Logo
×

Follow Us

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যসেবাকে ‘বাধ্যতামূলক অধিকার’ করার সুপারিশ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১৯:০৬

স্বাস্থ্যসেবাকে ‘বাধ্যতামূলক অধিকার’ করার সুপারিশ

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়।

স্বাস্থ্যসেবাকে সংবিধানে বাধ্যতামূলক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে কমিশনটি।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের মতে, সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য মানসম্মত, সহজলভ্য ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার দেওয়ার জোর দাবিতে কমিশন বলেছে, একটি দীর্ঘমেয়াদি, ন্যায্য ও টেকসই অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সংবিধান ও আইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা স্পষ্ট করা জরুরি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকে বাধ্যতামূলক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিলে এটি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্বে পরিণত হবে। তখন সীমিত সম্পদের মধ্যেও সরকার পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে, যাতে ধাপে ধাপে দেশের প্রতিটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা যায়।

কমিশন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এতে নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা আইনগতভাবে নিশ্চিত হবে এবং একটি শক্তিশালী আইনি ভিত্তি তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে টেকসই সংস্কারের পথ তৈরি করবে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে কমিশন জানিয়েছে, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রুয়ান্ডার মতো দেশে সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আলাদা আইন স্বাস্থ্যসেবায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। যেমন, থাইল্যান্ডে ‘ইউনিভার্সাল কাভারেজ স্কিম’ চালুর ফলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয়ের হার কমেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য বিনা খরচে চিকিৎসা চালু হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সাংবিধানিক স্বীকৃতিকে সময়োপযোগী মনে করছে কমিশন। তাদের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে।

শুধু সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথাই নয়, কমিশন একটি নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশও করেছে। ‘স্বাস্থ্য অর্থায়ন সুরক্ষা আইন’ নামে প্রস্তাবিত এই আইনের মাধ্যমে সরকারকে মোট জাতীয় আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ এবং বার্ষিক বাজেটের একটি ন্যূনতম অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাধ্যতামূলক করতে হবে।

এই আইনে তথ্য-প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনা, ব্যয়-সাশ্রয়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কৌশলগত ক্রয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কমিশনের ধারণা, আইনটি কার্যকর হলে সরকার, বেসরকারি খাত ও এনজিওদের সম্পদ সমন্বয়ের একটি কাঠামো গড়ে উঠবে।

কমিশনের ভাষায়, এখনই সময় স্বাস্থ্যকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করার। কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য অর্থায়ন কাঠামো গড়তে হলে স্বাস্থ্যসেবাকে সংবিধান, আইন ও কৌশলগত পরিকল্পনার কেন্দ্রে আনতেই হবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার।

প্রথম ধাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে গঠিত হয় আরও পাঁচটি কমিশন—স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যম খাতের সংস্কারের জন্য।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন—মোহাম্মদ জাকির হোসেন, লিয়াকত আলী, সায়েবা আক্তার, নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এস এম রেজা, মোজাহেরুল হক, আজহারুল ইসলাম খান, সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, সৈয়দ আতিকুল হক, আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফ।

২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর কমিশন গঠন করা হয় এবং ৩ ডিসেম্বর থেকে তারা কাজ শুরু করে। কমিশনের মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পর কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।


 



Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫