শিশুদের খেলনায় বিষাক্ত সীসা-পারদ-ক্যাডমিয়াম: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:২৫

এসডোর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন | ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে শিশুদের খেলনায় বিষাক্ত সীসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়ামসহ বিষাক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। তাই, সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো “ইনোসেন্স টাচড বাই শ্যাডোস: ইনভেস্টিগেটিং টক্সিক ক্যামিকেলস ইন টয়’স” শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে এমন প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। যেখানে শিশুদের খেলনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ সোমবার (২৩ অক্টোবর) এসডোর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে শিশুদের খেলনার মধ্যে বিপজ্জনক ভারী ধাতু, বিশেষ করে সীসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি প্রকাশ করা হয়েছে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এই খেলনাগুলিতে পাওয়া গড় ঘনত্ব নিম্নরূপ: লেড-৬৫.৮৫ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় ৫ গুণের বেশি; পারদ-৩০.৬ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় ৪ গুণের বেশি; এবং ক্যাডমিয়াম-২৮.৬৫ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় ১৫ গুণের বেশি। পরীক্ষিত খেলনাগুলোর মধ্যে ৫৫ শতাংশ খেলনাই বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। শিশুদের খেলনায় সীসার উপস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের খেলনায় সীসার উপস্থিতি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।
শিশুদের খেলনা উৎপাদন, বিতরণ এবং ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের সীসা দূষণকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত এবং এই পণ্যগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রিপোর্টে শিশুদের খেলনায় থাকা বিপজ্জনক সীসা, আর্সেনিক, বেরিলিয়াম, ক্যাডমিয়াম, হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়াম এবং পারদসহ উপস্থিত থাকা ভারী ধাতুগুলির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অকুপেশনাল সেফটি এন্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই ভারী ধাতুগুলিকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও ভারী ধাতুর উপস্থিতি প্রত্যেকের জন্য ক্ষতিকারক, তবে এটি ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
শিশুরা খেলনা হাতে এবং মুখে দেওয়ার ফলে সেখান থেকে বিষাক্ত কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসে, যা তাদের স্নায়বিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং এসডোর কারিগরি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, সীসা দূষণ বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা দেশের জনগণ এবং এর অর্থনৈতিক কল্যাণে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। সীসার বিষাক্ততা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
ব্যান টক্সিক্সের অ্যাডভোকেসি/ক্যাম্পেইন অফিসার থনি ডিজন বলেন, বেশিরভাগ চকচকে খেলনাতে সীসার উপস্থিতি রয়েছে। ব্যাটারি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত খেলনা, এমনকি মার্বেলেও পারদ এবং ক্যাডমিয়ামের মত ক্ষতিকর ভারী ধাতু রয়েছে।
ডিজিএইচএস’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আব্দুল্লাহ-আল ফয়সাল বলেন, সীসার সংস্পর্শে আসার দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি তরুণ প্রজন্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। সীসার বিষাক্ততা শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং বিকাশকে ব্যাহত করতে পারে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেনের মতে, সীসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়াম প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত বিষাক্ত ধাতু, শিশুরা খেলনা হাতে পাওয়া মাত্রই তা সবার আগে মুখে দেয়। খেলনায় থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদানগুলি শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।
এসডোর এই গবেষণার ফলাফলে, সব খেলনার নমুনায় অত্যধিক মাত্রায় বিষাক্ত ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খেলনায় বিভিন্ন ভারী ধাতু ও ক্যামিকেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, খেলনায় ব্যবহৃত রং মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট। কাজেই, যত দ্রুত সম্ভব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে সীসার সুনির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজন। থিম প্রেজেন্টেশনটি উপস্থাপন করেন এসডোর রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাম্পেইন অ্যাসোসিয়েট শ্যানন ইফফাত আলম।