
দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বা এক কোটি ৮২ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক বলে পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে বংশগত এই রক্তরোগ প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতার প্রয়োজন। না হলে ভবিষ্যতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২০ শিশুর জন্ম হয় এই রক্তরোগ নিয়ে। এক দশক আগেও যা ছিল ১০-এর নিচে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জরিপ মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক।
গ্রামীণ এলাকায় বাহকের হার ১১.৬ শতাংশ, আর শহরে ১১ শতাংশ। বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি বাহক রংপুরে-২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর রাজশাহী (১১.৩ শতাংশ) ও চট্টগ্রাম (১১.২ শতাংশ)। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম বাহক সিলেটে—মাত্র ৪.৮ শতাংশ।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১১.৯ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ১২ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১০.৩ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক।
মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। এতে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না। ফলে ক্লান্তি, ত্বক ফ্যাকাসে হওয়া, জন্ডিসসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।”
তিনি আরও বলেন, যদি দুইজন বাহক পরস্পরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগী হয়ে জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি থাকে ২৫ শতাংশ। বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।
“অন্যদিকে এক পক্ষ বাহক হলে সন্তানের বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। কারণ বাহকেরা নিজেরা রোগে আক্রান্ত না হলেও তাদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে বাহকেরা সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান জানান, “একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর মাসিক চিকিৎসা ব্যয় কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকা। অনেক পরিবার এই ব্যয় বহনে হিমশিম খায়। রোগীরা অনেক সময় সামাজিক অবহেলাও ভোগ করেন।”
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সার্বজনীন স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সামাজিক সচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও চিকিৎসা সুবিধা আরও বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সময়মতো সচেতনতা এবং প্রতিরোধই হতে পারে এই আজীবন রক্তরোগ মোকাবিলার প্রধান হাতিয়ার।
এদিকে সারা বিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি।’
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।