Logo
×

Follow Us

স্বাস্থ্য

মৃগী রোগীর নাকে জুতা ধরা কি ঠিক?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬

মৃগী রোগীর নাকে জুতা ধরা কি ঠিক?

মৃগী রোগীের প্রতীকী ছবি

মৃগী রোগীর খিঁচুনি হলে নাকে চামড়ার জুতা ধরার প্রচলিত ধারণাটি বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই পরিচিত। ধারণাটি এমন যে, চামড়াজাত জিনিসের গন্ধে মৃগী রোগীর খিঁচুনি থেমে যায়। এ ধারণার প্রতি বিশ্বাস এতটাই গভীর যে, রাস্তায় কারো খিঁচুনি দেখা গেলে আশপাশের মানুষজন দ্রুত চামড়ার জুতা বা বেল্ট রোগীর নাকে ধরার চেষ্টা করে। আবার কখনো কখনো এ ধরনের রোগীর মুখে কাঠি, কলম বা চামচ ইত্যাদি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে রোগী জিহ্বা কামড়ে না ধরে।

মৃগী রোগের ব্যাপারে সচেতনতা বিষয়ে ভারতে ৪২টি স্কুলের প্রায় ৪০০ শিক্ষকের ওপর আট মাসের একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপে ৪০ শতাংশ স্কুল শিক্ষক মনে করেন মৃগী রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে চামড়ার জুতা বা পেঁয়াজের গন্ধ নেওয়া উপকারী। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এই প্রচলিত পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর নিউরোটেকনোলজির নির্বাহী পরিচালক স্নায়ুবিজ্ঞানী এরিক চুডলারের একটি ব্লগে লেখেন, খিঁচুনির সময় মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি হয়। এ কারণে মৃগী রোগকে কখনো কখনো ‘বৈদ্যুতিক ব্রেন স্টর্ম’ বলা হয়। খিঁচুনি চলাকালে মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিন্তা, নড়াচড়া, দেখা ও শোনার মতো কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এই খিঁচুনির তীব্রতা প্রতিরোধ বা কমানোর জন্য বিভিন্ন উপায় চেষ্টা করেছে। মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খিঁচুনি উপশমে বর্তমানে অনেক কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায়। 

হারিন্দার জাসেজা নামে ভারতীয় চিকিৎসকের একটি নিবন্ধের বরাত দিয়ে এরিক চুডলার জানান, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মৃগী রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় জুতার ঘ্রাণ শুকতে দেওয়া হয়। পদ্ধতিটি অবৈজ্ঞানিক ও উদ্ভট। ভারতের শীর্ষস্থানীয় স্নায়ু বিশেষজ্ঞ নির্মল সূর্য বলেন, খিঁচুনির সময় রোগীর নাকে পেঁয়াজ বা জুতা ধরার পরামর্শটির কোনো ভিত্তি নেই। আবার অনেক সময় মৃগী রোগীর হাতে ধাতব বস্তু ধরিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো অযৌক্তিক সংস্কার। 

বাংলাদেশে এমন কোনো জরিপ পাওয়া না গেলেও মানুষের মধ্যে যে এ ধারণা বিদ্যমান, সেটির প্রমাণ পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০২১ সালে মৃগী রোগীকে চামড়ার জুতার ঘ্রাণ নিতে দেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। যেখানে দেখা যায়, রাস্তায় এক ব্যক্তির খিঁচুনি উঠেছে। ব্যক্তিটি রাস্তায় পড়ে আছেন। আশপাশের মানুষজন তার নাকে জুতা, চামড়ার বেল্ট ধরার চেষ্টা করছেন। কেবল সাধারণ মানুষ নন, জনপ্রিয় বলিউড সিনেমা ‘দঙ্গল’-এর তারকা ফাতেমা সানা শেখকেও খিঁচুনি উপশমে চামড়ার জুতার ঘ্রাণ নিতে দেওয়া হয়েছিল। ভক্তদের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে ২০২২ সালে এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। 

বাংলাদেশের স্নায়ুবিশেষজ্ঞ শাখাওয়াত এমরান বলেন, মৃগী রোগীর খিঁচুনির সময় জুতা বা চামড়াজাত দ্রব্য ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। এ ধরনের পদ্ধতি রোগীর জিহ্বা কেটে যাওয়া রোধ করার জন্য প্রচলিত হলেও এটি আসলে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বহন করে না। বেশির ভাগ খিঁচুনি নিজে থেকেই কয়েক মিনিটের মধ্যে থেমে যায়। 

মৃগী রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে রোগীর পাশে থাকা, মাথার নিচে নরম কিছু দেওয়া, চশমা সরিয়ে ফেলা এবং মুখে কিছু না রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে চেপে ধরা বা তার নড়াচড়া বন্ধ করার চেষ্টা করা উচিত নয়। খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। খিঁচুনির সময় অযৌক্তিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করাই শ্রেয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫