
হজকালীন স্বাস্থ্য সমস্যা ও সচেতনতা। ছবি: সংগৃহীত
হাজীদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবার জন্য সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সৌদি আরব পৌঁছানো থেকে শুরু করে দেশে ফেরা পর্যন্ত তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সংস্থার ১৪টি বিষয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নার্স, ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসা সহকারীসহ শতাধিক জনবলসংবলিত টিমের সমন্বয়ে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় পৃথক মেডিক্যাল সেন্টার চালু করেছে। আপনার এজেন্সির কাছ থেকে এসব মেডিক্যাল সেন্টারের তথ্য জেনে রাখবেন।
সারা বিশ্ব থেকে এ বছর প্রায় ২০ লাখ হাজী হজ করবেন। আমাদের দেশ থেকে হজ পালন করতে যাচ্ছেন প্রায় ৯০ হাজার জন। এরই মধ্যে হজ ফ্লাইট হাজীদের নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করেছে।
বাংলাদেশের হাজীদের বেশির ভাগই বয়সে প্রবীণ। তাই বয়স, অপরিচিত পরিবেশ, গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া, খাবারদাবার, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কো-মরবিডিটি যেমন—হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, থাইরয়েড, হাঁপানি রোগ ইত্যাদি অনেককেই অসুস্থ করে তোলে। হজের সময় প্রায় ৬০ শতাংশ মৃত্যু ঘটে হার্টের রোগের কারণে; হাঁপানি এবং ডায়াবেটিস রোগও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সচেতনতা, সতর্কতা ও যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে অসুস্থতা অনেকটাই এড়িয়ে চলা সম্ভব।
এবারও হজ মৌসুমে সৌদি আরবের আবহাওয়া বেশ শুষ্ক এবং অনেক গরম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাপমাত্রা ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকতে পারে। অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া এবং বমিও দেখা দেয়।
গরমে তৃষ্ণা মেটাতে প্রায় সবাই ঠাণ্ডা পানি পান করে থাকেন। ফলে অল্পতেই গলা বসে যাওয়া, কাশি, গলা ব্যথা, টনসিলাইটিস এবং শ্বাসনালির সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৪০ থেকে ৯০ ভাগ হাজি এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন।
এ সময় খাবারদাবারের বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রায়ই বিভিন্ন সংস্থা হাজিদের বিভিন্ন ধরনের খাবার বিনা মূল্যে সরবরাহ করে থাকে। হজ এজেন্সিগুলোও তাদের নিজ নিজ হাজীদের খাবার সরবরাহ করে থাকে। তার পরও খাবারে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে হাজীদের প্রায়ই এসিডিটি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়ায় ভুগতে দেখা যায়।
হজে আসা প্রায় ২০ শতাংশের অধিক মানুষ নানা ধরনের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
হজের সময় কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ ও ভিড়ের মধ্যে আঘাত পাওয়া কিংবা অতিরিক্ত হাঁটাচলার কারণেও গোড়ালি ও পেশিতে ব্যথা এবং পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। অনেক ভিড়ে জাবালে রহমত ও মিনা এলাকায় বেশি জখমের ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ধুলাবালির জন্য হাঁচি, কাশি, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টও হতে পারে। অনেক মানুষ একত্রে বসবাস, হাঁচি-কাশি এবং হাতের স্পর্শে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
ম্যানিনজাইটিস রোগ হজযাত্রীদের জন্য আতঙ্কের কারণ। হজের সময় সৌদি আরবে বেশ কয়েকবার ম্যানিনজাইটিস রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।
হজের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে অনেকেই ঘুমের সময় নিয়ে বেশ ঝামেলায় থাকেন। কেনাকাটায়ও অনেকে অনেক সময় ব্যয় করেন। এ জন্য অনিদ্রাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
হজের প্রাক্কালে করণীয়-
নির্দেশিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন, মেনিনজাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্যান্য প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
হজে রওনা হওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চেক লিস্ট করে প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী ওষুধসামগ্রী ও প্রেসক্রিপশন সঙ্গে নিতে হবে, যেমন—সামান্য জখমের জন্য অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম; জ্বর ও মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল; শরীর ব্যথায় ডাইক্লোফেন জাতীয় ওষুধ; পাতলা পায়খানা ও আমাশয়ের জন্য ওরস্যালাইন, মেট্রোনিডাজল ইত্যাদি; পাকস্থলীর অম্লতা দূরে অ্যান্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল বা প্যান্টোপ্রাজল; ঠাণ্ডা, সর্দি ও কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ট্যাবলেট সঙ্গে রাখা শ্রেয়।