পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে অস্থিতিশীলতা
উস্কানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপথগামী করা মানা যায় না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ীদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, উস্কানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নেয়াকে কেউ মেনে নিতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে উচ্চ শিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থে পরিচালিত হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকার কেন টাকা খরচ করবে। সেটাও তাদের চিন্তা করতে হবে, তারা কোনটা করবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘উস্কানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপথগামী করে আবার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা কখনো মেনে নেয়া যায় না। আর তা যদি করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ নিজেদের জোগান দিতে হবে। নিজেদের বেতন নিজেরা দেবে এবং নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাবে, সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে।’
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার জাতীয় শ্রমিক লীগের ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্ধোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সরকার দিচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শায়ত্ত্বশাসন আছে একথা সত্যি। কিন্তু টাকাটা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের দেয়া টাকা ইউজিসিতে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) যায়, সেখান থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হয় এবং সমস্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, যা কিছু তারা পাচ্ছেন তা দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত স্বল্প খরচে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মাসে শিক্ষা ব্যয় দেড়শ’ টাকার বেশি হয় না। যদি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান তবে, দেখবেন কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে। প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় এক একজন শিক্ষার্থীর পেছনে। প্রকৌশল বা কারিগরি শিক্ষায় আরো বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। কাজেই সেখানে শৃঙ্খলা থাকতে হবে।’
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যয়ের জোগান সরকারকেই দিতে হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে, শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শিক্ষা পাবে ও নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কী আমরা তা বুঝি না। যারা পড়াশোনা নষ্ট করে সেখানে ধর্মঘট করে দিনের পর দিন কর্মঘন্টা নষ্ট করবেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত করবেন, তারাই সব বুঝবেন। আর আমরা বুঝবো না, এটাতো হয় না। অর্থ সরকার দেবে। সবরকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর সেখানে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না, এটাও হতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কথায় বলে স্বাধীনতা ভাল কিন্তু তাহা বালকের জন্য নহে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। ’
দাবি মেনে নেয়ার পরেও ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও শিক্ষার সময় যেন নষ্ট না হয়। উপযুক্ত সময়ে তারা ভাল রেজাল্ট করবে ও তাঁরা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে, সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন,‘ দেশের আইনে আছে কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে এবং সেটা যদি প্রমাণিত না হয় অভিযোগকারীর ওই আইনে বিচার হয়, সাজা হয়। কাজেই যারা কথা বলছেন তারা আইনগুলো ভালভাবে দেখে নেবেন। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম এবং পড়াশোনা করেই এতদূর এসেছি। এটাও ভুলে গেলে চলবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে বাংলাদেশে ’৭৫ এর পরে প্রতি রাতে ক্যু হতো। যেখানে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলতো সেই বাংলাদেশ বিগত প্রায় এক দশকে অনেক দূর এগিয়েছে। আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন তাদের কোনোদিন ওই সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনিনি বরং তাদের পদলেহন করতেই দেখেছি, এটা হলো বাস্তবতা।’