
আধবুড়ো শরীর নিয়ে শিশুসুলভ আচরণের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত কমেডিয়ান মিস্টার বিন। তাকে দিয়েই এবার করোনা নিয়ে আতঙ্কিত বিশ্বকে সচেতন করার প্রচার শুরু করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ভাইরাস মোকাবেলায় কী করবেন, কী করবেন না, তা নিয়েই প্রচারে মিস্টার বিনের চরিত্রাভিনেতা রোয়ান অ্যাটকিনসনের কণ্ঠ এবং কার্টুন ব্যবহার করা হচ্ছে।
হাত ধোওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে ওই কার্টুন। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, তাও জানাচ্ছেন বিন। তিনি বলছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, সদয় হোন।
মিস্টার বিন নামটি শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন হবে। কেননা একজন অভিনেতা তার অভিনয় ক্ষমতার মাধ্যমে এই নামটিকে তৈরি করেছেন ব্র্যান্ড হিসেবে। আর এই ব্র্যান্ডের আড়ালে সেই অভিনেতার যে আসল নাম ঢাকা পড়ে গেছে, তা হচ্ছে রোয়ান অ্যাটকিনসন। বর্তমানে যেসব শিল্পী নির্বাক ছবিতে অভিনয় করে সবাক যুগের মানুষকে অবাক করে যাচ্ছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের ডুরহাম বিভাগের কনসেটে জন্মগ্রহণ করেন মিস্টার বিন। তার পুরো নাম রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন হলেও ডাক নাম রো। তার বাবার নাম এরিক অ্যাটকিনসন এবং মায়ের নাম এলা মে। তার বাবা একজন কৃষক এবং একটি কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মিস্টার বিন। ১৯৯০ সালে মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের সংসারে রয়েছে দুটি সন্তান- বেন এবং লিলি।
মিস্টার বিন একজন ব্রিটিশ লেখক এবং কমেডিয়ান। তবে তিনি সুপরিচিত মিস্টার বিন, ব্যঙ্গরচনা এবং স্কেচ শোর জন্য। তিনি ছাত্রজীবনে চার্লি চ্যাপলিনসহ অন্যান্য কমেডি অভিনেতাদের মুভিগুলো দেখতেন এবং নিজের অজান্তেই তাদের নকল করা শুরু করেন। এক সময় মঞ্চের পেছনে কাজ করা শুরু করেন। এরপর পেছন থেকে চলে আসেন মূল মঞ্চে। অভিনয় করা কিংবা কমেডিয়ান হওয়া কোনটিই মিস্টার বিনের লক্ষ্য ছিল না।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে পরিচয় হয় মিস্টার বিনের। রিচার্ড কার্টিস ছিলেন একজন নাট্যকার ও গীতিনাট্য অভিনেতা। রিচার্ড কার্টিস ও রোয়ান অ্যাটকিনসন মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন ‘অক্সফোর্ড নাট্যশালা’। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে নাটক লেখাও শুরু করেন। সেইসঙ্গে কমেডি নাটকে অভিনয়। এ ছাড়া তারা একসঙ্গে বিবিসি রেডিও থ্রিতে ‘দ্য অ্যাটকিনসন পিপল’ নামের একটি স্যাটারিক্যাল ইন্টারভিউধর্মী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতেন।
১৯৭৯ সালে তার লেখা স্কেচ কমেডি শো ‘নট দ্য নাইট ও ক্লোক নিউজ’ নামের বইয়ের মাধ্যমে পাঠক হৃদয়ে বেশ ভালোভাবে জায়গা করে নেন। পরবর্তীতে এই বই থেকে টিভি কমিক অনুষ্ঠান তৈরি করা হয় এবং তাতে অভিনয় করেন স্বয়ং রোয়ান অ্যাটকিনসন। নব্বই দশকের প্রথম দিকে মিস্টার বিন সিরিজ টিভিতে শুরু হয়।
মিস্টার বিনের প্রথম পর্ব প্রচারিত হয় ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি। মিস্টার বিনের নাম প্রথমে ছিল মিস্টার হোয়াইট। পরে তার নাম হয় মিস্টার বিন। এরপর থেকে টানা বিশ বছর এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মিস্টার বিন নিয়ে সিনেমা, এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।