-670cfebfde6f5.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
জীবনে আনন্দ খুঁজে পেতে বড় কোনো উৎস লাগে না। আমাদের জীবনে
আনন্দ সবটাই নিজের চাওয়া যা কেউ বয়ে আনে না । আমি সর্বদাই চেষ্টা করি সব কাজ
আনন্দের সাথে শেষ করতে। যখন মন চায় না কাজ করতে তখন কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিয়ে
আবার কাজে ফিরে যাই। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা প্রতিটি কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে
সেই কাজ আনন্দের সাথে এবং ভালোভাবে করা যায়।
জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবো প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করে কাটাতে চাই।
আমার মনে হয়, পৃথিবীতে মানুষের উচিত প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের
সঙ্গে উদযাপন করার। কারণ তখনই বিষন্নতার আগমন ঘটে যখন আমরা মনে করি মানুষ অনেক সুখি এবং তার জীবনে বোধহয় সবকিছু নিয়ে ভালো আছে আমাদের তুলনায়।
আমাদের মনে করা উচিত পৃথিবীতে সর্বদাই সুখি কেউ না কিন্তু জীবনটা একমাত্র নিজের তাই নিজেকে সবার আগে ভালবাসতে জানতে হবে। নিজের সুখ নিজের খুঁজে নিতে হবে। কারণ আপনি কী করলে ভালো থাকবেন সেটি একমাত্র আপনিই ভালো বুঝবেন।
আপনার জীবনের সঙ্গে সবার জীবনের কাহিনি এবং গল্প এক হবে না, মিলবে না। তাই নিজের সম্ভাবনাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। অন্যের জীবনে কী অর্জন করল এবং
কেন তারা খুব সুখি এসব চিন্তা না করে আসুন আমরা নিজেদের জীবনটা
ফুলের বাগানের মতোই সাজাই।
সুখি হওয়ার ছোট একটি উপায় বলি, সবসময় সরল, ক্ষুদ্র জিনিসে
আনন্দ খুঁজে নেবেন। তারপর দিনশেষে দেখবে খুচরো আনন্দে ঝুলি ভরে গেছে। আমি সব
সময় ক্ষুদ্র জিনিস এ আনন্দ খুঁজে পাই। যেমন নিত্য নতুন যতই শাড়ি হোক মায়ের শাড়ি
আবেদনটাই আলাদা। ভাঁজে ভাঁজে মায়ের গায়ের ঘ্রাণ আদর সবটুকু গায়ে জড়িয়ে নেওয়া যায়।
মায়ের শাড়ি মমতায় জড়িয়ে রাখে।
আমি সারাদিন কাজের জন্য যেখানেই থাকি বাসায় ফিরে আম্মুর রুমে ঢুকি। বিছানায় একটা গড়াগড়ি খাই আম্মুর কোলে মাথা গুঁজে থাকি। তখন নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখি মানুষ মনে হয়, সৌভাগ্যও। ঘরের বাইরে লণ্ডভণ্ড হলেও, ঘরের ভেতর কী বেহেস্তের শান্তি, নিজের ঘরের মতো শান্তি আর কোথাও নেই।
গাছের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালো লাগে। আমি যা করি ভালোবেসে করি যেমন
ছবি যখন তুলি তখন আমার মাথায় একটা জিনিসই থাকে, আমি এই মুহূর্তে যেই সৌন্দর্যটা দেখছি সেটা
সবাইকে দেখাইতে চাই। ঘর সাজানোর ক্ষেত্রেও তাই। নিজের রুচিবোধের ভিত্তিতে সাজাই।
কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই আমার। শান্তির নীড় হচ্ছে ঘর। আমার ঘর সাজিয়েছি কিন্তু মায়া
দিয়ে।
আমার গাছগুলোর কথা কী বলবো? আমার মাঝে মাঝে মনে হয়
গাছগুলো নিজেরাই আমার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আমার অতি অল্প আদরেই তারা হেসে খেলে
ওঠে। আমার ভীষণ পছন্দের জায়গা আমার বারান্দা। তাই মন খারাপের মেঘলা বিকেলে আলো
ছায়ার খেলা দেখি বারান্দা থেকে। আমার ঘুরে ফিরে আলো লতাপাতা আর ফুলই ভালো লাগে।
ঘরের সব আলো নিভিয়ে ল্যাম্প জ্বালিয়ে হলুদ আলো দেখতে আর গান শুনতে ভীষণ ভালো লাগে।
অনেকেই আমাকে বলে আমার আপনার মতো সুন্দর বড় বারান্দা নেই, রোদ নেই, সুন্দর বাগান
করতে পারছি না। নিজের যেটুকু আছে সেটুকুই দিয়ে গাছগুলো ভালোবাসলে, যত্নে আগলে রাখলে দুহাত ভরে কখন ফিরে আসবে টেরই পাওয়া যাবে না। আমার কোন অভিযোগ নেই কারণ আদর আর
ভালবাসা পেয়ে গাছগুলো ভালোবাসা ফিরিয়ে দিচ্ছে।
গরমে বারান্দার জানালা দিয়ে বেহেশতি বাতাস আসে আমার ঘরে, রাতের বেলা জানালা না আটকালে ভোর রাতে গায়ে কাঁপুনি দিয়ে ঠান্ডা লাগে যত গরমে থাকুক। সকালের সময় জানালা দিয়ে আলো আর রোদ আসে। নরম রোদে নকশি কাঁথা বিছিয়ে প্রিয় বই পড়ি। এটিই আমার শান্তি। এই গরমে,নিজের জন্য একটু সময় আর ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর জীবনটা ভীষণ আনন্দময় করতে চাই। বারান্দা থেকে শীতের দিন শীত আর গরমের দিনে গরম বেশ ভালো উপভোগ করা যায়। যেমন শীতের দিনে সকালে গুড়ের চা হাতে নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর শীতের রোদ্দুর উপভোগ করি। তারপর মিষ্টি রোদের দুপুর বেলায় দুপুরের গরম ভাত খেয়ে ঘুমের বদলে মাদুর বিছিয়ে আরাম করে রোদে গা মেলি দিয়ে রোদ মাখি। সত্যি শীতের সোনালি দিনগুলোর কথা ভীষণ মনে পড়ে। গাছ ভরে ফুল আসতো। টবে ফুল উপচে পড়তো। বারান্দার জুড়ে রঙিন ফুলগুলো স্বাগতম জানাতো। রঙ্গিন ফুলগুলোর জন্যই আমি শীত ফিরে পেতে চাইব।
আবার কবে ফুল-রোদ্দুরে বাগান হেসে খেলে
উঠবে? বাচ্চারা কথা
বললে, হাঁটতে শিখলে
মায়েদের যেমন খুশি লাগে, আমার গাছে ফুল
এলে, নতুন কচি পাতা
গজালে আমার ঠিক তেমন আনন্দ হয়।
আমার বাগানের ঝরে পড়া মলিন ফুলগুলোকে তুলে যত্ন করে পানিতে
রাখি। একবারে ঝরে গেলে বইয়ের ভাঁজে অথবা কোনো বাক্সে তাদের আদরে রাখি।
আমার ঘরে সকাল-দুপুর আলোর বন্যা হয়। জানালার কাচ ছুঁয়ে আলো
বেয়ে পড়ে। আলোয় ঘরের মেঝে আয়না হয়ে যায়। সাদা মখমলে বিছানা আলোয় ডুবে যায়।
আমি এই আলো নিয়ে জীবনের আঁধার ঘুচাই। শীতের লুকোচুরি
রোদ্দুর আর উলের সোয়েটারের ওপর চাদর চাপিয়ে হেসেখেলে কাটানোর সময়গুলো আবার ফিরে
পেতে চাই। মাঝেমধ্যে কিছু সময় থাকে, মনে হয় বোতলবন্দি করে যত্নে তুলে রাখি। আজকাল
বৃষ্টিস্নাত দিন ভীষণ উপভোগ করছি। এমন বৃষ্টিস্নাত দিনগুলো হারাতে চাই না কারণ সবই যেন
অদ্ভুত মায়া জড়ানো। আয়েশ করে সকাল বা বিকেল উপভোগ করতে চাইলে একটা শতরঞ্জি, মাদুর বা নকশী
কাঁথা পেতে হাতে চা/কফি আর বই নিয়ে বসে পড়তে পারেন বারান্দায়।
আমার বাসা থেকে বের হয়ে কোথাও থাকতে ইচ্ছে করে না কারণ আমার নিজের হাতে সাজানো জিনিসগুলো এবং গাছ-ফুলগুলোর মায়া-ভালোবাসা বোধ করি সবসময়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এই ঘরখানা দেখি তখন প্রচণ্ড শূন্যতা কাজ করে। মনে হয় এরাও যেন অপলক দেখছে, অবাক হয়ে ভাবছে কেন ছেড়ে যাই!