Logo
×

Follow Us

স্বাস্থ্য

ওসিডি নিয়ে হেলাফেলা নয়

Icon

লাবণী মণ্ডল

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১৬:৫৯

ওসিডি নিয়ে হেলাফেলা নয়

ওসিডি বা শুচিবাই এক ধরনের মানসিক রোগ। প্রতীকী ছবি

অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই এক ধরনের মানসিক রোগ এবং তা আমাদের খুব পরিচিত। তবে ওসিডি বলতে শুধু শুচিবাই বোঝায় না। ওসিডির অনেক ধরন আছে। রিপিটেটিভ থট বা একই চিন্তা বারবার আসা এবং সেই চিন্তা এমনভাবে আসে যেন মনে হয়, তা জোর করে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সেই চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে আক্রান্ত ব্যক্তির অস্বস্তি হয়। এর প্রভাবে তিনি কিছু কাজ করেন, যা কিছু নির্দিষ্ট আচরণে প্রকাশ পায়। এটিকে বলা হয় কম্পালসিভ বিহেভিয়ার। বাধ্য হয়ে তিনি সেই কাজটা করছেন, না করে থাকতে পারছেন না। তার অস্বস্তি লাগে। এটি খুব সাধারণ কয়েকটি অসুস্থতার মধ্যে একটি। এ ধরনের অসুস্থতা যে কোনো বয়সে হতে পারে।

অনেকে এমন সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তারা সমস্যা শুরুর প্রথম দিকেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে আসেন। আবার অনেকে আছেন যারা ১০-১২ বছর পর আসেন। তারা হয়তো ওষুধ নিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত বিহেভিয়ারিয়াল থেরাপি বা আচরণগত চিকিৎসা প্রয়োজন। ওষুধ নিলে রোগীদের মধ্যে যে অস্বস্তি বা রেস্টলেসনেস রয়েছে, তা একটু দমে যায়, একটু স্বস্তি বোধ কাজ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির একই চিন্তা বারবার আসা বা বাধ্যতামূলক আচরণ কমানোর জন্য বিহেভিয়ারাল থেরাপি প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে একই আচরণ অনুশীলনের ফলে এটি অভ্যাসে রূপান্তর হয়ে যায়। তখন তিনি বাধ্য হয়ে ওই কাজটি করতে থাকেন। এ থেকে বিরত রাখতে ভিন্ন আচরণের কৌশল চর্চার মাধ্যমে তার অভ্যাসগত পরিবর্তনে কাজ করতে হয়। দীর্ঘসময় ধরে এ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তা পরিবর্তন করা সম্ভব।

ওসিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোগের প্রথমদিকে গুরুত্ব দেন না। এ নিয়ে নানা বুলিংয়েরও শিকার হয়ে থাকেন অনেকে। যেমন একই কাজ বারবার করতে দেখলে পরিবার বিরক্ত হয়ে যায়। ছোটবেলায় এ সমস্যা হলে খুব বেশি নজরে পড়ে না। মানুষ জোর করে বা বকাবকি করে। তবে এতে সমাধান হয় না; বরং আরও বাড়ে। ওই মানুষটি তো ইচ্ছাকৃতভাবে তা করছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ হয়তো দরজা-জানালা বন্ধ করছেন বাইরে যাওয়ার আগে; কিন্তু মনে হলো আবার একটু দেখে আসি। সাধারণভাবে কেউ বাইরে যাওয়ার আগে চেক করতে পারেন। যখনই তিনি একই কাজ বারবার করেন, বুঝতে হবে, এটি ‘চেকিং প্রবলেম’। ওসিডির লক্ষণ।

আবার অনেকে সব বিষয়ে সন্দেহ করেন। তিনি নিজের ওপর আস্থা পান না। কোনো কাজ করলেই আশপাশের মানুষ থেকে নিশ্চয়তা চান। বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকেন-আমি যে কাজটা করেছি, তা ঠিক হয়েছে কিনা। অনেক সময় আশপাশের মানুষ তাকে বোঝানোর জন্য বা বিরক্ত হয়ে ‘হ্যাঁ’ বলেন। এটি তার সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়গুলো অনেক সময় গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ওসিডি বা শুচিবাইকে খুব সাধারণ বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মধ্য দিয়ে যে মানুষটি এ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাকে কেউ বুঝতে পারে না। সাইকো থেরাপির মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ধীরে ধীরে কিছু আচরণগত পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তার অস্থিরতা কমানো সম্ভব। শুরুতে তা শনাক্ত করা গেলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শিশুদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যার উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে কোনো চাইল্ড সাইকোলজিস্টকে দেখানো যেতে পারে। মনের অসুখ, শরীরের অন্য যে কোনো অসুখের মতোই। যত দ্রুত শনাক্ত হবে, তত দ্রুত আরোগ্য সম্ভব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫