অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা? কারণ ও পরিত্রাণের উপায়

ডা. তাহমীদ কামাল
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০৯

অল্প বয়সেই কোমর ব্যথার কারণ ও পরিত্রাণের উপায় | ছবি : প্রতীকি
আসিফ আহমেদ , বয়স ৩৫। কিছুদিন ধরেই কোমর থেকে ব্যথা হয়ে পায়ের দিকে চলে যায়। ব্যথার ধরনটা কিছুটা অদ্ভুত। অনেকটা ঝিম ঝিম কিংবা অবশ অবশ লাগে। তিনি ভাবলেন একটানা অনেক্ষণ বসে থাকার ফলে এমন হচ্ছে। তিনি এরপর থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়াতেন ও হাঁটতেন। কিন্তু কিছুতেই অস্বস্তি কমছে না, বরং ব্যথা বেড়েই চলেছে।
আসুন এবারে আমরা জানি কেন আসিফ সাহেবের এমন ব্যথা হচ্ছে এবং এই ব্যথা থেকে পরিত্রাণের উপায়। অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা অনেকেরই হয়। দিন দিন এই সমস্যাটা বেড়েই চলেছে। এর কারণ ও পরিত্রাণের উপায়গুলো জেনে নিন-
অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা কেন হয়?
- যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরে ব্যথা বেড়ে যায়।
- বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট নেওয়া উচিত।
- যারা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা অনুভূত হয়।
- অনেকেই আছেন যারা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।
সমস্যার লক্ষণ ও উপসর্গ
- প্রথমে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় হয়তো রোগী হাঁটতেই পারে না। ব্যথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে পায়ে ঝিনঝিন ধরে থাকে।
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
- কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে। হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে। ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোনো এক পায়ে নামতে পারে।
- কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া। পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়, পায়ের শক্তি কমে যায়।
- দৈনন্দিন কাজ যেমন- নামাজ পড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরে ব্যথা হওয়া।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষ্ণ ব্যথা, কোমর থেকে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বাড়তে থাকলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে, হাঁচি বা কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে গেলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নিন।
চিকিৎসা ও পরিত্রাণের উপায়
- হালকা ব্যথা হলে অবহেলা না করে মেডিসিন খেতে হবে এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
- অনেক ক্ষেত্রে কোমরে গরম সেঁক দিলে উপকার পেতে পারেন। কোমর ব্যথার বিভিন্ন মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মালিশ করবেন না।
- ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
- অনেকেই কোমর ব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথানাশক মেডিসিন খেয়ে ফেলে। এটা একেবারে ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
লেখক : ডা. তাহমীদ কামাল
এফসিপিএস (ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন)
পেইন, আর্থ্রাইটিস, প্যারালাইসিস অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।