
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকারি হাসপাতালে নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টদের অবদান বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা যাবে।
শুক্রবার বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা এবং নিয়োগদান’ শীর্ষক অংশীজন সভায় এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য একটি কাঠামো রয়েছে, কিন্তু ফার্মাসিস্টদের জন্য বিশেষ কোনো কাঠামো ছিল না। নতুন গাইডলাইনে হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্ট পদের সংস্থান রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ফার্মেসি কাউন্সিলের হাসপাতাল কমিটির সভাপতি এবং রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, “আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ ছাড়া গুণগত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়। আমাদের দেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধ সংরক্ষণ, ডিসপেন্সিং ও বিতরণ করা হয়, যা স্বাস্থ্যসেবার গুণগতমানের ক্ষেত্রে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা।”
তিনি আরও বলেন, “গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কার্যকর ভূমিকা স্বীকৃত হলে, ডাক্তার, নার্স ও ফার্মাসিস্টরা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।”
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন যে, ফার্মাসিস্টদের কাজ শুধুমাত্র ওষুধ বিতরণ নয়, বরং রোগীদের চিকিৎসায় প্রাথমিক পরামর্শ, ওষুধের সঠিক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের ভূমিকা আরও কার্যকর করা প্রয়োজন।
সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান জানান, বর্তমানে ৬০০ শয্যার একটি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের জন্য ছয়টি পদ বরাদ্দ রয়েছে, তবে এই পদগুলো ‘ব্লক পদ’ হওয়ায় পদোন্নতির সুযোগ নেই। তিনি ভবিষ্যতে এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
ফার্মেসি কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, “চিকিৎসকরা সাধারণত চান না তাদের প্রেসক্রিপশনে কেউ হস্তক্ষেপ করুক, কিন্তু এই মানসিকতা ভাঙতে হবে। অন্তত হাসপাতাল পর্যায়ে ফার্মাসিস্টদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে।”
স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পাঠ্যক্রম ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন অংশীজন সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার সায়েদুর রহমান।
“শিক্ষার্থীদের এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন তারা বুঝতে পারে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনো দোকানকে ‘ফার্মেসি’ বলা যায় না,” বলেন তিনি।
সভায় তিনি কমিউনিটি ফার্মাসিস্টদের অবদান তুলে ধরে বলেন, “অনেকে মনে করেন, ফার্মাসিস্ট কেবল দোকানে বসে থাকে, কিন্তু বাস্তবতা হলো অনেক মানুষ সেই দোকান থেকেই স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে। তাই তাদের অবদান অস্বীকার করা যাবে না।”
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্রগুলো হচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ওষুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিতরণ, ওষুধের তথ্য প্রদানে মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার, কমিউনিটি এবং হাসপাতালের ফার্মেসিতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষক, গবেষণা, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত টিম এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা।
হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান কমাচ্ছে এবং এই পরিস্থিতিতে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা বৃদ্ধি করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে বলে বক্তারা জানান।