ফাইব্রোমায়ালজিয়া : মানসিক কারণে শরীর ব্যথা

ডা. তাহমীদ কামাল
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৬

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা | প্রতীকী ছবি
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা ও শারীরিক অসামর্থ্যতার অন্যতম প্রধান কারণ ফাইব্রোমায়ালজিয়া। এ রোগের উপসর্গগুলো সাধারণত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না।
শুরুর দিকে ব্যথা এক জায়গায় থাকলেও আস্তে আস্তে দুই হাত, দুই পা, পিঠ ও ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সকালের দিকে রোগীরা চরম অবসাদগ্রস্ততায় ভোগেন। কাজের ক্ষেত্রে কেউ কেউ চরম অসুবিধার সম্মুখীন হন। এমনকি ব্যথা আর অবসাদগ্রস্ততার কারণে আগেভাগে অবসর গ্রহণে বাধ্য হন। ব্যথানাশক ওষুধে সাধারণত কোনো কাজ হয় না এবং ফিজিওথেরাপি দিলে ব্যথা আরও বাড়তে পারে।
কেন ভোগেন, কারা বেশি ভোগেন
ফাইব্রোমায়ালজিয়া যে কোনো বয়সে হতে পারে, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। নারীরা এ রোগে পুরুষের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ভোগেন। পারিবারিক অশান্তি, যেমন- দাম্পত্য কলহ, পরিবারে মদ্যপায়ী থাকলে, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন, শারীরিক চাহিদা পুরন না হওয়া, কম পারিবারিক আয়, ছোটবেলায় নির্যাতনের কোনো ইতিহাস থাকলে এ রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
ঘুমের সমস্যা, বিশেষত ডেল্টা স্লিপের পরিমাণ কমে গেলে এ রোগ হয়। এ ছাড়া শরীরের ব্যথা নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হলে, যেমন- শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ব্যথা অনুভবের মাত্রা ও সহ্য ক্ষমতা কমে গেলে, মস্তিস্কে কিছু কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমাণ কমে গেলে, থ্যালামাসে রক্তের পরিবহন কমে গেলে, কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রায় তারতম্য হলে অথবা হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-এড্রেনাল এক্সিসে কোনো সমস্যা হলেও এ রোগ দেখা যায়।
রোগের লক্ষণগুলো কী কী
এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, শারীরিক অসামর্থ্যতা, খিটখিটে স্বভাব, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, মনোযোগহীনতা, হাত ও হাতের আঙুল ফুলে যাওয়া এবং ঝিনঝিন করা, মাথা ব্যথা, পেটে কামড়ানো ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, কোনো কানে বেশি শোনা এবং ঘন ঘন ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া অন্যতম। রোগের বিস্তারিত ইতিহাস জেনে এবং শারীরিক পরীক্ষার মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়া টেন্ডার পয়েন্টস নামে শরীরের ১৮ টি ব্যথাপ্রবণ জায়গায় ব্যথার মাত্রা দেখে রোগ নির্ণয় সম্ভব।
এ রোগের চিকিৎসার তিনটি মূল লক্ষ্য- রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনকে রোগ সম্পর্কে জানানো, রোগের প্রকৃতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। রোগীকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত ট্রিপটিন, প্রিগাবালিন ও গাবাপেনটিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া কিছু অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন, যেমন- সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, হাঁটা ও নিয়মিত যোগব্যায়াম অন্যতম। ভালো ঘুমের জন্য স্লিপ হাইজিন মেনে চলা। শুধু ঘুম পেলেই ঘুমাতে যাওয়া এবং প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা। ঘুমের নিয়মনীতি তৈরি করা ও তা মেনে চলা অন্যতম। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে এ রোগের চিকিৎসা নিলে এই রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
লেখক : ডা. তাহমীদ কামাল
এফসিপিএস (ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন)
পেইন, আর্থ্রাইটিস, প্যারালাইসিস অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।