আবারও সক্রিয় করা হচ্ছে ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:১১

এক যুগ পর ফের সক্রিয় করা হচ্ছে ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’। ফাইল ছবি
এক যুগ পর ফের সক্রিয় করা হচ্ছে ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কমিটি সক্রিয় করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা গেছে, এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, সকল বিভাগীয় কমিশনার ও সকল জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিতর্ক এড়াতে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে কমিটিতে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, অভিভাবক, ধর্মীয় গুরু, মসজিদের ইমাম, সাংবাদিক, উদ্যমী যুবক ও শিক্ষার্থীসহ পরিচ্ছন্ন ইমেজের ব্যক্তিদের রাখতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন গণমাধ্যমে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আবারও দেশের শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কোমলমতি ছাত্রদের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। এ ঘটনায় প্রাণ গেছে দেড়শ জনের। মেট্রোরেল, যানবাহন ও পুলিশ বক্সসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। তারা ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মতো নাশকতা শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ করা হবেই। বাড়ানো হবে জনসচেতনতা। এ বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতঃপূর্বে সারা দেশ থাকা নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিগুলো ফের সক্রিয় করা হচ্ছে।
সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে। বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা কমিটির প্রধান হবেন। মহানগর এলাকায় এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জেলা কমিটির সভায় আলোচনা করে পৌর ও ওয়ার্ড কমিটি এবং উপজেলা কমিটির সভায় আলোচনা করে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে হবে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা ও উপজেলা কমিটির সভায় উপদেষ্টা হিসেবে অংশ নেবেন। সংসদ সদস্যরা তাদের নিজ এলাকায় অবস্থান করলে তারা বিশেষ আমন্ত্রণে কমিটির সভায় উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। জেলা, মহানগর নাশকতা ও প্রতিরোধ কমিটির সভার কার্যবিবরণীর অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকরা উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত কমিটির কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৬ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা প্রতিরোধ করতে ৬৪ জেলায় ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় এবং কমিটির কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে।
গত ১৭ জুলাই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার বিষয়টি আলোচিত হয় এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে সারা দেশে কমিটি গঠনে গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সন্ত্রাস নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিগুলো আবারও সক্রিয় করতে হবে।