Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

জনসমর্থনবিহীন রাষ্ট্রশক্তিনির্ভরতাই সরকারের ক্ষমতার উৎস: জহির উদ্দিন স্বপন

Icon

অনিন্দ্য আরিফ

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৪:২৪

জনসমর্থনবিহীন রাষ্ট্রশক্তিনির্ভরতাই সরকারের ক্ষমতার উৎস: জহির উদ্দিন স্বপন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দেশে গণ-আন্দোলন তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি। বর্তমান রাজনীতির এরকম একটি প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক দেশকালের কাছে নিজেদের অবস্থানের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিন্দ্য আরিফ ...

বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের আন্দোলনকে কীভাবে দেখছেন?
পৃথিবীর সকল গণতন্ত্রমনা মানুষ সংশ্লিষ্ট দেশের ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন লড়াই করে থাকে। বাংলাদেশের মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিহাসের পাতায় এসব সংগ্রাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। আমাদের দেশেও এখন সেই সংগ্রামই চলছে। 

বর্তমান গণ-আন্দোলনের গতিবৃদ্ধিতে বিদেশিদের ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ। এর সত্যতা আছে কি?
বিদেশিদের মধ্যে যারা গণতন্ত্রমনা, মানবাধিকার রক্ষার স্বপক্ষে, তারা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে। এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পৃথিবীর অনেক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার এই আন্দোলনের পক্ষে নেই, সেটাও প্রমাণিত। সুতরাং গণতন্ত্রের পক্ষের লড়াই, মানবাধিকার রক্ষার লড়াই একটি বৈশ্বিক সমঝোতার প্রশ্ন। আর তাই আমাদের এই আন্দোলনের পক্ষে বৈশ্বিক অবস্থানের মেরুকরণ ঘটছে। 

২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে লাগাতার আন্দোলন করেছিল বিএনপি। কিন্তু সেই আন্দোলন তো সফল হয়নি।
২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনের পরে এই ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে তার ক্ষমতাকে নবায়ন করেছে মাত্র। যার কোনো গণভিত্তি নেই। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। জনরায় এবং জনগণের ভোটাধিকারকে সে ভয় পায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার পুলিশ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। ২০১৪ এবং ২০১৮-এর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সত্যকে উন্মোচিত করেছি। এজন্য সরকার এবার বলছে, আগের দুই নির্বাচনের মতো এবার নির্বাচন হবে না। অর্থাৎ তারা তাদের অপকর্মকে আত্মস্বীকৃতি দিয়েছে। এটাই আমাদের আগের এবং বর্তমান আন্দোলনের বিজয়। আর এ কারণেই সরকারের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি আঘাত হানলে তারাও প্রস্তুত। তার এই বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন?
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল জনগণের ভোটাধিকারকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে গণরোষের ভয়ে। তারা গণতন্ত্রের পথে না হেঁটে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে গণ-আন্দোলনকে দমাতে চাচ্ছে। জনগণের গণতন্ত্র চর্চার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সরকার যদি সেটা চাইত, তাহলে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে তাদের ভিন্নমত থাকত না। কিন্তু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে তারা সেই পথকে বন্ধ করে দিয়েছে। যেহেতু তারা জানে জনরায় তাদের বিপক্ষে যাবে, তাই তারা রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করেছে। সেই শক্তির বলে তারা বারবার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি যে, চিরন্তন বিজয় হয় জনগণের; ক্ষমতা আর দাপটের পরাজয় ঘটে। 

পুলিশের ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়া বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর একজন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)। আবার আরেক বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তারের পর আপ্যায়ন করেছেন ডিবিপ্রধান। বিরোধীদলীয় নেতাদের প্রতি সরকারের এই মনোভাবকে কীভাবে দেখছেন?
এটা সরকারের পক্ষ থেকে একটি দ্বিমুখী নাটকের মঞ্চায়ন করা হয়েছে। কেননা, যে পুলিশ রাজপথে বিরোধী নেতৃত্বের প্রতি হিংস্রতা দেখাল, তাদের পরিচালনাকারীরা এই সব ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করতে চাইছে। তারা আসলে নিজেদেরকে ভিসানীতি থেকে রক্ষা করতে চাইছে। এই ঘটনা ঘটিয়ে তারা নিজেদের ও পরিবারের পশ্চিমা দেশগুলোতে যাওয়ার পথটা খোলা রাখতে চাইছে। এটা এই সরকারের ভীরুতা, দুর্নীতিপরায়ণতা আর কাপুরুষতার বহিঃপ্রকাশ। 

নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শঙ্কাকে তো অমূলক ভাবছে সরকার। 
সরকার প্রতিদিনই এই চাপের মুখে পড়ছে আর বেফাঁস কথা বলছে। সরকার প্রধান নিজেই যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশকে হাস্যকরভাবে সমালোচনা করছেন। এ ধরনের বক্তব্য রীতিমতো উন্মাদনায় পরিণত হচ্ছে। এসব কথাবার্তা দিয়ে প্রমাণ হয় যে, তারা চাপের মধ্যে আছে। 

আপনাদের একসময়কার প্রধান জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তো এখন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
চলমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারাই সম্পৃক্ত হবে, তারাই আমাদের মিত্র। জামায়াতে ইসলামী যতক্ষণ এই আন্দোলনে আছে, ততক্ষণ তারা এই আন্দোলনের অংশীদার। গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার রূপরেখার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিএনপির আন্দোলন দমনে সরকার হার্ডলাইনে যাওয়ার কথা ভাবছে। সরকারের এ অবস্থানকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
সরকার যত হিংস্র হবে, ততবার তার দুর্বলতা আর কাপুরুষতা উন্মোচিত হবে। কারণ সাধারণ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের জনসমর্থনই আমাদের বড় সম্পদ। আর রাজনীতি ও জনসমর্থনবিহীন রাষ্ট্রশক্তিনির্ভরতাই সকারের একমাত্র পরিচয়। সরকার যত হিংস্র হবে, এই সত্য ততবার প্রমাণ হবে। 

এই পরিস্থিতিতে সংঘাত তৈরি হলে সেটা কি দেশের জন্য আরও বড় সংকট তৈরি করবে না?
আপনি নিশ্চয়ই ইতিহাস পাঠ করে দেখেছেন, চূড়ান্ত বিজয় ঘটে জনগণের। শুধুমাত্র শক্তি আর গায়ের জোরে কোনো শক্তি টিকে থাকতে পারে না। আমাদের যেহেতু জনসমর্থন আছে, গণভিত্তি আছে, আমরা তাই চেষ্টা করব জনসমর্থন দিয়ে সরকারের রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহারের কৌশলের মধ্যে ভাঙন ধরাবার। কেননা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি বিশেষ দলের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাবে না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫