নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা, চীনের উদ্বেগ
প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় চীনা রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২২

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরু না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। আজ ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সাথে সাক্ষাৎকালে এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে তারা এই এলাকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে কিছু রোহিঙ্গা মাদক পাচারের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তাদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৮ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় এ ঘটনা বাড়ছে। এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ ঘটানোর ফলে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুলে ধরেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য প্রদান এবং জীবন মানের উন্নয়ন এ সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ঠ নয়। বরং তাদের প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এসমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। চীনের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে তার সাথে একমত প্রকাশ করেন।
পিরোজপুরে চীনের নাগরিক হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সরকার এবিষয়ে অত্যন্ত তৎপর। এ ঘটনার প্রধান আসামীসহ দুই জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে আটকে পড়া চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভিসা নবায়নের বিষয়ে চীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান ড. মোমেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়ে চীন সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবে বলে চীনের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও পারিবারিক পূনর্মিলনের ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া শুরু হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূত আরো জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত আমার দেখা নয়াচীন বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে এবং তা খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। চীনের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া চীনের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র লেখা একটি চিঠি বাংলাদশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হস্তান্তর করেন। চিঠিতে হংকংকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করায় ড. মোমেনকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক চীন নীতির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পূনর্ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন-লুটতরাজের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এরপর দফায় দফায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় দেশে ফিরতে রাজি হয়নি এই বিশাল জনগোষ্ঠী।