আমরা যখন কোনো খাবার খাই তখন তা পরিপাকের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। পরিপাকতন্ত্রের অন্যতম অঙ্গ হলো লিভার বা যকৃত। খাবার খাওয়ার পর লিভারে তা পরিবর্তন, পরিশোধন ও সংরক্ষণের কাজ হয়। লিভারে অনেক ধরনের কাজ হয় বলে একে শরীরের ল্যাবরেটারি বা গবেষণাগার বলা হয়।
ফ্যাটি লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে লিভার ক্যানসার, সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে। কিছুক্ষণ ব্যায়াম, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানোর মাধ্যমেই সমস্যা দূর করা হবে সম্ভব। অহেতুক চিন্তা নয়। চলুন জেনে নেই ফ্যাটি লিভার কেন হয়, এর লক্ষণ এবং কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে খুব সহজেই এই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
ফ্যাটি লিভার কী
প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরি গ্রহণ করার ফলে তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমা হতে থাকে। যদি অতিরিক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে চর্বি জমতে থাকে, তখন লিভার চর্বিতে ভারী হয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারে যত ধরনের রোগ হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলা ফ্যাটি লিভার। সাধারণ লোকের মধ্যে শতকরা ২৫ জনের ফ্যাটি লিভার রয়েছে।
ফ্যাটি লিভার নিয়ে যা জানা প্রয়োজন
অনেকের ধারণা অ্যালকোহল গ্রহণ করলেই লিভার খারাপ হতে পারে। আসলে তা নয়। বিভিন্ন কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। লিভারে জমা চর্বি থেকে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তাকে বলে নন অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা ন্যাশ। ন্যাশ আক্রান্ত রোগীর রোগ আরও তীব্র হলে লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যানসার হতে পারে। এজন্য ফ্যাটিলিভার অসুখটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
যদি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের মান উন্নত করা না যায়, তাহলে ফ্যাটি লিভারের কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগে না। এ ক্ষেত্রে রোগীদের ওজন কমিয়ে আদর্শ ওজনে নিয়ে আসতে হবে। কারণ অধিক ওজনের ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। এতে শরীরের কোষে সংরক্ষিত চর্বি ভেঙে মুক্ত ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। লিভার এ ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করে নিজের ভেতর জমা করতে থাকে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষা পেতে হলে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে। ডায়াবেটিস ও রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন স্বাভাবিক রাখতে হবে। অর্থাৎ বিএমআই ১৮.৫-২৪.৫-এর মধ্যে রাখতে হবে। তবে দ্রুত ওজন না কমিয়ে ধীরে ধীরে কমালেই ভালো। শরীরে ওজন ৩-৫ শতাংশ কমালে ফ্যাটি লিভার থেকে সৃষ্ট ফাইব্রোসিস ভালো হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে ১ কেজির মতো কমাতে পারলে ভালো হয়। মনে রাখতে হবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে শরীর চর্চাও জরুরি।
লেখক : আখতারুন নাহার আলো, চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম।
সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh