
মদ্যপানে কিছু উপযোগিতাও আছে। মন হালকা করে, ঘুম নিয়ে আসে, হৃদযন্ত্র ভাল রাখে, উপকারি কোলেস্টেরল বাড়ায়।
তবে এই উপকারের সবটাই লুকিয়ে আছে মাত্রাজ্ঞানের উপর। মদে খুব চট করে আসক্তি তৈরি হয়ে যায়। তাই অনেকেই মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন না।
আরো বড় কথা, মদে যে সব উপকার হয়, সেই সব উপকার পাওয়ার বিকল্প পথও আছে।
মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে বলা হয়, নিয়মিত শরীরচর্চা ও সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি এক গ্লাস করে রেড ওয়াইন খেলে হৃদযন্ত্র ভাল থাকে। কিন্তু পরে জানা যায়, এটি যত না রেড ওয়াইনের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি পর্যাপ্ত ফল, ও শাকসবজি খাওয়ার জন্য।
রেড ওয়াইন খেলে উপকারি কোলেস্টেরল বাড়ে। এর কারণ কিছু অ্যান্টিক্সিডেন্ট। সেগুলো শাকসবজি ও ফলেও আছে, আছে আঙুরের রসেও। কাজেই রেড ওয়াইন না খেয়ে এসব খেতে পারেন।
মদে আছে রেসভারেট্রল, যা রক্তনালিতে চর্বি জমা কমায়। তাই হৃদরোগের আশঙ্কা কমে। তবে এর জন্যও মদ্যপানের দরকার নেই। চিকিৎসক যদি মনে করেন, এমন কিছু ঘটছে, তিনি অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে তা সামলে দেবেন।
হালকা মদ্যপানে মানসিক চাপ কমে অনেকের। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত, রিল্যাক্সেশন থেরাপি এই কাজে আরো বেশি কার্যকর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নিয়মিত মদ্যপান করলে রক্তচাপ ও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বাড়তে পারে, ক্যালোরি বেড়ে যায় ও ওজন বাড়ে। বাড়ে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা ও ইস্কিমিক হৃদরোগের আশঙ্কাও বাড়ে।
বেশি মদ্যপান হার্টরেট এলোমেলো করে দিতে পারে। হঠাৎ খুব বেশি মদ্যপান করলে আশঙ্কা বাড়ে হৃদরোগের। মদ্যপানের সাথে চর্বি, তেল-মশলায় ভরপুর খাবার যুক্ত হলে বাড়ে হঠাৎ হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা। ছুটিছাটার দিনে এই সমস্যা বেশি দেখা যায় বলে, একে ‘হলিডে হার্ট সিনড্রোম’ও বলে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু বলেন, গর্ভাবস্থায় মাত্রাছাড়া মদ্যপান করলে সন্তানের নানারকম জটিল সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হল হৃদরোগ।
শরীরে সহ্য হলে এক-আধ পেগ মদ্যপান করতে পারেন। মানসিক চাপ কমাতে, উপকারি এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে, হার্টের ধমনিতে চর্বি জমার হার কমাতে এর ভূমিকা আছে। অভ্যাস না থাকলে হৃদযন্ত্র ভাল রাখার খাতিরে, নতুন করে মদ শুরু করার দরকার নেই। সঠিক খাবার ও ব্যায়ামেও হৃদযন্ত্র ভাল থাকে। -আনন্দবাজার পত্রিকা