Logo
×

Follow Us

সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার:

প্রথা-প্রচলনের বাইরে গিয়েই নতুন করে সৃষ্টি করতে হবে: দ্রাবিড় সৈকত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১৫:১৭

প্রথা-প্রচলনের বাইরে গিয়েই নতুন করে সৃষ্টি করতে হবে: দ্রাবিড় সৈকত

চিত্রশিল্পী, কবি, গবেষক ও শিক্ষক দ্রাবিড় সৈকত। ছবি: ফাইল ছবি

দ্রাবিড় সৈকত একজন কর্মমুখর সৃষ্টিশীল এবং উদ্যমী মানুষ। যিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, কবি, গবেষক, ছোটকাগজ সম্পাদক, প্রাণপ্রকৃতিপ্রেমি, সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ লিখছেন কবিতা এবং চিত্রকলাসহ নানা বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ। এর বাইরে তিনি ‘অর্বাক’ নামের ছোটকাগজের সম্পাদক। ‘ফলদ বাংলাদেশ’ নামের সংগঠন গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে তরুণদের নিয়ে তিনি দেশের প্রায় ৬৩ টি জেলায় বৃক্ষরোপন সম্পন্ন করেছেন। দ্রাবিড় সৈকত রচিত মোট তিনটি গ্রন্থ ২০২৪-সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ পেয়েছে, যাকে লেখক বলছেন একটি সিরিজপ্রক্রিয়া। সাম্প্রতিক দেশকালের শিল্প-সংস্কৃতি বিভাগের পক্ষ হতে বেশ কিছু লেখককে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে, সেই প্রশ্নগুলোর সম্মিলনে এই সাক্ষাৎকারটি নির্মিত হলো। এখানে উঠে এসেছে লেখকের চিত্রকলা বিষয়ক চিন্তা এবং বাংলার শিল্পচিন্তা। সাক্ষাৎকারটির পরিকল্পনা গ্রন্থনা করেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সাহিত্য সম্পাদক এহসান হায়দার       

১. চিত্রকলা বিষয়ে আপনার দুটি গবেষণা বিষয়ক নতুন বই এসেছে এবারের মেলায়, বইগুলো নিয়ে বলুন

বই দুটি শুধুই চিত্রকলার নয়, তবে আলোচনার সুবিধার্থে চিত্রকলাকে কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। একটির নাম ‘বাঙলার চিত্রকলা: ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিতার মর্মভেদ’ দ্বিতীয়টি ‘বঙ্গীয় শিল্পকলা: দেহতত্ত্বের দার্শনিক উত্তরাধিকার’ এর সাথে আরেকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ‘ফ্রয়েডিয় লিবিডো তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহাত্মবাদ’ এই তিনটি বই আসলে সিরিজ আকারে পাঠ করলে আমার বক্তব্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিষ্কার হওয়া যাবে। এই বইগুলো কেবল চিত্রকলা বিষয়ে নয়, বাঙলা অঞ্চলের সামগ্রিক শিল্প-সংস্কৃতি-মনন-দর্শন নিয়ে। এক বছরে প্রকাশিত হলেও অন্তত পাঁচ-সাত বছরের গবেষণার ফসল। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রচলিত চিন্তার সমস্যাকে চিহ্নিত করার প্রয়াস এবং সম্ভাব্য সমাধানের ইঙ্গিত রয়েছে এই গ্রন্থগুলোতে। যেমন আমরা বাঙলার শিল্পকলা বলতে বুঝি লোকশিল্প যা পুরোপুরি ভ্রান্ত এবং অপমানজনক একটি সিদ্ধান্ত, ‘বাঙলার চিত্রকলা: ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিতার মর্মভেদ’ বইটিতে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই বিষয়ে, কেন লোকশিল্প বাঙলার প্রধান শিল্পধারা হতে পারে না, এই বিপর্যয় কিভাবে ঘটল, এর থেকে উত্তরণের পথ কোথায়, একই অবস্থায় থেকে গেলে কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে, উত্তরিত হতে সক্ষম হলে বিষয়টি কেমন হতে পারে এসব বিষয়ে আলোচনা। দ্বিতীয়ত ‘বঙ্গীয় শিল্পকলা: দেহতত্ত্বের দার্শনিক উত্তরাধিকার’ বইটিতে আমি পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সহ দেখিয়েছি আমাদের শিল্পকলার প্রকৃত অবস্থা কী ছিল এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল আমি মনে করছি এখানে শিল্পকলায় মূলত দেহতাত্ত্বিক দর্শনের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যসমূহই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। লোকশিল্পের প্রাথমিক সারল্য আমাদের শিল্পের কোনো বৈশিষ্ট্য নয়, এটি আমাদের বিরুদ্ধে সহমর্মিতার ছদ্মবেশে পুরো জাতিকে ভৃত্য বানানোর একটি সুদূর প্রসারি ঔপনিবেশিক প্রকল্প। 

২. একজন লেখক নিজের লেখক নামটির প্রতি সুবিচার করার চেষ্টা করে থাকেন। আপনি বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দেন ?

প্রথমত আমি নিজেকে ‘লেখক’ নামের একটি বাক্সে বন্দী করতে রাজি নই। আপনি যদি বলেন সমাজের একজন সচেতন মানুষ হিসেবে নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারছি কি না, সে ব্যাপারে বলা যায় এটি একটি জীবনব্যাপী সাধনার বিষয়, এর মূল্যায়ন নিজের পক্ষে কঠিন বিষয়। তবে আপনার কথার সূত্র ধরেই বলি, আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন নিজের প্রতি এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রতি অন্তত অবিচার না হয়। আর গুরুত্বের কথা যদি বলেন সেটি দীর্ঘ আলাপের বিষয়, সেদিকে না গিয়ে সংক্ষেপে বলতে চাই আমাদের চারপাশটা এতো বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠেছে যে এখানে নিজের বিবেকের কাছে অন্তত নিজেকে পরিষ্কার রাখা একটি যুদ্ধের মতো, আমি সেই যুদ্ধের ময়দানে স্বশরীরে আছি। লেখক বা চিন্তাশীল মানুষেরা বিভিন্ন তত্ত্বের গোলকধাঁধায় পড়ে কেমন যেন নিজের বাইরে কোনো কিছু নিয়ে ভাবার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, তারা কেবল নিজের বিষয়ে মগ্ন হয়ে নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখছে বলে আমার মনে হয়। নিজের খ্যাতি, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা এমন একটি ক্ষুদ্র বলয়ে লেখকদের ঘুরপাক খাওয়া লেখক সত্তার প্রতি অবিচার; একজন লেখক এতোটা সংকীর্ণতা নিয়ে যথার্থ চিন্তার কাছাকাছি কখনোই পৌঁছাতে পারে না।

৩. আপনার দুইটি বই-ই শিল্প ভাবনা এবং শিল্পগবেষণাকেন্দ্রিক। তান্ত্রিক শিল্প নিয়ে এদেশে আপনার মতো করে এভাবে বৃহৎ পরিসরে আর কোনো গবেষণা চোখে পড়েনি, একইসঙ্গে বঙ্গীয় শিল্পকলা বিষয়ে আপনার ভাবনা ভিন্ন- বিস্তারিত বলবেন কি … 

কিছুটা প্রথমেই বলেছি, আসলে আমার ভাবনা এককভাবে শিল্পকেন্দ্রিক নয়। এটি আমাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে শিল্পকলাকে কেন্দ্রে রেখে আলোচনার বিস্তার। প্রাচীন তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণে এবং পর্যাপ্ত প্রমাণের উপস্থিতিতে আমার একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে বাঙলাকে বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে তন্ত্রের সারকথা, বঙ্গীয় সংস্কৃতি তন্ত্রের বাইরে আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না। বঙ্গীয় মানুষের আত্মা, মনন, দর্শন, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ কোনো কিছুই তন্ত্রের বাইরে গিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন না। কেননা আমাদের আত্মা পুরোপুরি তান্ত্রিক কিন্তু তন্ত্রকে আমরা পরিত্যজ্য মনে করার ফলে বঙ্গীয় বা বাঙালি সংস্কৃতি-দর্শন-রাজনীতি নিয়ে আমাদের মতবিরোধের অন্ত নেই। একটি কথা বলে রাখা দরকার বাঙালি বা বঙ্গীয় বলতে আমি এই বৃহৎবঙ্গ অঞ্চলের ভূমিসন্তানদের বোঝাচ্ছি, বিষয়টি নিয়ে বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এই যে অন্তহীন মতবিরোধ, বাঙালি বললে আমাদের পণ্ডিত মহলে অজস্র বিভাজনের উপস্থিতি, এর কারণ তারা কেউই জানে না আসলে বাঙালির আত্মা কোথায় ধরা আছে; ফলত তাদের মতবিরোধ কখনোই শেষ হবে না এবং এই জনগোষ্ঠীর দুর্দশারও অদূর ভবিষ্যতে অবসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এর থেকে উত্তরণের পথ একমাত্র তন্ত্রই দেখাতে পারে, যেখানে বঙ্গীয় জনমানুষ তার আত্মাকে খুঁজে পেতে পারে এবং যেখানে সকলেরই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (কিছু একেবারে ব্যক্তিস্বার্থে চালিত নষ্ট মানুষের বাইরে অন্য কারো পক্ষেই তন্ত্রের বাইরে যাবার পথ নেই)। এখন একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন হলো, তাহলে তন্ত্র তো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি সেখানে মানুষের অন্যসব সম্ভাবনা খর্ব হয়ে যেতে পারে না? এখানেই তান্ত্রিক মতাদর্শের বোঝাপড়াটা জরুরি যে, তান্ত্রিক পদ্ধতি আপনাকে কোনোভাবেই আটকাবে না বরং আপনার সম্ভাবনার সকল দুয়ার খুলে দেবে। কেননা তন্ত্রের মূল মন্ত্র হলো আত্মনংবিদ্ধি বা নিজেকে জানো এবং যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে তাই আছে দেহভাণ্ডে। আপনি যখন আপনাকে চিনতে পারবেন, আপনার প্রয়োজন অপ্রয়োজনকে চিহ্নিত করতে পারবেন, পৃথিবীর টোটাল মেকানিজমকে বুঝতে পারবেন, তখন আপনার আচরণ কর্মকাণ্ড আর গড্ডলিকা প্রবাহে চলমান অবস্থায় আপনার কর্মকাণ্ড একই হবার কোনো সম্ভাবনা নাই। নিজেকে বোঝার তান্ত্রিক প্রথা-পদ্ধতি হলো বঙ্গীয় স্বতন্ত্র ধারা সেটিকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করা প্রথম জরুরি কাজ, তারপর আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আপনার কি করা উচিত কি নয়। নিজের সাথে, মানুষের সাথে, প্রকৃতির সাথে, পৃথিবীর সাথে সম্পর্ক নির্ণয় ও স্থাপনে তান্ত্রিক পদ্ধতির চেয়ে উৎকৃষ্ট কোনো পথ নেই, এটি নির্দ্বিধায় আমি বলতে পারি। তন্ত্র আপনাকে এই টোটাল টেকনোলজির যুগে সঠিক পথ দেখাতে পুরোপুরি সক্ষম। শিল্পকলা এর একটি মাত্র ধারা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে আপনার মতাদর্শিক অবস্থানের বিষয়ে তন্ত্রের চেয়ে অগ্রগামী কোনো পথ পৃথিবীতে এখনো আসেনি।

৪. লেখক হিসেবে সমাজ, বাস্তবতা এবং আমাদের মানুষের জীবনাচার সম্পর্কে আপনার সার্বিক মূল্যায়ন কি?

আমাদের সমাজে লেখক শিল্পী সংস্কৃতিকর্মীদের ঔপনিবেশিক প্রায় অনিরাময়যোগ্য রোগ আছে। তাই আপনি যদি যথার্থ কথাটি বাই এনিচান্স বলে ফেলেন দেখবেন আপনার চারদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে গেছেন। কারণ চারপাশের নষ্ট মগজের এই যে তথাকথিত লেখকগোষ্ঠী, খোঁজ নিয়ে দেখুন তারা কি চায়? কেন তারা লেখালেখি করে? বিশুদ্ধ জ্ঞান চর্চা? আনন্দ সৃষ্টি? সমাজ বদল? চিন্তা-পরিবেশ বদল? অনেকে এমন অনেক কিছু বলতে পারে, দেখবেন তার টেক্সটের সাথে তার স্টেটমেন্টের কোনো মিল নেই। মানে সাধারণ লেভেলের এক প্রতারক গোষ্ঠী যে কাজটা করে আমাদের লেখক-বুদ্ধিজীবীমহল তার থেকে বিশেষ কোনো উন্নত পর্যায়ে আছে এমন কিছু ভাবতে পারবেন না। 

মানুষে জীবনাচারের বিষয়ে বলতে চাই সাধারণ মানুষ চিরকালই সাধারণ, তারা চালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এমন কথায় মাইন্ড করার কিছু নেই, এটি বাস্তবতা। সাধারণ মানুষের যথেষ্ট সময় থাকে না কোনোকিছু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার। কারা নিয়ন্ত্রণ এবং চালিত করে? এর বড় অংশ মূলত বুদ্ধিবৃত্তির নিয়ন্ত্রণকারী লেখক-বুদ্ধিজীবী-সংস্কৃতিসেবী মহল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো লেখক গোষ্ঠী এই প্রাথমিক সত্যটিও জানে না। তারা মনে করে রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক; কিন্তু রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি থাকে সমাজের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও চিন্তাশীল মানুষের হাতে। মানুষের জীবনাচরণ নির্ধারণ করেন সমাজের চিন্তাশীল অংশ, কাজেই দায় যদি কিছু থাকে সেটি নিজেদের সেই সচেতন মহল বলে যারা দাবী করেন তাদের। আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষ একটি নির্ঝঞ্জাট জীবন চায়, তারা সব অর্থেই অত্যন্ত ভালো মানুষ। মানুষের জীবনাচরণ সবসময়ই ইতিবাচক প্রবাহের দিকে ঝুঁকে থাকে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি এটি আমার কোনো হাইপোথিসিস নয়, এটি আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। আমাদের একটি সংগঠন আছে ‘ফলদ বাংলাদেশ’ নামে, গত একযুগ ধরে আমরা ৬৩টি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছি, কাজটি হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়ন সময় ও শ্রম নিয়োগের মাধ্যমে, এখনও সেই কাজ চলমান আছে। কাজের স্বার্থেই এদেশের অধিকাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে মেশার এবং ভাব বিনিময়ের সুযোগ হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি এদেশের সাধারণ মানুষ প্রায় অসম্ভব ভালো মন ও আত্মার অধিকারি (যারা ধূর্ত-প্রতারক-অসৎ তারা সত্যিকার অর্থেই কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার)। কাজেই সাধারণ মানুষের জীবনাচরণে যতটুকু দূষণ ঘটেছে তার দায় তথাকথিত সংবেদনশীল সচেতন লেখক-বুদ্ধিজীবী-সংস্কৃতিসেবীমহলের। লেখক হিসেবে আমাকেও এই দায়ভার বহন করতে হবে। সেখানে কিছুটা অবদান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু কাজটি একক প্রচেষ্টার বিষয় নয়, এটি সামগ্রিকভাবে চিন্তাশীল-সংবেদশীল মানুষের দায়িত্ব; তাদের সেই দায়িত্বটি পালন করতে হবে। সমস্যা হলো পালন যে করতে হবে, কেন করতে হবে? কিভাবে করতে হবে? লেখকের দায় আছে কি নাই? কে দিয়েছে? কে বলেছে? আমি কেন সেটি পালন করতে বাধ্য? আপনি এসব বলার কে? কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে এমন বলা হচ্ছে? এমন বেশ কিছু পলায়নপর অর্ধউন্মাদের যন্ত্রণায় আপনি থিতু হতে পারবেন না। ওই যে বলেছি প্রায় অনিরাময়যোগ্য ঔপনিবেশিক ব্যাধি! আপনি ভুলক্রমেও যদি সঠিক কথাটি বলে ফেলেন তাহলে সর্বনাশ, চারদিকে সব শত্রু! হাজার হাজার পশ্চিমা তত্ত্ব এবং তাত্ত্বিক হাজির করবে আপনাকে ভুল প্রমাণের জন্য, আর প্রভুরা তাদের ভৃত্যদের জন্য বিভ্রান্তির জন্য ক্রমাগত তৈরি করে যাচ্ছে নানাবিধ তথৌষধি, যার প্রয়োগে আপনি কখনো আপনাকে চিনতে না পারলেও বুঝবেন আপনার প্রভুগণ অনন্তকাল ধরেই মহান, তারাই সঠিক যথার্থ, আপনি তাদের প্রান্তিক অক্ষম অনুকারি হয়ে নিজেকে ধন্য করতে পারেন। 

৫. লেখার জন্য পড়ালেখা কিংবা জ্ঞান চর্চার যে একটা বিশেষ অভ্যাস তৈরি হয় একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে আপনি এ বিষয়ে বলবেন কী?

পড়ালেখা কিংবা জ্ঞান চর্চার বাইরে আমাদের কোনো পথ নেই, এই অভ্যাস যদি না থাকে তাহলে আমার জানার পথই রুদ্ধ হয়ে গেলো। সৃষ্টিশীল মানুষ যদি তার পূর্ববর্তী সৃষ্টিশীল মানুষের শ্রেষ্ঠ কর্মগুলো সম্পর্কে অবহিত না থাকে তাহলে তার নিজের পক্ষে সৃষ্টিশীল থাকাই সম্ভব নয়। তাছাড়া কেবল বইপত্র পড়াই শেষ কথা নয়, জীবনকে সময়কে প্রকৃতি ও পরিবেশকে পড়তে জানতে হয় একজন সৃষ্টিশীল মানুষের। অনেক সময় কেবল বইপড়া জ্ঞান আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠে, যাকে বলা হয় ‘পুঁথিগত বিদ্যা’ যা মূলত ‘পরহস্তে ধন’। কাজেই পড়ালেখা কিংবা জ্ঞানচর্চা একটি সামগ্রিক বিষয়, পুঁথি-পুস্তক-মানুষ-সমাজ-প্রকৃতি যার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

৬. ‘লেখক সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সিভিল সোসাইটি’ এই যে শব্দবন্ধগুলি আপনি দেখছেন, এই বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এঁরা কারা, সমাজের প্রতি এঁদের দায়কে কীভাবে দেখেন-বিশেষত যে সমাজ থেকে এঁরা সমস্ত সুবিধা নেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত আপনার মতামত জানাবেন ...

‘লেখক সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সিভিল সোসাইটি’ এই বর্গগুলোই একটি সমাজকে পথ দেখায়, আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থা দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন এদের ভূমিকা। সমাজের পচন নাকি মাছের মতো মাথা থেকেই শুরু হয়। এরা সমাজের মাথায় মুকুটের মতো অবস্থান করে, সমাজ পচে গেছে বলে লাভ নেই, কেননা সমাজ পচে না, পচে তার মাথা। এরা নষ্ট ভ্রষ্ট ও বুদ্ধিহীন স্বার্থপর হয়ে গেলে বাকী সমাজেও এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। কাজেই আমাদের পথভ্রষ্ট সমাজের অর্থ হলো আমাদের পথভ্রষ্ট ‘লেখক সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সিভিল সোসাইটি’। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এর জন্য প্রধানত দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় শিক্ষক সমাজ। এই শিক্ষক কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক নয়, সব ধরনের শিক্ষাদানে জড়িত মানুষই এর জন্য দায়ী। তবে এগুলো একটার সাথে অপরটি এতো বেশি ওতপ্রোতভাবে জড়ানো যে ডিম আগে না মুরগি আগে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া দুরূহ বিষয়। ‘লেখক সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সিভিল সোসাইটি’ সুবিধাবাদী বলেই পুরো সমাজ সুবিধাবাদী হয়ে উঠেছে। সমাজের প্রতি কারো কোনো দায় নেই, দায় থাকার মতো এমনকি তাদের বোধবুদ্ধি আছে বলেও আমি মনে করি না। কেননা তারা সমাজকেই বুঝতে পারে না। তাদের দেখবেন একেকজন একেক পন্থী, পশ্চিমের বিভিন্ন সমাজব্যবস্থাকে তারা নানাভাবে এখানে প্রয়োগ করার প্রয়াস করেন, এই সমাজকে বুঝলে এমন বিপত্তি ঘটত না। পশ্চিমের চিন্তার তল্পিবাহক হয়ে এখানে তার প্রয়োগ প্রচেষ্টার বদলে এখানেই তৈরি হতো সমাজচিন্তক। আমাদের কোনো মৌলিক চিন্তক-দার্শনিক-শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি-বুদ্ধিজীবী খুঁজে পাবেন না। সবাই দেখবেন মুখস্ত বিদ্যার খনি। এই সমাজকে বোঝার জন্য এখানকার ভূপ্রকৃতি, আলো-হাওয়া, দর্শন-সংস্কৃতি, ভাব-ভাবনা, মনন-মানসিকতা সম্পর্কে জানা থাকা আবশ্যক, আমাদের সবাই পশ্চিমকে দাড়ি-কমা-সেমিকোলন পর্যন্ত মুখস্ত বলতে পারে কিন্তু নিজের ঘাড়-মাথা-হাত-পা-কিডনি-পিত্ত-আত্মীয়-প্রতিবেশী-দেশ-মাটি-বাতাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। এরাই আমাদের এদেশে ‘লেখক সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সিভিল সোসাইটি’। এদের কাছে বিশেষ কিছু আশা করার তেমন কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তাদের জ্ঞানের ধারার কারণেই তাদের সুবিধা ভোগের বাইরে অন্য কোনো ভাবনা মাথায় আসে না। এ অঞ্চলের জ্ঞানের ধারায় সুবিধাবাদ নেই, পশ্চিমা জ্ঞানের প্রধান ধারাই সুবিধাবাদ, কাজেই পশ্চিমাজ্ঞানে উচ্চ পাণ্ডিত্যধারী সমাজ অতি উচ্চস্তরের সুবিধাবাদী হবে এটাই স্বাভাবিক। এই অবস্থার পরিবর্তন চাইলে আমাদের জ্ঞানের ধারা, জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য নির্ধারণের ধরনকে বদলাতে হবে। না হয় চিরকালই আপনি একদল সুবিধাবাদী উচ্চমুখস্তবিদ্যার মানুষকে ‘লেখক সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সিভিল সোসাইটি’ বলে আখ্যায়িত করার ভুল করতে থাকবেন।

৭. চলচ্চিত্র- আর্ট, চিত্রকলা-আর্ট, মঞ্চ নাটক-আর্ট, সঙ্গীত-আর্ট, কবিতা-আর্ট, এমন অনেক কিছুই রয়েছে সৃষ্টিশীল, যার সবই আর্ট বা শিল্প বলে জানি আমরা; কিন্তু এর মধ্যে আমরা বিভাজন করি কীভাবে, আর নিজের ভেতরকার সৃষ্টিশীলতার এই ক্ষেত্রকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন বিশেষত আপনি যখন একজন কবি?

শিল্প বলতে আমরা এই সবগুলোকেই বুঝি, শিল্প বিষয়ে বিবিধ বিতর্ক আছে, এ বিষয়ে আমার ‘বঙ্গীয় শিল্পকলা’য় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রথমত শিল্প হয়ে ওঠার প্রশ্ন, তারপর সেই শিল্পের জাত-কুল-মানের প্রশ্ন। এখানে বিভাজনগুলো মূলত মাধ্যমগত আর প্রত্যেক মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু সাধন প্রক্রিয়া আছে। এর বাইরে সব ধরনের শিল্পেরই কাজ মানুষের মন ও মননকে নিয়ে। সংস্কৃত ভাষায় একটি কথা আছে ‘ত্রিপাদস্য দিবি’ অর্থাৎ মানুষের তিনভাগ মন আর একভাগ শরীর। সৃষ্টিশীল মানুষ মানুষের সেই তিনভাগ মনের অংশ নিয়ে কাজ করে, তার প্রকাশের ফর্ম যাই হোক। আমার ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, মানুষের মন নিয়ে যেহেতু কারবার তাই যে মাধ্যমে প্রকাশ যখন অপেক্ষাকৃত সহজ মনে করি এবং যা আমার সাধ্যের ভেতরে আছে সে মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রকাশ করি। আর কবিতাকে অনেকেই বলেন সবচেয়ে শক্তিশালী শিল্প মাধ্যম, এই মাধ্যমে চর্চায় রয়েছি দীর্ঘদিন তাই কিছুটা আয়ত্তে আছে বলে এই মাধ্যমেও নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে সাচ্ছ্বন্দবোধ করি। মূল ব্যাপার আপনার ভেতরকার সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ; মাধ্যম তো একটি বাহক। এদের বিভাজন খুব গুরুতর কিছু নয়, আপনার সাধনা এবং দক্ষতার সাথে এরা সম্পর্কিত। আপনি হয়তো খুব ভালো কবিতা লেখেন, কিন্তু গান গাইতে পারেন না, সেক্ষেত্রে কবিতায় প্রকাশ করাই তো শ্রেয়। নির্দিষ্ট শিল্প মাধ্যমে আপনার দক্ষতাই এখানে মূল বিষয়। বিভাজনগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় প্রকাশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাধ্যমগত দক্ষতা অর্জনের বিষয় বাধ্যতামূলক শর্ত, এটি বলাই বাহুল্য।

৮. আপনার কবিতা এবং শিল্প বিষয়ক গবেষণা, এই দুই সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে সমাজ, মানুষের মধ্যেকার প্রেম, দায়িত্বশীলতা এবং নতুনত্ব বিষয়গুলো নিয়ে বলবেন, একই সাথে আপনার রচনা সম্পর্কে পাঠকদের জন্য কিছু বলবেন কি? 

আমি কবিতায় কিছুটা স্বাচ্ছ্বন্দবোধ করলেও কবিতা আমার অর্জিত দক্ষতায় একমাত্র প্রকাশ মাধ্যম নয়, কেননা আমি ছবিও আঁকি, চিত্রকলা আমার আরেকটি প্রিয় প্রকাশ মাধ্যম। কবিতা, চিত্রকলা, শিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা কিংবা দর্শন চর্চা এগুলোর আলাদা প্রকাশভঙ্গি থাকলেও সবগুলোই আমার কাছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আমি যে কাজ করতে চাই তার জন্যে বিভিন্ন রূপে এদের ব্যবহার করতে পারি।

সৃষ্টিশীলতার সাথে সমাজ, মানুষের মধ্যেকার প্রেম, দায়িত্বশীলতা এগুলোকে আমি মনে করি একটি ছাড়া অপরটি অর্থহীন। এদের সম্পর্ক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো, একপাশ থেকে অন্যপাশ সরাসরি দেখা না গেলেও আমরা জানি সেটির নিশ্চিত উপস্থিতি রয়েছে। কেউ কেউ এগুলোকে অস্বীকার করার এক ধরনের প্রবণতায় ভোগে সেটি মূলত অল্পবিদ্যার ফল। আমরা সমাজ, মানুষ, প্রকৃতির বাইরে কিছু নই। তাই সচেতনভাবে যারা সৃষ্টিকর্মে নিমগ্ন হন তারাই প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীলরূপে প্রকাশিত হন। তবে ছদ্মবেশি আবর্জনারও অভাব নেই, সেসব নিয়ে বেশি ভেবে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।

নতুনত্ব বিষয়ে বলার কথা হলো নতুনত্ব ছাড়া সৃষ্টিই অসম্ভব, তাই আপনি যদি সৃষ্টিশীল হন তবে আপনাকে প্রথা-প্রচলনের বাইরে গিয়ে নতুন করেই সৃষ্টি করতে হবে। এই পথ চিরকালই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, আছে, থাকবে। আপনি নতুন কথা বলবেন, নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন, প্রথার বাইরে গিয়ে ভিন্ন পথে হাঁটবেন আর প্রথার রক্ষক পুরাতন সমাজ আপনাকে সাদর সম্ভাষণ জানাবে এমন দুরাশা না করাই ভালো। প্রকৃত সৃষ্টিশীল মানুষ এই সত্যটি ভালো করেই জানে। আমার কবিতার বিষয়ে যদি বলতে চাই তাহলে বলতে হয় প্রথম কবিতার বই ‘বয়াংসি চরকায় লাঙল কাব্য’ অনেকেই দেখেছে কিন্তু সেটি নিয়ে কোথাও তেমন কোনো কথা হয়নি। হবে না, কারণ তার ভাষা স্বতন্ত্র, প্রথায় অভ্যস্ত মানুষ তাকে সহজেই হজম করে ফেলবে এমনটি আমি আশা করি না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কদাচিৎ কুত্রাপি’ ও ‘বিকস্বর কুত্রাপি’ সম্পূর্ণ নতুন ছন্দ-ভঙ্গি-ব্যঞ্জনায় রচিত কবিতা। এগুলো মানুষ গ্রহণ করবে কেন? তার পরিচিত পথের বাইরে এদের চলন। নতুনকে গ্রহণ করার মতো চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা সুলভ নয়। সাধারণ রম্য, নিম্ন মানের জোকারি, চটুল গল্প, মধ্যযুগীয় পদ্য, স্যাটায়ার, হালকা চমক ইত্যাদি বেশ ভালো সুনাম আপনাকে এনে দেবে, কিন্তু আপনি যদি এসব বাজারি আকাঙ্খার বাইরে যেতে পারেন তবেই স্বাধীনভাবে নিজের সৃষ্টিকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বাজার বড় ভয়ঙ্কর কুহক, সে আপনাকে ক্রমাগত প্রলোভন দিতে থাকবে, কতদিন আপনি নিজেকে সামলাবেন, একদিন দেখবেন আপনি এক আড়তে বসে মালামাল বিক্রি করছেন; কাজেই সৃষ্টিশীলতা এক নিরন্তর একাগ্র সাধনার নাম।

চিত্রকলার বিষয়ে আমার নতুন গবেষণা গ্রন্থ দুটিও এমনই, প্রচলিত চিন্তায় বদ্ধ হয়ে এই পুস্তক পাঠ করতে গেলে পদে পদে হোঁচট খাবেন। আমাদের জং ধরা চিন্তাপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে এই গ্রন্থ দুটির। এখান থেকে ইতিহাস বদলের শুরু হবে। কথাটি অনেক বড় মনে হলেও আমি খুব সচেতনভাবেই এই উচ্চারণ করছি যে এখান থেকে ইতিহাস ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করবে। এই সময়ে অর্থাৎ আমার জীবদ্দশায় বিবিধ ভালো-মন্দ, শত্রতা-মিত্রতা থাকায় সেটি নাও হতে পারে, তবে এই বই দুটিতে এমন কিছু আছে যা বঙ্গীয় ইতিহাসের অন্তত শিল্পকলার অতীত বদলে দেবে, কেননা ভবিষ্যতকে তার বদলাতেই হবে। ভবিষ্যত বদলের জন্য অতীত বদলাতে হয়, আমরা সম্ভবত অনেকেই এই বিষয়ে সচেতন নই; আমরা সচেতন অসচেতন যেমনই হই না কেন, আমাদের ভবিতব্যের একটি খসড়া এই বই দুটিতে নিবিষ্ট পাঠক খুঁজে পাবেন এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫