দেশের অর্থনীতির গতিকে বেগবান করাই আমাদের মূল লক্ষ্য: কামরুল ইসলাম চৌধুরী

জাফর খান
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৩:০৭
-64bcd1a78cd16.jpg)
মোঃ কামরুল ইসলাম চৌধুরী।
ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক’ কতটা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখছে তা নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের কাছে এক খোলামেলা সাক্ষাৎকার প্রদান করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কামরুল ইসলাম চৌধুরী। সাম্প্রতিক দেশকালের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন যুগ্ম বার্তা সম্পাদক জাফর খান।
কেমন চলছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। গত ২৪ বছরে ব্যাংকের পণ্য ও সেবার মানে কী ধরনের বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হয়েছে?
১৯৯৯ সালের ২ জুন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে তৃতীয় প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সুদীর্ঘ এই পথ চলায় ব্যাংকটি যে ধারাবাহিক সাফল্য ও অগ্রগতি অর্জন করেছে, তার পেছনে রয়েছে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি সময়োপযোগী উন্নত গ্রাহক সেবা। তারই ধারাবাহিকতায় গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে। পাশাপাশি দেশের শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিভিন্ন শিল্প খাতে ঋণ প্রদান করছে। দেশের শিল্পায়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কৃষি ঋণ প্রকল্প চালু করেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থা (এসএমই) গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এসএমই ফাইন্যান্সের আওতায় সহজ শর্তে বিভিন্ন ঋণ প্রকল্প চালু করেছে। এছাড়া মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তার জন্য কনজ্যুমার অ্যান্ড রিটেইল ফাইন্যান্সের আওতায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিভিন্ন ঋণ প্রকল্প চালু করেছে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয় প্রিয়জনের কাছে স্বল্প ও দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যাংক রেমিট্যান্স সেবার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও গ্রাহকরা যাতে ২৪ ঘণ্টা নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারে সেজন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক এটিএম সেবা চালু করেছে। ব্যাংকের মূল লক্ষ্য, দেশের আপামর জনসাধারণকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে দেশের অর্থনীতির গতিকে বেগবান করা। সে লক্ষ্যে শুরু থেকেই আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করে আসছি।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক দুই বছর আগে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা চালু করে। ইসলামী ব্যাংকিং সেবায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ২ জুন ২০২০ ‘তাক্বওয়া’ নামে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার আনুষ্ঠানিভাবে যাত্রা শুরু করে, বর্তমানে ৪৫টি শাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোজের মাধ্যমে শরিয়াহ্ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এই সেবার প্রতি গ্রাহকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ঢাকার দিলকুশায় একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং শাখা চালু করেছে এবং এই শাখা থেকে একটি আধুনিক প্রযুক্তির (সফটওয়্যার) মাধ্যমে দেশের সকল শাখা ও উপশাখায় গ্রাহকদের চাহিদামতো ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। ইসলামী ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমানতকারী ও গ্রাহকদের মধ্যে শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যার ফলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের রয়েছে মুদারাবাহ মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, মুদারাবাহ মাসিক মুনাফা আমানত প্রকল্পের মতো জনপ্রিয় আমানত প্রকল্প।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতে কমে যাচ্ছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। কিছু কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটেও পড়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি ও তারল্য পরিস্থিতি কেমন?
ব্যাংক খাতে আমানত কমে যাওয়ার মূল কারণ বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকট। যেটা করোনা মহামারির পরপরই ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট হয়। এই সময় মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির কারণে প্রকৃত আয় কমে গেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সঞ্চয়ও কমে গেছে। ফলে মানুষের ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকের আমানতও কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। আর শেয়ারবাজারেও চলছে মন্দাভাব। যার ফলে কিছু কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটেও পড়েছে। কিন্তু এই দিক দিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ২০২২ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আমানত ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৭% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৯,৪০৬ কোটি টাকা।
জুলাই থেকে ঋণের সুদের সীমা তুলে দিয়ে সুদহারের করিডর প্রথা চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ ব্যবস্থা সুদহার বাজারভিত্তিক করতে কতটা সহায়ক হবে বলে মনে করেন।আগামী জুলাইয়ের মধ্যে আমানত ও সুদহার স্থিতিশীল রাখতে একটা করিডর ব্যবস্থা চালু করা হবে। যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুদহারের সীমা নির্ধারিত হবে। নতুন এ ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো কৃষি, সিএমএসএমইর মতো খাতে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত হবে। বর্তমানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকঋণের প্রায় ৬০ শতাংশই বড়দের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। একই সঙ্গে দেশের মূল্যস্ফীতির হারও নতুন উচ্চতায় বেড়ে চলেছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণের চাহিদার বিপরীতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত বাজারভিত্তিক সুদ ব্যবস্থাই হতে পারে বিদ্যমান চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্য দূর করার একমাত্র সমাধান।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় এলসি খুলতে অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক। ডলারের সংকট অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
সম্প্রতি ডলার সংকটের মূল কারণ হলো----- বিশ^বাজারে পণ্যের দাম, বিশেষ করে আমদানিকৃত পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য, ফুয়েল ও এলএনজি এবং খাদ্য সামগ্রী আমদানির দেনা পরিশোধে অতিরিক্ত ব্যয়। ফলে রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বাজারে ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামালসহ সব আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। এতে মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নানা ছাড় দেওয়ার পরও ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে খেলাপিঋণ। এটা কমিয়ে আনতে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি?
খেলাপি ঋণ বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা। ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা পরিস্থিতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী, এমনকি ছোট উদ্যোক্তারাও ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তবে নীতিনির্ধারক ও ব্যাংকারের সমন্বয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও হুন্ডির টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি প্রতিরোধে ব্যাংকগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?
গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি এবং হুন্ডির কুফল সম্পর্কে তাদের অবগত করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ ও নিয়মাবলি যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কেউ যাতে সন্দেহজনক লেনদেনের সুযোগ না পায় তার জন্য তদারকি জোরদার করতে হবে। সব ধরনের কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে অনমনীয় নীতি গ্রহণ করে হুন্ডি প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো কী?
আধুনিক সেবানির্ভর মার্কেন্টাইল ব্যাংক ‘বাংলার ব্যাংক’ হিসেবে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে অত্যন্ত সুনাম ও আস্থার সঙ্গে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করে আসছে। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি আর্থিক সূচকে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯,৪০৬ কোটি টাকা। একই বছরে ঋণ ও অগ্রিমের ক্ষেত্রেও ব্যাংক উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮,০৮৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও বৈদেশিক রেমিটেন্সের পরিমাণ যথাক্রমে ২৫,৪৯৪; ২০,৯২২ এবং ৬,৮২৭ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে ব্যাংক ৭১৩.৮৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করে। আমি আশাবাদী ২০২৩ সালেও একইভাবে ব্যাংক প্রতিটি আর্থিক সূচকে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করবে।
দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বৃহৎ খাতের পাশাপাশি মার্কেন্টাইল ব্যাংক ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষি, রিটেইল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। সেবার আধুনিকায়নে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ Core Banking Software ‘TEMENOS T24’ সর্বশেষ ভার্সন আর ’১৯ এবং মোবাইল অ্যাপ ‘এমবিল রেইনবো’ চালু করা হয়েছে।
- গ্রাহকের আস্থা ধরে রেখে মার্কেন্টাইল ব্যাংককে আরও এগিয়ে নিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পদক্ষেপসমূহ:
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর জোর প্রচেষ্টা চালানো। - শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় জোরদার করা।
- ঋণ বিতরণে কৃষি, রিটেইল, হোম লোন ও এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান।
- প্রান্তিক এলাকায় নতুন নতুন উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা।
- আর্থিক খাতে বিদ্যমান ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক তহবিল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
- অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা সহজীকরণ।
২০২৩ সালে ব্যাংকের কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো কী?
২০২৩ সালে বৈশ্বিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও, আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী। আগামী বছরে আমাদের কর্মকৌশলের মূলে থাকবে গ্রাহককেন্দ্রিকতা, পরিচালন দক্ষতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ডিজিটাল রূপান্তর। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট ব্যাংকিং অব্যাহত রাখা আমাদের অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে। তাছাড়া মানসম্পন্ন সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ঝুঁকি ও মুনাফার মধ্যে সামঞ্জস্যতা রেখে আমরা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সুদৃঢ় অবস্থান আরও সুসংহত করার প্রয়াস চালিয়ে যাব। এ লক্ষ্যে গ্রাহক ঋণ ও অগ্রিমের কেন্দ্রীকরণ পরিহার ও বৈচিত্র্যকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক সুষম আমানত কাঠামো সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে রিটেইল আমানত বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্পোরেট আমানতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। ২০২৩ সালে ব্যাংক সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির জন্য নিট সুদ মার্জিনের স্থিতিশীলতা অর্জন, শেয়ারহোল্ডারদের সন্তোষজনক রিটার্ন প্রদানের পাশাপাশি মূলধন ভিত্তি বাড়ানো এবং মন্দ ঋণের পরিমাণ আরও কমিয়ে এনে সম্পদের গুণগত মান বজায় রাখবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।