটি শ্বেতপত্রের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে তার শাসনামলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার’ চায় যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর ফিরে না আসে।

তবে দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, ‘বিপ্লবের’ নয় মাস পরেও বড় পরিবর্তন আনা কঠিন হয়ে পড়ছে।

প্রতিবেদন বলছে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সেপ্টেম্বর থেকেই ইউনূস বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এসব কমিশনে রয়েছেন নাগরিক সমাজ ও বিশিষ্টজনেরা। নির্বাচন, বিচার বিভাগ, সংবিধানসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে। এসব সুপারিশ যাচাই করতে গঠিত হয় ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’, যেখানে ৩৫টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে। এই কমিশন তৈরি করছে ‘জুলাই সনদ’, যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে নির্বাচন এবং রূপরেখা আঁকা হবে একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর।

তবে এই ঐকমত্য খুঁজে পাওয়া সহজ নয়—বলছে দ্য ইকোনোমিস্ট। কোনো কমিশন থাকা উচিত, আর কোনটা নয়—তা নিয়েও মতবিরোধ চলছে। কেউ বলছে, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টস নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি কেন? আবার কেউ বলছে, শিক্ষাখাতের প্রতি নজর দেওয়া হয়নি যথাযথভাবে।

সবচেয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে ‘নারী সংস্কার কমিশন’, যা গঠিত হয়েছে অনেক দেরিতে। এই কমিশনের একটি প্রস্তাব ছিল ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন এনে নারীদের অধিকতর অধিকার দেওয়ার, যা ঘিরে ইসলামপন্থি দলগুলো ব্যাপক প্রতিবাদ করেছে।

তবুও আশাবাদ হারাচ্ছেন না সংস্কারকারীরা। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে স্বাধীন পদ্ধতি চালুর মতো কয়েকটি বড় সংস্কার ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৫ মের পর শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের সংলাপ, আর আলী রীয়াজ আশাবাদী, আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ তৈরি হয়ে যাবে।

সব কিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে, যদিও ইউনূস বলছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই এবং তিনি নিজে তাতে অংশ নেবেন না। তবে দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, এই দেরির মূল্যও রয়েছে।

মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক খাত স্থিতিশীল হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল রয়ে গেছে। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নত হয়নি। একটি জরিপ বলছে, জনগণের প্রায় ৬০ শতাংশ মনে করে, আগের তুলনায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির তেমন উন্নয়ন হয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

এই বিক্ষোভের প্রধান দাবি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’। ১২ মে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে, ফলে তারা আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, আওয়ামী লীগের প্রতি যে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্ত্বেও দলটির এখনো জনভিত্তি রয়েছে। দলের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, “আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছিলাম, জঙ্গিরা আমাদের হটিয়েছে সহিংসভাবে। আমরা আমাদের ন্যায্য জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

দ্য ইকোনোমিস্ট এর মতে, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও আওয়ামী লীগ এখনও বাংলাদেশকে ‘নাড়িয়ে’ দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫