বরিশালে ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত

বরিশালে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়া, বমি এবং জ্বর কমে যাওয়ার পরও রোগীর শরীরে ভাইরাস থেকে যাওয়ার কারণ হিসেবে নতুন ভ্যারিয়েন্টকে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা। আর এমন রোগীর সংখ্যা শতকরা ৮৭ ভাগ। যারা সবাই গ্রাম অঞ্চলের মানুষ।

তাছাড়া ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার লার্ভার উৎপত্তিস্থলেরও পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পূর্বে নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় লার্ভা পেলেও এখন নতুন নতুন জায়গায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের এক গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের নতুন ধরণ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের তথ্য মতে, ‘বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগি চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন সরকারি হাসপাতালে। এপর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬ জন।

সবশেষ গত ১২ অক্টোবর বরিশাল শের—ই—বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় দু’জন নারীর। তারা হলেন— পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সূর্যমণি গ্রামের মো. ইউসুফ এর স্ত্রী অজুফা বেগম (৪৫) ও পিরোজপুর মঠবাড়িয়ার মো. চুন্নু মিয়ার স্ত্রী কহিনুর বেগম (৪০)।

তাছাড়া রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৩২ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩১৯ জন ডেঙ্গু রোগী।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, ‘গত সেপ্টেম্বর এবং চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে সর্বোচ্চ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া চলতি মাসেই মৃত্যু হয় ৮ জনের। আর এ দুই মাসে আক্রান্তও হয়েছে সর্বোচ্চ। তার ওপর নতুন ভ্যারিয়েন্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রেজওয়ানুর আলম জানান, ‘মূলত রোগীর রোগ থেকে ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয় করে থাকেন তারা। তিনি বলেন, এবার বেশিরভাগ রোগী ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এদের জ্বর কম সময় থাকলেও ডায়রিয়া, বমি ও তীব্র মাথাব্যথা থেকে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। রোগ সেরে যাওয়ার পরও রোগীর শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে। এটা ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে হতে পারে। এটা এখন গবেষণার বিষয়।

এদিকে, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের তথ্য মতে, সম্প্রতি বরিশাল বিভাগের ১০টি পয়েন্টে এডিস মশার লার্ভার সন্ধানে গবেষণা কাজ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নির্ণয় বিভাগ। এসময় বরগুনা এবং পটুয়াখালীর ছয়টি পয়েন্টেই এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পেয়েছে তারা।

গবেষণায় জিজ্ঞাসা করুন নেওয়া বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ মাহফুজা পারভীন জানান, ‘আগে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় কিংবা টিনের চালে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যেতো। এখন কেটে ফেলা গাছের গর্তে জমে থাকা খোলা স্বচ্ছ পানিতেও লার্ভা মিলছে।

তিনি বলেন, ‘গবেষণার সময় এমন বাড়িও পেয়েছি যেখানে তিন থেকে চার স্থানে এডিস মশার লার্ভা ছিল। আমরা আগে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে জমে থাকা পানিতে লার্ভা পেতাম, এবারে সদ্য কেটে ফেলা নারিকেল গাছের গর্তে জমে থাকা পানিতেও লার্ভা পেয়েছি। লার্ভা মেরে ফেলার বিষয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী মধ্যে অবহেলা ও অলসতা রয়েছে। তারা সঠিক নিয়মে পানি পরিস্কার করছে না বিধায় এডিস মশার প্রজনন ঘটছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, গবেষণায় বরিশালে এডিস মশার উপস্থিতি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে এবার অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসার থেকেও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাছাড়া নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh