অলসতা মানুষকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। কারণ অলস মানুষ সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারে না। অনেক দিন ধরে আলসেমি স্বভাব চলতে থাকলে, এক সময় প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মস্পৃহা হারিয়ে যায়। তাই অলসতাকে দূরে ঠেলে, নিজের মধ্যে উদ্যম নিয়ে আসা জরুরি।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে আলসেমি দূর করার উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে।

কাজের নেতিবাচক দিকগুলোকে উপেক্ষা

ক্রীড়া মনোবিদ ইয়ান টেইলরের মতে মানুষ অনেক সময় মনে করে ইচ্ছাশক্তিই সবকিছু কিন্তু এটি সঠিক নয় বলেই মনে করেন তিনি। তিনি বলেন,"ইচ্ছাশক্তি বা আত্মনিয়ন্ত্রণ এক ধরণের মোটিভেশন কিন্তু এটিই সর্বোত্তম নয়,"। তাই শুধু ইচ্ছা শক্তির ওপর নির্ভর না করে তিনি কাজের খারাপ দিকটিকে উপেক্ষা করাই শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি।

ফেলে রাখা কাজে ইতিবাচকতা খুঁজুন

ব্যর্থতার ভয় থেকে কাজ ফেলে রাখছেন? শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুসচিয়া সিরোইস বলছেন, আলস্য বা সময় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা সমস্যা নয়। তিনি বলেন,"আপনি যদি উদ্বিগ্ন হন এই ভেবে যে, আপনি ব্যর্থ হবেন তাহলে কাজ ফেলে রাখার যুক্তি তৈরি হবে"। কাজ ফেলে রাখলে ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়বে। আপনার উদ্বিগ্নতা বাড়বে। তাই ফেলে রাখা কাজকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করুন।

অগ্রিম পরিকল্পনা

আপনার মধ্যে যদি আলসেমি প্রবণতা তৈরি হতে পারে বলে ধারণা জন্মে, তাহলে কাজের পূর্ব পরিকল্পনা করুন। সামনের সপ্তাহের কোনো কাজ কিংবা মিটিং দু একদিনের মধ্যে সেরে ফেলুন।

আমেরিকান মনোবিদ পিটার গলউইটজার এ কৌশলের ওপর ৯৪টি সমীক্ষা পর্যালোচনা করেন। তাঁর মতে যারা কৌশলটি অনুসরণ করে তারা অন্যদের চেয়ে লক্ষ্য অর্জনে ২/৩গুণ বেশি দৃঢ় থাকে।

চাপ কমান

সফল হতে হলে যতটা সম্ভব সহজভাবে কাজ করুন। সকালে শরীরচর্চা কিংবা দৌড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে আগেই পোশাক ঠিক করে রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর জন্য আগে থেকে এলার্ম দিয়ে রাখুন। এতে আপনি মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকবেন।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইটলিন য়ুলির নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তাৎক্ষণিক পুরষ্কার কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করে। জটিল কাজ ফেলে রাখা থেকেই আলসেমি শুরু হয়। তাই এর বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে যথাসময়ে নিজেকে নিজে কাজের পুরষ্কার দেওয়া।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে জিমে ব্যায়াম করার সময় অডিও বুকস দিলে তা ভালো কাজ করে। অর্থাৎ সেই তাৎক্ষণিক পুরষ্কার।

বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি

অনেকে ভাবেন কাজটি শেষ করার জন্য অনেক সময় আছে। নিজেকে গোছানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে। এমন চিন্তা মানুষকে অনেকটা অলস করে তোলে। তাই এমনটা না ভেবে, বাস্তবসম্মত চিন্তা করুন। কোন কাজে কতটা সময় লাগবে তার যৌক্তিকতা খুঁজুন। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করুন।

নিজের প্রতি সদয়

যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পড়া ঝালিয়ে নিতে পারেনি তাদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আলসেমির কারণে নিজেকে ক্ষমা করে দেয় তারা পরবর্তী সময়ে ভালো করে।

সিরোইস বলছেন আমরা নিজের ওপর মাঝে মধ্যে যতটা নির্দয় হই, বন্ধুদের ওপরও ততটা হতে পারিনা। তাই আমাদের নিজেদের প্রতিও কিছুটা সহমর্মিতা দেখানো উচিত।