
প্রতীকী ছবি
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে জামা-কাপড়-জুতো কেনাকাটা শেষ পর্যায়ে বলা যায়। প্রয়োজন এখন ঘর সাজানো-গোছানো। এ ঈদে নতুন করে নিজের ঘরটাকে সাজাতে চান অনেকে। শুধু সাজানোই নয়, ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।
বসার ঘর
পরিপাটি ঘর বলতে প্রথমে নজরে আসে বসার ঘরটি। তাই একটু বাড়তি নজর দিতে হবে এ ঘরের দিকে। ঘরের চতুষ্কোণ দেয়াল ও ছাদঝুল ধুলামুক্ত করুন। সাধারণত আপনি যা ব্যবহার করেন, সে জিনিস ভালো করে পরিষ্কার করে মুছে পরিপাটি করে আবার সাজিয়ে রাখুন। জায়গা বদল করে জিনিস রাখলে বৈচিত্র্য বাড়বে। তবে ব্যবহৃত কোনো পণ্যে ত্রুটি থাকলে সেটি ফেলে দিন। ঈদ উপলক্ষে ফুলদানিতে কিছু কাঁচা ফুল দিয়ে রাখলে তা ঘরে স্নিগ্ধতা ছড়াবে। নতুন রূপ দিতে চাইলে নতুন শো-পিস, দেয়ালে নতুন ঘড়ি, নতুন পেইন্টিং লাগিয়ে নিন। সোফার কভার নতুন করে লাগাতে পারেন। কভারের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন পর্দা নিতে পারেন। আড়ং, কে-ক্রাফ্ট, রঙ, অঞ্জনসের শোরুম বা শিশু একাডেমির সামনের দোকানগুলোয় পছন্দমতো পণ্যটি পেয়ে যাবেন। ঘর সাজানোর সময় মনে রাখবেন, অতিরিক্ত জিনিস দিয়ে ঘরকে গুদামের মতো বানিয়ে রাখবেন না। দৃষ্টিনন্দন ও আপনার রুচির সৌন্দর্য যেন প্রকাশ হয় সাজানোর মধ্য দিয়ে।
খাবার ঘর
খাবার ঘরটি অতিথিদের মন জয় করার জায়গা। তাই এ ঘরে শুধু সুন্দর করে খাবার পরিবেশনই নয়, আশপাশের আয়োজনও হওয়া চাই খাবারের মতো আকর্ষণীয়। নতুন টেবিলক্লথ বিছিয়ে দিন। কাপড়ের টেবিলক্লথ হলে ওপরে পাতলা ট্রান্সপারেন্ট পলিথিন ব্যবহার করুন খাবার পরিবেশনের আগে। কাচের গ্লাস টপ টেবিল হলে বিছিয়ে দিন টেবিল রানার, টেবিল ম্যাট ও ম্যাচিং ন্যাপকিন। টেবিলের মাঝখানে রেখে দিন আকর্ষণীয় ফলের ঝুড়ি, তাতে তাজা কিছু ফল রাখুন।
শোয়ার ঘর
শোয়ার ঘরকে নবরূপ দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় আসবাব এদিক-ওদিক সরিয়ে নতুনভাবে সাজিয়ে ফেলা। নতুন বিছানার চাদর, পর্দা, বালিশের কভার প্রভৃতি পরিবর্তনে শোয়ার ঘরটি হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। নতুন শতরঞ্জি কিংবা রাগ ফ্লোরে বিছিয়ে দিন। বিছানার পাশের সাইড টেবিলে রেখে দিন কিছু তাজা ফুল। কেবিনেটের কাপড় ঝেড়ে গুছিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে নেপথলিন, নিমপাতার শুকনো ডাল অথবা কালো জিরা একটি কাপড়ে বেঁধে কেবিনেটে রেখে দিন।
অগোছালো অবস্থায় থাকা বুক সেলফ, শোকেস যত্ন করে গুছিয়ে রাখুন। ঘরে ইনডোর প্লান্টস থাকলে ঈদের দু’একদিন আগে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করুন। বাথরুম ও বেসিনে সাবানের পরিবর্তে লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন। অবশ্যই একটি পরিষ্কার তোয়ালে রাখতে ভুলবেন না। বাথরুমে ঢোকার মুখে অথবা ডাইনিং রুমের আয়না নষ্ট হয়ে গেলে সেটি পরিবর্তন করুন। তোয়ালে ঝোলানোর জন্য রিং বা টাওয়েল রেল ঠিক না থাকলে নতুন করে লাগিয়ে নিন। সব সময় ব্যবহৃত ট্র্রে ভালো করে পরিষ্কার করে খাবার পরিবেশন করুন। বাসার সব ঘরের সামনে ও বাথরুমের সামনে রাখা পাপোশ অথবা রাগস পরিবর্তন করুন।
তারের ছড়াছড়ি
সারা ঘরে টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফোনের বিভিন্ন তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে অনেকের বাড়িতে। অন্য সবকিছু গুছিয়ে ফেললেও এগুলো কিছুতেই গোছানো হয়ে ওঠে না। তবে ফার্নিচারের আশপাশে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন তারগুলোকে, যতটা সম্ভব চোখের আড়ালে রাখুন।
ঘর সাজাবেন আপনার সাধ্যের মধ্যে। এজন্য অল্প খরচে আপনার মনের সৌন্দর্য দিয়ে ঘরকে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। প্রয়োজন সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্যবোধ। একটু সময় নিয়ে বুঝে ঘর সাজান। তাহলেই আপনার সাদামাটা ঘরটিও হয়ে উঠবে দৃষ্টিনন্দন।
ফ্রিজের প্রতি মনোযোগ দিন
প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে বাকি সব বের করে নিন। অনেকেই করি করি করেও ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য সময় বের করতে পারেন না। ঈদ হতে পারে তাঁদের জন্য দারুণ উপলক্ষ। এ ছাড়া ঈদের নানা মুখরোচক খাবার রাখার জন্যও ফ্রিজে জায়গা করা দরকার হয়। এই ফাঁকেই না হয় ফ্রিজ পরিষ্কার করে নিন। ডিটারজেন্ট গোলানো পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে ফ্রিজ মুছে নিন। প্রয়োজনে কুসুম গরম পানিও ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রিজ পরিষ্কারের আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভুলবেন না।
বাড়ি রং
ঈদের আগে-পরে উৎসবের আমেজ থাকে বেশ কয়েক দিন। ছুটি উপলক্ষে বিয়ে-শাদির আয়োজন হয়। এর বাইরেও ঈদে ঘুরতে আসে অনেক আত্মীয়। এ জন্য অনেকেই বাসা রং করেন। এখন যেহেতু করোনার সময় তাই স্বাস্থ্যবিধির দিকে খেয়াল রেখে বাড়ি রং করতে পারেন। পুরো বাসা একদিনে রং না করে কয়েক ধাপে ভাগ করে নিন, যাতে জিনিসপত্র নিয়ে বাড়তি বিড়ম্বনায় ভুগতে না হয়।
রান্নাঘর পরিষ্কার
গৃহিণীদের দিনের অনেকটা সময় কাটে রান্নাঘরে। ঈদ উপলক্ষে রান্নাঘরে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ জন্য ঈদের আগেই রান্নাঘর গুছিয়ে নিন। পুরো ঘরের জিনিসপত্র থরে থরে সাজিয়ে নিন। অব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে দিন। রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে জীবাণুনাশক তরল দিয়ে মেঝে, সিংক পরিষ্কার করে নিন। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিনের ময়লা রাখার জন্য পুরনো ডাস্টবিনটা বদলে নতুন একটা কিনতে পারেন।
সিঁড়িঘর সাজানো
ঈদের আগে বাড়িতে নতুন লুক আনতে সিঁড়িঘরের সাজ বদলে ফেলুন।
অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিন
অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ঘর ভরে ফেলা অনেকের একটা বদ অভ্যাস। যে জিনিস ব্যবহারই হয় না সেই জিনিস দিনের পর দিন ঘরে রেখে দেন অনেকে। এতে ঘর নোংরা হয়, জায়গা নষ্ট হয়। ঈদের আগে এসব দূর করতে একটি ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।
ঈদের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা
ঈদের দিন অনেক ধরনের জিনিসের প্রয়োজন হতে পারে। নতুন প্লেট, বাটি, ছুরি আরো কত কী। এগুলোর একটি তালিকা এখনই করে নিন। এরপর বাজার থেকে কিংবা অনলাইনে অর্ডার করে কিনে নিন, যাতে প্রয়োজনের সময় এগুলোর অভাবে ভুগতে না হয়।
ঈদে ঘর সাজাতে মাটির শো-পিস
ঈদে যে ঘর সাজাতে নতুন ও দামি আসবাবপত্র, দামি কার্পেট বা দামি ঝুমুর কিনতে হবে এমন নয়। স্বল্প খরচে ও ছোটখাটো পরিবর্তন করে বদলে ফেলতে পারেন ঘরের অভ্যন্তরীণ সাজ। যেমন ধরুন- ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এমন জিনিসগুলোর মধ্যে শোপিস হচ্ছে অন্যতম। শুধু অন্যতম না, অপরিহার্য জিনিস ও বটে। আর সৌন্দর্য বর্ধনকারী সেই শোপিস যদি দেশীয় মোটিফের হয় তবে তা ঘরে এনে দেয় নান্দনিকতার ছোয়া। দেশীয় পণ্য দিয়ে তৈরি শোপিসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নান্দনিক হচ্ছে মাটির শোপিস। আপনি নানা ভাবে আপনার ঘরে মাটির শোপিস রাখতে পারেন। এসব দেশীয় ধাচের মাটির শোপিস দিয়ে ঘর সাজালে একদিকে তা যেমন আপনার রুচির পরিচয় বহন করবে, অন্যদিকে আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মানুষের কাছে তুলে ধরবে। বসার ঘর হোক কিংবা শোবার ঘর, প্রতিটি ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা বাড়িয়ে তোলে নানা ধরনের মাটির শোপিস। বিভিন্ন ধরনের মাটির শোপিস পাওয়া যায় বাজারে। যেমন মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, ফুলদানি, মোমবাতি, গ্লাস, প্রদীপ বাটি, পারি, ল্যাম্পশেড, ডিনারসেট, টেরাকোটা, ভাস্কর্য আরো কত কী। বেডরুমের সাইড টেবিলেও মাটির শো-পিস যথেষ্ট মানানসই। সাইড টেবিলে মাটির তৈরি ফুলদানি, ল্যাম্পশেড, মোমদানিজাতিয় শো-পিস রাখলে দেখতে ভালো লাগবে।