ইউনিসেফের প্রতিবেদন
ডেঙ্গুতে প্রতি ৫ মৃত্যুর একটি নারী, ৬ মৃত্যুর একটি শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:১৩

এ বছরের শুরু থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৬০ জন। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এক প্রতিবদেন বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ উল্লেখ করেছে। গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ‘মানবিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের শুরু থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৬০ জন।
এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৪৩ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের হার বেশি, ৬০ শতাংশ। তবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী বেশি, এ হার ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ মৃত প্রতি পাঁচজনের তিনজন নারী। আর মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ছয়জনের একটি শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও কিছু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেকেই চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের তথ্য জাতীয় ডেটাবেজে নেই।
এত নারী–শিশু মৃত্যুর কারণ কী
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য প্রক্রিয়ায় এটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ১৯৬৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বিক্ষিপ্তভাবে দেখা দেয়।
২০০০ সালে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব হয় দেশে। তখন থেকে বিভিন্ন সময়ে কম–বেশি প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। তবে এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ। এ বছর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী এবং ১৭ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪৩ শতাংশ পুরুষ। মোট মারা যাওয়া ব্যক্তির মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু ১০ শতাংশ। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে–নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নারী ও শিশু মৃত্যু কেন বেশি, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ময়নাতদন্ত করাও প্রয়োজন। যাতে কী কারণে মৃত্যু হচ্ছে, তা বের করা সম্ভব হয়।
শিশু মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বে-নজির আহমেদ বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের অনেকে আগেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা নতুন। যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে শিশুদের দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে দেহের রক্তের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে শিশুরা সহজে মানিয়ে নিতে পারে না।
এ ছাড়া শিশুদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আক্রান্ত হলে তাদের রক্তনালির ছিদ্র বড় হয়ে যায়। ফলে রক্ত থেকে জলীয় অংশ বেশি পরিমাণে বেরিয়ে যায়। রক্তনালিতে স্বাভাবিক চাপ থাকে না। রক্তচাপ কমতে কমতে শিশুর অবস্থা দ্রুত সংকটাপন্ন হয়ে যায়।
আর নারীদের ক্ষেত্রে এই জনস্বাস্থ্যবিদের ভাষ্য হলো, নারীদের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যেসব কারণ ভাবা হচ্ছে তা হচ্ছে— রক্তশূন্যতা, নারীর নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার ঘাটতি ও নারী সদস্যের প্রতি পরিবারগুলোর নজর কম দেওয়ার প্রবণতা। নারীদের মধ্যে রক্তশূন্যতার হার বেশি। ডেঙ্গুতে রক্তের উপাদানের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়, এতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়।
রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রেও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকে। ফলে রক্তশূন্যতা রয়েছে নারীর ডেঙ্গু হলে অক্সিজেনের ঘাটতি বেশি হয়ে বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যায়। এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে দ্রুত শরীর খারাপ হতে দেখা গেছে। নারীস্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতায় সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়াও নারীর মৃত্যু বাড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।