Logo
×

Follow Us

স্বাস্থ্য

নতুন আতঙ্ক মাঙ্কিপক্স

Icon

মীর ইফতেখার উদ্দিন ফাহাদ

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১৪

নতুন আতঙ্ক মাঙ্কিপক্স

মাঙ্কিপক্স। ছবি: সংগৃহীত

ইব্রাহিম মুসা একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অনুভব করেন তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে গেছে ও ব্যথা করছে। প্রথমে তিনি এটিকে অ্যালার্জি মনে করে খুব একটা পাত্তা দেননি। কিন্তু ৩ থেকে ৪ দিন পরও এই ফোলা না কমায় তিনি ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান মুসার মাঙ্কিপক্স হয়েছে।

সম্প্রতি মাঙ্কিপক্স সারা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালের মতো অতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।

সাল ১৯৫৮। ডেনমার্কের প্রিবেন ভন ম্যাগনাস পরীক্ষাগার সাইনোমলগাস প্রজাতির বানরের মধ্যে প্রথম শনাক্ত হয় এক ধরনের ভাইরাস। যার নাম দেওয়া হয় বানরবসন্ত (মাঙ্কিপক্স)। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি পরীক্ষাগারে এ বসন্ত ধরা পড়ে। নামটি বদল করে নতুন বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ এ নাম থেকে মনে হতে পারে বানরই এ রোগের জন্য দায়ী, যা সঠিক নয়। রোগটির প্রাদুর্ভাব ১৯৭০ সাল থেকে প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে দেখা যায়। ইতিপূর্বে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তবে সেসব ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আফ্রিকার দেশসমূহে ভ্রমণের ইতিহাস অথবা উক্ত দেশগুলো থেকে আমদানিকৃত প্রাণীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস ছিল। মে ২০২২ থেকে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়াতে মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়া যেতে থাকে, যারা মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার রোগ উপদ্রুত অঞ্চলে ভ্রমণ কিংবা সে দেশের মাঙ্কিপক্সবাহক কোনো প্রাণীর সংস্পর্শেও আসেননি। 

করোনা মহামারির সমাপ্তি ঘটলেও এখনো তার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্বের অনেক দেশ। দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলো এ ক্ষেত্রে এখনো আগের জায়গায় ফিরতে লড়াই করছে। এর মধ্যে নতুন মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আফ্রিকান অঞ্চলে মাঙ্কিপক্স পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। গত ১৪ আগস্ট এই ভাইরাসের সতর্কতায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও)। জানা গেছে, ইউরোপের দেশ সুইডেনেও এমপক্স ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে।  

দ্য আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়। বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান, কেনিয়া এবং রুয়ান্ডাতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৬ আগস্ট আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানে একজনের মধ্যে এই ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ফলে ভাইরাসটির উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। 

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে গুটিবসন্ত ও কাউপক্স। এ জন্য মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের মিল দেখা যায়। আবার মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের রয়েছে দুটো ক্লেড বা উপজাতি। একটি হচ্ছে মধ্য আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার ১০% পর্যন্ত হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু তেমন হয়নি।

মাঙ্কিপক্স কীভাবে ছড়ায়?

মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে থাকে। ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালীর মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ

মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। জ্বর কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।

মাঙ্কিপক্স থেকে নিরাপদ থাকার উপায়

আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারী উভয়ে মাস্ক ব্যবহার করা। সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া (৩০ সেকেন্ড ধরে)। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান/জীবাণুনাশক/ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা। আক্রান্ত জীবিত/মৃত বন্যপ্রাণী অথবা প্রাকৃতিক পোষক (যেমন-ইঁদুর, কাঠবিড়ালী, খরগোশ) থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা। 

তবে সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী (যেমন-গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, মহিষ) থেকে এ রোগ ছড়ায় না। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫