খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিন পার্বত্য জেলায় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তী সময়ে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত ও ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বার্তায় বলা হয়েছে, আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া এবং যেকোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি শিগগিরই গঠন করা হবে। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবে বলে বার্তায় জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এই প্রতিনিধিদলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী থাকবেন।
এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
নিহতরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সকালে দীঘিনালা লারমা স্কয়ারে যান জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দীঘিনালা জোন অধিনায়ক। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট পরিদর্শন করেন তারা। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পাহাড়ি-বাঙালি উভয়কে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ করছি। গতকালের আগুনে পুড়ে যায় অন্তত ১০২টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
দীঘিনালা জোন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। কালকে রাত থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত আছে। বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh