জরিপ: দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ চান বিনামূল্যে চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ০৯:৪৯

প্রতীকী ছবি
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের জরিপে স্বাস্থ্যসেবায় সাশ্রয়, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বৃদ্ধির পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন দেশের জনগণ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহায়তায় সম্প্রতি পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে চান, ৯৯ শতাংশ সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবার দাবি জানিয়েছেন। আর ৯২ শতাংশ মনে করেন স্বাস্থ্য ব্যয়ের বড় অংশ রাষ্ট্রের বহন করা উচিত।
সরকারি বিশেষায়িত, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবার মান সম্পর্কে জানতে দেশের আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার শহর এবং গ্রামের আট হাজার ২৫৬টি পরিবারের ওপর এই জরিপ পরিচালিত হয়।
এতে দেখা যায়, গত এক বছরে ৭৮.২ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন এমবিবিএস চিকিৎসকের কাছ থেকে। অন্যদিকে ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতার ওপর ৫.৭ শতাংশ, কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর ৪.৮ শতাংশ ও পল্লী চিকিৎসকের ওপর ৪.৭ শতাংশ জনগণের নির্ভরতা লক্ষণীয় ছিল জরিপে, যা চিকিৎসাসেবার সীমাবদ্ধতাকে ইঙ্গিত করে।
৯৭ শতাংশ নাগরিক ওষুধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসকের ফি ও অস্ত্রোপচারের খরচ নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন। একইভাবে ৯৩ শতাংশ স্বাস্থ্যকার্ড চালুর পক্ষে, ৯২ শতাংশ শহরাঞ্চলে ইউনিয়ন পর্যায়ের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চান এবং ৭১ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণে আগ্রহী।
জরিপে চিকিৎসার মান নিয়েও এসেছে গুরুত্বপূর্ণ মতামত। ৬৮ শতাংশ মানুষ চান এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া কেউ যেন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে না পারেন।
৭২ শতাংশ মানুষ মনে করেন একজন রোগীর জন্য ডাক্তারের কমপক্ষে ১০–২০ মিনিট সময় দেওয়া উচিত।
বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা পেতে প্রথমে প্রাথমিক সেবাদানকারী এমবিবিএস বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে রেফারেল নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মত দেন ৭২ শতাংশ মানুষ।
এছাড়া স্বাস্থ্যহানিকর খাবার ও পানীয়ের ওপর উচ্চ কর আরোপ চান ৭৯ শতাংশ মানুষ।
জরিপে জনগণের পাশাপাশি চিকিৎসকদের মতামত থেকেও উঠে এসেছে কাঠামোগত সংস্কারের দাবি।
চিকিৎসক ও ব্যবস্থাপকদের মধ্যে ৬১ শতাংশ স্বতন্ত্র বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস গঠনের পক্ষে এবং ৯৮ শতাংশ চান প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
৮২ শতাংশ চিকিৎসক কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার উন্নয়নের কথা বলেছেন, ৯০ শতাংশ সময়মতো পদোন্নতির পক্ষে এবং ৭৮ শতাংশ চান প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি।
চিকিৎসা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমকে আলাদা কাঠামোয় পরিচালনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭২ শতাংশ।
হাসপাতাল ও মেডিকেল-নার্সিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনের বাইরে গিয়ে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে মত দেন ৬৬ শতাংশ মানুষ।
প্রশাসনিক ও আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে ৬৪ শতাংশ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে ৭৬ শতাংশ এবং সহায়ক পদে বদলির পক্ষে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মত জানান।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একীভূত কাঠামোর পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৭ শতাংশ।
জরিপের ফলাফল বলছে, জনগণের প্রত্যাশা এখন আর শুধু চিকিৎসা নয়—সাশ্রয়ী, মানবিক ও সুশাসিত একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যা রাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যখাতের সমন্বিত সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।