Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণে বিশ্বাস করেন: অশ্বিনী বৈষ্ণব

Icon

জাফর খান

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১৭:১৯

আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণে বিশ্বাস করেন: অশ্বিনী বৈষ্ণব

ভারতের ইউনিয়ন ইলেক্ট্রনিকস ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তথ্য বা ডেটা সুরক্ষা আইনটি এবারে প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি দায়বদ্ধতা তৈরিতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন ভারতের ইউনিয়ন ইলেক্ট্রনিকস ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডেটা সুরক্ষা আইনটি শনিবার রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয় এবং পরে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করে মোদি সরকার। বেশ কিছু সিরিজ পর্যালোচনার পর ডেটা সুরক্ষা বোর্ড গঠনের মধ্যদিয়ে এর কার্যকারিতা শুরু হবে বলে জানান অশ্বিনী। আর এর মধ্যে কয়েকটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়েই হিন্দুস্তান টাইমসের আর সুকুমার ও বিনায়ক দাশগুপ্তের সঙ্গে এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রী। আর সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করেছেন জাফর খান। 

এখন যেহেতু আইনটি হয়ে গেছে এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতিও পেয়েছে আর সবাই নিয়মের কথাও ভাবছে সেক্ষেত্রে বাস্তবে এর প্রয়োগ আমরা কবে থেকে দেখতে পারব ? 

নিয়মনীতির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে সমানতালে। আর নিয়মগুলিও খুব স্পষ্ট ভাষাতেই করা হবে যাতে খুব সহজেই কেউ চট করে তা অনুধাবন করতে পারে। প্রযুক্তির সাথে পরিবর্তনের সামঞ্জস্য, এটির ওপর খেয়াল রেখেই নিয়ম প্রবর্তন করা হচ্ছে। আইনের মতোই সহজ ও সরল হবে এর প্রতিটি ভাষা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তিকে দরিদ্রতম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর। একটা পিরামিডের স্তর বিন্যাসে পিরামিডের সর্ব নীচে অবস্থিত শ্রেণীও যেন ডিজিটাল পরিষেবা থেকে বাদ না যায় সেদিকে সরকার খেয়াল রাখছে। আইনের বাস্তবায়ন এবং বিধি কাঠামোতেও এই নীতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। 

আপনি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সংসদে এর নিয়ম কানুন দেখতে সক্ষম হবেন। ডিজিটাল-বাই-ডিজাইন বাস্তবায়ন কাঠামোসহ একটি স্বতন্ত্র ডেটা সুরক্ষা বোর্ড স্থাপনের জন্যও কাজ চলছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি বাস্তবে এটির  কার্যকলাপ দেখতে পাবেন।

বোর্ডের নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের আরও কিছু বলুন।

আপনি যদি (অ্যাক্ট) বিধানগুলো ভাল্ভাবে দেখেন তবে দেখবেন, তারা এটিকে (বোর্ড) খুব স্বাধীনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যার একটি অনন্য উদাহরণ TRAI (টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)। অনেকে এও বলছেন যে, এটি একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা যা কিনা সোনালী একটি দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য। এর চেয়ারপারসন এবং সদস্যরা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত, তবে এর উদ্দেশ্য, শর্তাবলী এবং যা কিছু করতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে আইনে লেখা রয়েছে ও এ সংক্রান্ত চিঠিও রয়েছে। ডেটা সুরক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রেও এ দুটিই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও সদস্য সংখ্যা, তাদের নিয়োগের সময়কাল, তারা কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকলে তা প্রকাশের বাধ্যবাধকতাসহ নানান দিক উল্লেখ রয়েছে। এ বোর্ডে তাদেরকেই রাখা হয়েছে যারা ডিজিটাল অর্থনীতি বুঝার পাশপাশি ডিজিটাল অর্থনীতির সূক্ষ্মতা বিষয়ক জ্ঞানগুলোও রাখেন। আর এমন লোকদেরকেই বেছে নেওয়া হবে।

তাহলে আপনাকে [সরকারের] বাইরে থেকেও দেখতে হবে?

হ্যাঁ- অবশ্যই । 

এ সেক্টরে কী তবে নির্দিষ্ট শ্রেণীবিভাগ রয়েছে? আর তা থাকলে সেসব বিশ্বস্ততার সঙ্গে ডেটা প্রসেসের সাথে আরোপিত নিয়মগুলি একসূত্রে কাজ করবে?

পুট্টস্বামীর রায়টি মূলত সমানুপাতিকতার পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্যাদি আমাদের কাছে তুলে ধরে, যা আপনারা দেখেছেন। সাধারণ ডেটা ফিডুসিয়ারি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ডেটা ফিডুশিয়ারি এবং একটি স্টার্টআপের ক্ষেত্রে একটি নতুন পণ্য বাজারে আনতে যেমন গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয় তেমনভাবেই আমাদের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হবে। এমনকি একটি সংস্থা যদি শিশুদের তথ্য নিয়ে কাজ করে থাকে সেখানেও আমরা ওই বিষয়গুলোকে আলাদা একটি শ্রেণী হিসেবে বিবেচনা করব৷

প্রণীত নীতিগুলোতে একটি সেট রয়েছে যা কিনা প্রত্যেকের জন্য প্রযোজ্য। এরপরও কিছু অতিরিক্ত নীতি রয়েছে যা আলাদা কোনো শ্রেণী থাকলে সেগুলোকেও অনুসরণ করতে পারে। সুতরাং, এমন বিধান প্রকৃত নিয়ম পালনে সক্ষম হবে। কিন্তু আমাদের সাংবিধানিক ও সংসদীয় কাঠামোর মধ্যে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আপনার তৈরি প্রতিটি নিয়ম যেন আইনের চার দেয়ালের মধ্যে থাকতে পারে যাতে করে যে কাউকে জবদিহিতার আওতায় আনা যায়। 

শিশুদের জন্য সুরক্ষার মধ্যে আচরণ ট্র্যাকিং সংক্রান্ত ধারাগুলি কিন্তু কিছুটা গোপনীয়তার বিষয়কেও ইঙ্গিত করে। অন্যদিকে বিগ টেকের ক্ষেত্রে আবার প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এর গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে বেশ কিছুটা উদ্বেগ জড়িত। আপনি কি তবে এই বিষয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের আচরণ ট্র্যাকিং-এর মাধ্যমে অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতা বা গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ফিডুশিয়ারিদের শ্রেণীবদ্ধ করার পরিকল্পনা করছেন?

দেখুন সাতটি নীতিতে খুব স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, কোন ডেটা নেওয়া যাবে, কী ডেটা ব্যবহার করা যেতে পারে, আর কতটাই বা ব্যবহার করা যেতে পারে এবং কোন সময়ের জন্য এটি ব্যবহারের উপযুক্ত। কিন্তু যদি এমন কোনো আচরণ সংক্রান্ত ডেটা সংগ্রহ করা হয় যা কিনা যে উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়েছিল সেটির জন্য আর  প্রয়োজন নেই তবে তা ব্যবহার করলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ হয়ে যাবে।

সম্মতি কাঠামো আইনের বাইরে কেউ কোন নাগরিকের ডেটা নিয়ে কাজ করলে তা বেআইনি হবে। সুতরাং, বিগ টেক ও সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলির জন্য বড় একটা জবাবদিহিতার জায়গা আমরা তৈরি করেছি এ আইনের মাধ্যমে। 

সাধারণত জনগণের কোন ডেটা শেয়ারের জন্য সম্মতি চাওয়ার সময় শেষের দিকে একটি নিছক 'আমি সম্মত' বলে অপশন লেখা থাকে, আর এর আগে একটি দীর্ঘ রচনা সমান একটি নির্দেশিকা যুক্ত করা হয় যা কেউ কখনও পাঠ করে বলে মনে হয় না। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রত্যাশা কী? 

সম্মতি কাঠামো আইনে ভাল ও বিশদভাবে বলা হয়েছে এমন তথ্য চাওয়ার জন্য যেসব শর্তাবলী বা টেক্সট থাকবে সেটি হতে হবে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত। পাশাপাশি মানুষের জন্য তা সহজ ও সরল ভাষায় লেখা থাকতে হবে। যখন আমরা নিয়মগুলো লিখি তখন আমরা এটিকে আইটেমাইজ করব যাতে আপনি একটি দীর্ঘ তালিকা বা  একটি দীর্ঘ রচনা না পড়ে বরং ঠিক কী ডেটা নেওয়া হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে পারেন।

তারপরও ২২টি ভাষায় নোটিশ লেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কারণ তিনি প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণে বিশ্বাস করেন। সুতরাং, একজন ব্যক্তি যিনি শুধুমাত্র তামিল বোঝেন তিনি যেন সম্পূর্ণ বিষয়টি তামিলে পেতে সক্ষম হোন সে বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখছি। অথবা যে ব্যক্তি শুধুমাত্র মৈথিলি বোঝেন তার মৈথিলিতে কী তথ্য জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে তা দেখতে যেন সক্ষম হোন সে ব্যবস্থা থাকবে। 

আপনাদের পরামর্শকেরা তথ্য সংক্রান্ত বিশ্বস্ততা স্থাপনের বিষয়ে তাদের কী প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছিলেন?

বেশিরভাগ বলেছিলেন যে, আমরা এই আইনের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত কারণ আমরা ইতোমধ্যে অন্যান্য ভৌগলিক অঞ্চলে এ আইনটি প্রয়োগ করে ফল পেয়েছি। আর পুট্টস্বামীর রায়ের পরে, আমরা সমগ্র ভারতের জন্যও প্রস্তুত। তাদের বিশ্বাস, উল্লেখযোগ্য একটি আচরণগত পরিবর্তন এর ফলে আসবে। মানুষ আরও সতর্ক হবে। আর ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনসহ জবাবদিহিতাও বেশ কঠোর হবে।

শিশুদের সুরক্ষার বিষয়ে, আমরা যখন তাদের সম্মতির কথা বলে থাকি কিংবা বয়স যাচাইয়ের বিষয় আসে তখন আপনার কাছে কি বাস্তবসম্মত কোনো বিকল্প আছে যার মাধ্যমে সহজে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে?

হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের কাছে সম্ভাব্য বিকল্প পথ রয়েছে। এটি এমন একটি সমস্যা যা অন্যান্য অনেক দেশও এর সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের কাছে এমন একটি ভাল ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো রয়েছে। যা ডিজিটাল ইন্ডিয়া চালুর পর শুরু হয়েছে। যেটির মাধ্যমে  আধার কার্ড, অনলাইন ভেরিফিকেশন, ডিজিলকারের মতো অনেকগুলি ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলোর কাঠামো আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এগুলি এমন ব্যবস্থা যে উপায়ে খুব সহজেই আপনি অনলাইনে যেকোনো বিষয়ে যাচাই করতে সক্ষম হবেন। এমনকি অনেক দেশ এখনও এটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই যারা তথ্য চাইবে তারা ওই অপ্রাপ্তবয়ষ্কের পিতামাতার সম্মতি ব্যতীত কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে না। 

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গ্রেডেড রেগুলেশন রেখেছি। ফলে শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশনগুলি কোন শিশু ব্যবহারের সময় অ্যাপগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ ততটা কঠোর হবে না যতটা আমরা মনে করছি। এছাড়াও অনলাইন গেমে সহিংসতামূলক উপাদান যখন দেখানো হয় তাতে কিন্তু শিশুদের আচরণগত  পরিবর্তন হতে পারে৷ তাই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা রাখা হয়েছে। 

অ্যাপগুলির একটি সাদা তালিকা থাকবে কি?

প্রত্যেককে মৌলিক নীতিগুলি অনুসরণ করতে হবে। এরপরও নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণীর জন্য কিছু অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতা আমরা রেখেছি। আর কিছু কিছু শ্রেণির জন্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ একটি নতুন ডিজিটাল ক্রেডিট সমাধান সংক্রান্ত একটি সেট আপ করতে চায়। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি একটি নিয়ন্ত্রক স্যান্ডবক্সের মাধ্যমে  এটি করতে পারেন। এক্ষেত্রে একবার অ্যালগরিদম তৈরি হয়ে গেলে পরিষেবাটি চালু হয়ে যাবে। এরপর বিভিন্ন ধাপে শুরু হবে সমস্ত বাধ্যবাধকতা পালনের অনুশীলন৷ তাই, আমরা সৃজনশীল উদ্ভাবনের জন্য সেই জানালটি খোলা রেখেছি যাতে উদ্ভাবনের অর্থনীতি কখনও শ্বাসরুদ্ধ না হয়ে যায়৷

ধারা ৩৭ সম্পর্কে আমাদের একটু বলুন। এখানে বলা আছে, কেউ ডেটা বিশ্বস্ততার বিষয়টি ধরে রাখতে অপারগ হলে তিনি এই আইনের ধারাগুলো লঙ্ঘন করেছেন বলে বিবেচ্য হবে। এখানে বিতর্কের বিষয়টি হলো ২০২২ সালে আইনটির খসড়ার পরে সম্পূর্ণ নতুন এ ধারা সংযোজনের প্রয়োজন অনুভূত কেন হয়েছিল?

দেখুন এখানে এমন কিছু লোক থাকতেই পারে যারা কিনা বারবার বলা স্বত্বেও নাগরিকদের ডেটার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে। এক্ষেত্রে যদি কেউ প্রথমবার এমনটি করে থাকেন তবে একটি জরিমানা রাখা হবে, ধরুন তা পরিশোধও হলো। কিন্তু এরপরেও যদি এটির পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন কী হবে, এমন ভেবেই এই সংশোধন করা হয়েছে। ধরা যাক একটি কোম্পানির প্রচুর অর্থ প্রদানের সক্ষমতা রয়েছে, তারা নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে চায় না --- এক্ষেত্রে উপায় কী হওয়া উচিত? এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির সমস্ত যুক্তি ও কথা শুনে এবং প্রকৃত ন্যায়বিচারের সমস্ত নীতি অনুসরণ করেই একটি শক্তিশালী বিকল্প থাকতে হবে যেখানে এই ধরনের পরিষেবা নিষিদ্ধ বা অবরুদ্ধের ব্যবস্থা থাকে। তা নাহলে আপনি নাগরিকদের সুরক্ষা দিবেন কীভাবে?

আপনি উল্লেখ করেছেন যে কীভাবে ভারতের আইন ইউরোপের জিডিপিআর থেকে কিছুটা কম ছাড় পেয়ে থাকে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- রিংফেন্সিং জিডিপিআর মূলত জনগণের "প্রয়োজনীয়তা ও যথোপযুক্ততার বিচারে " করা হয়েছে, এমন একটি বিষয় পুট্টস্বামীর রায়ে উল্লেখ রয়েছে। এমন কিছু কী আপনাদের ভাবনায় রয়েছে? 

এটা আইনেই আছে। এটি সমানুপাতিকতার নীতিকে যথেষ্ট ভাল শব্দ দিয়েই বেধে রেখেছে। পুট্টস্বামীর রায় আমাদের যা করতে বলেছিলেন তার সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। আইনি দিক, বৈধতা, এবং সমানুপাতিকতা এই তিনটি নীতিই আইনে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি- নিয়ম আইনের উর্ধ্বে নয়। 

এই ছাড়ের বিষয়টি কী কী সরকারী উদ্দেশ্যে বা সরকারি লোকদের রক্ষার্থে ব্যবহারের শঙ্কা থাকতে পারে? 

সরকারি কাজে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তা আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সংবিধানে জাতীয় নিরাপত্তা, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা ও অপরাধের তদন্ত, অপরাধের প্ররোচনা এমন সব বিষয়গুলো সংবিধানেই খোদাই করা হয়েছে। প্রতিটি সমাজের জন্য, নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এই ধরণের যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ স্থাপন করতে হবে। আপনারা জানেন, কেশভানন্দ ভারতী মামলার পর থেকেই সুপ্রিম কোর্ট বা উচ্চ আদালতের রায়ে যা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেভাবেই কীভাবে যুক্তিসঙ্গত একটি বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে, সে দর্শন ধারণ করেই আমরা এ পর্যন্ত কাজ করেছি। 

সুতরাং, দীর্ঘ অপেক্ষার পর এমন একটি বড় আইন করা হলো। এবারে থাকে ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং টেলিকম বিল সংশোধনী আইন৷ আমরা কি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে সেগুলো প্রণয়নের আশা করতে পারি?

হ্যাঁ, সেখানেও আমাদের ভালো অগ্রগতি হয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতির একটি নতুন কাঠামো প্রয়োজন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হল এমন একটি কাঠামো তৈরি করা যা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিকে বিবেচনায় নিতে পারে এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনের পরও তা মানিয়ে নিতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আমাদের ফোকাস সর্বদা- প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণের দিকে, যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরের প্রতিটি ব্যক্তির কাছে এ সমস্ত পরিষেবাগুলি প্রদানে কোনো আব্ধা সৃষ্টি না হয়। গণতন্ত্রীকরণ প্রযুক্তি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা এই সমস্ত আইনের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। 

নতুন আইনে প্রাথমিক ধারণার চেয়ে সহজেই ডেটা স্থানীয়করণের একটি  নিয়ম আরোপিত রয়েছে। এ বিষয়ে যদি বলেন…

প্রতিটি সেক্টরের নিজস্ব কিছু প্রয়োজনীয়তা থাকবে, স্বাস্থ্য খাতে কিছু ধরণের প্রবিধানের প্রয়োজন হবে, আর্থিক পরিষেবাগুলোর জন্য অন্য ধরণের প্রবিধানের প্রয়োজন হবে আবার অন্যান্য পরিষেবা যা ভিন্ন প্রকৃতির তাদের জন্যও নিজস্ব নিয়মকানুন থাকবে। সুতরাং, আমরা এমন একটি মৌলিক কাঠামো তৈরি করেছি যেখানে নীতিগুলো সর্বোপরি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। শুধু আপনার প্রয়োজনমত যখন যে সেক্টরে চান সেখানেই আপনি সেই প্রবিধানগুলোকে যথাস্থানে বসাতে পারবেন।

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া কী?

আমরা সাধারণত একটি প্রেসক্রিপটিভ পদ্ধতির পরিবর্তে নীতিভিত্তিক পদ্ধতির জন্য বিপুল সাড়া এরই মধ্যে পেয়েছি। এবং নীতিগুলো ভালভাবেই গৃহীত হয়েছে। এমনকি একটি স্বাধীন ডেটা সুরক্ষা বোর্ডের কাঠামোও অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল সকল তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় আইটি শিল্পের অনেক অংশগ্রহণকারীরাও বলেছেন, তারা ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বৃদ্ধির জন্য এটিকে খুব শক্তিশালী লিভার হিসেবে দেখছে। কারণ তারাও এমন এক আইনের অভাব অনুভব করছিলেন। কারণ আইনের অভাবে অনেক দেশ তাদের ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ভারতে আসছিল না, এবারে এ আইনের ফলে সবাই খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে বলে তারা অভিমত জানিয়েছেন। 

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫