প্রত্যাখ্যানের অগ্নিশিখাই আমাকে জ্বালিয়ে রেখেছে: জাহিদ সোহাগ

এহসান হায়দার
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৫:২০

কবি, নাট্যকার ও কথাশিল্পী জাহিদ সোহাগ। ছবি: মুম রহমান
জাহিদ সোহাগ কবি, নাট্যকার ও কথাশিল্পী। জন্ম ১৯৮৩ সালের ১০ মার্চ, মাদারীপুর জেলা সদরের কুলপদ্বী গ্রামে। ঢাকায় বসবাস। পেশায় সংবাদিক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
কবিতার বই ‘আর্তনাদও এক বায়বীয় ঘোড়া’, ‘অসুখের শিরোনাম’, ‘দুপুর’, ‘ব্যক্তিগত পরিখা’, ‘ব্যাটারি-চালিত ইচ্ছা’, ‘নামহীন’, ‘অহেতু বুদ্বুদ’, ‘কয়েকটি সূর্য পেরিয়ে’, ‘রোদের ফালি তরমুজে’, ‘লুণ্ঠিত একা’, ‘প্রায় শূন্য’। গল্পগ্রন্থ ‘বড়দের মাছমাংস’। উপন্যাস ‘সে ও তার শুয়োর’। নাট্যসংকলন ‘নিহত দিনের নাট্য’। যৌথ সম্পাদনা করেছেন ‘তিন বাঙলার শূন্যের কবিতা’। সমকালিন প্রেক্ষাপটে জাহিদ সোহাগ লিখে চলেছেন, সময়ে জ্বলে উঠেছেন, নতুন স্বরের গল্প তার বিশেষ পরিচয়ের জায়গা। নাটকও তাকে অন্যরূপে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে পাঠকের জগতে।
সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকার, কথা বলেছেনে বাংলা সাহিত্য ও সাম্প্রতিক শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ে। আড্ডায় ছিলেন- সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক এহসান হায়দার
প্রশ্ন: আপনার কবিতা লেখা শুরু হয়েছিল কীভাবে? আপনার শৈশব ও পাঠের জগতে প্রবেশের গল্প শুনতে চাই।
জাহিদ সোহাগ: প্রথম লেখা বয়সন্ধিকালে। তখন নিজের সম্পর্কে বুৎপত্তি লাভ করে নেমে পড়েছি নিজেকে খননের খেলায়। সবকিছুই শরীর ও মন দিয়ে চেখে দেখতে চাই, বাদ যায় না দুপুরের খরখরে রোদও।
বলতে পারেন, আমি শিশুকাল থেকেই কবি, কেবল আমার অক্ষরজ্ঞান ছিল না, কিন্তু কবির মনে ‘কী যেন একটা ঘটে’ তা সবসময়ই আমার ভেতর আলোড়ন তুলতো। মানে যে বিষাদ, প্রেম, নির্জনতা ও একাকিত্বে কবি জারিত হন, তার সঙ্গে তখনই আমার পরিচয়; যা মেছো ভূতের মতো এখনও আমার পিছু ছাড়েনি।
ওই শৈশবের কথা আমি অন্য একটি সাক্ষাৎকার ও গল্পে লিখেছি, এখানে সংক্ষেপে বলি, আমরা একটি পোড়ো বাড়িতে [আসলে একতলা মন্দির] থাকতাম, বাড়িটার চারপাশে জঙ্গল; এক হিন্দু জমিদারদের কাছ থেকে আমার নানীর বাবা কিনেছিলেন। তা নিয়ে তাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে বিবাদ এখনও চলমান। আমরা এক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি। যত্রতত্র সাপ আর অপমান-লাঞ্ছনা আমাদের ঘিরে থাকতো। আমি সারাদিন ওই বাড়ির সিঁড়িতে, কখনও পাশের জামরুল গাছের ছায়ায় বসে থাকতাম। আব্বা-আম্মা সরকারি চাকুরিজীবী, বড়ভাই তার জগতে, প্রায়িই বাড়িতে আমি একা।
এমন দীর্ঘ নীরবতার মধ্যে কখনও কখনও বিচিত্র পেশার লোকজন এসে আমার সঙ্গে গল্প করতেন, কখনও আমি কচ্ছপ শিকারীদের পেছনে পেছনে ঘুরতাম। কখনও পুকুরঘাটে একা একা নিজের টলমলো মুখে তাকিয়ে থাকতাম। ওই বয়সে এক যুবতী আমাকে তার কামনাদগ্ধ শরীরের পাঠ নিতেও শেখান।
এখন এসব কথা থাক।
তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, কোনো এক দুপুরবেলা স্কুল পালিয়ে রিকশাভ্যানে যেতে যেতে আমার প্রায়-ভাবসমাধি হওয়ার দশা, দুইপাশে সবুজ ধানক্ষেত ঢেউ খেলিয়ে যাচ্ছে, তারই মর্মছোঁয়া বাতাস আর পালানোর নেশায় আমি মনে মনে উচ্চারণ করি কয়েকটি লাইন : ‘আমি আর যাব না ফিরে/সবুজ বাতাস রেখেছে ঘিরে’ [হুবহু মনে নেই, এমন ধরনের অন্তমিলে লেখা]। রাতে তা পদ্যে ও গদ্যে লিখে রাখি খাতায়, আর সকালে ‘অন্য এক আমার’ সঙ্গে পরিচিত হই। তারপর রাশি রাশি কবিতার পঙক্তি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেসব কবিতা কিশোরের মনের খেয়াল ছাড়া কিছু নয়, পাঠ্য বইয়ের অনুকরণে লেখা। বন্ধু মহলে যার সমঝদারও জুটে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে পাড়া-প্রতিবেশীময়। কারো কারো প্রেমপত্র লেখায় দায় আমাকেই মেটাতে হয়।
একদিন স্কুলে যাবার পথে বিজয় দিবসের সংখ্যা প্রকাশের বিজ্ঞপ্তি দেখি, ঠিকানামতো কবিতাও পাঠাই, পরে খবর নিতে গিয়ে দেখি ছাপা হয়েছে, কিন্তু কিছুটা জেরার মুখে পড়তে হয় তৎসমবহুল শব্দ ও জটিল বাক্যবিন্যাসের কারণে। এক মুরুব্বি ভর্ৎসনাও করেন, অভিধান দেখে দেখে এই কবিতা লিখেছি বলে। আমাকে তারা লেখক কপি দেননি, উপরন্তু ১০ টাকা দিয়ে কিনতে বলেন, তখন ১০ টাকা জোগার করা আমার পক্ষে অসম্ভব। ভাগ্য ভালো, যাবার পথে ছাপাখানায় উঁকি দিলে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ চোখে পড়ে। প্রেসের কর্মীরা কবিকে একটি সংখ্যা দিয়ে ধন্য হন এবং আমাকে অনেক আর্শীবাদ করেন।
বাড়িতে পড়ারমতো ছিল মকসুদুল মুমীন, যা পুরোটাই পড়া এবং অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া সত্ত্বেও অ্যাডাল্ট অংশ বারবার পড়তাম অন্য সুখের আশায়।
এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় এক সিনিয়র বন্ধু একটি বই গুঁজে দিলেন হাতে, পেপারব্যাকে ছাপা অ্যাডাল্ট প্রেমের উপন্যাস, যেটা আমাকে সপ্তাহ ধরে বহুবার ব্যয়িত করে এবং ভাষার সত্যিকার রূপের সঙ্গে পরিচয় ঘটায়। এবং বইটি আমার পুরোনো সব লেখা বাতিল করে দেয়, কিন্তু নতুন পথও অজানা।
প্রশ্ন: ছোট কাগজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, কতটুকু কবিতা চর্চায় ভূমিকা রেখেছে?
জাহিদ সোহাগ: সবে আইএসসিতে ভর্তি হয়েছি, শহরের এম. এম. হাফিজ মেমোরিয়াল লাইব্রেরির সদস্য হয়ে বইয়ের জগতে ঢুকে গেছি। যতদূর মনে পড়ে, একদিন নাজিমউদ্দিন কলেজে ‘লেখা আহ্বান’ করে বিজ্ঞাপন দেই, আমার শিক্ষক গল্পকার বাদশা ওয়াজেদ আলীর তত্ত্বাবধানে ‘সংশয়’ নামে এক ফর্মার একটি পত্রিকা করব। সম্পাদক আমি। এখান থেকে ঠিকানা টুকে নেন গোপালগঞ্জের পত্রিকা ‘দূর্বা’র সহযোগী সম্পাদক কবি সারফুদ্দিন আহমেদ এবং একটি সংখ্যা দূর্বা-সম্পাদক আমাকে কুরিয়ারও করেন। কিন্তু শহর-গ্রাম ঘুরে ঘুরে তা ফিরে যায়। পরে সেটা হাতে হাতেই পাই।
তাদের লেখা প্রকাশ করি, আমিও লেখা পাঠাই। ‘দূর্বা’র সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে ওঠে, সম্পাদক গাজী লতিফ আমাকে তার ছায়ায় ঠাঁই দেন [উনি ছিলেন রঙিন মানুষ]। তিনি আমার কবিতা বহু পত্রিকায় ছাপার জন্য পাঠান। আমিও দুইএকবার গোপালগঞ্জ যাই, ধীরে ধীরে আমি ‘দূর্বা’র সহযোগী সম্পাদক হয়ে যাই।
‘দূর্বা’ গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপের সুবাদে সাহিত্যপত্রিকা ও সমকালীন কবিদের ব্যাপারে উৎসাহি হই এবং দুই-এক বছরের মধ্যে ২০০৩ সালের নভেম্বরে আমি ‘ঢাকার কবি’ হওয়ার জন্য নিজের গ্রাম-মফস্বল ও বন্ধুদের ছেড়ে আজিজ সুপার মার্কেটে এসে পা রাখি। তার আগে বাড়ির উঠানে কেরোসিনে দাহ করে আসি ৪-৫টি কবিতার খাতা ও ফেরার সমস্ত সম্ভাবনা।
যদিও আমি বেশিদিন ছোট কাগজের সঙ্গে থাকতে পারিনি, ‘দূর্বা’ও তরুণদের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারেনি।
তাছাড়া আমি ছিলাম রাজনৈতিক কর্মী। বিপ্লবের স্বপ্ন তখনও মরে যায়নি, নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে মনে হলো কবিতার পথই আমার পথ, যে পথে আমি একা চলতে পারি।
প্রশ্ন: প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের ঘটনাটা ও তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাই...
জাহিদ সোহাগ: প্রথম বই ‘আর্তনাদও এক বায়বীয় ঘোড়া’ ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়, যদিও এর আগে একটি পুস্তিকা [নৈরাজ্য ঘুঙুর] প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও সেটাকে আমি আর স্বীকার করি না। একটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখা কবিতাগুলো গালি আর স্ল্যাংয়ে ভর্তি ছিল।
২ বছর ধরে ‘মুহূর্ততাড়িত’ হয়ে লেখা দীর্ঘ কবিতাটি দিয়েই আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। এর পাণ্ডুলিপি কবি শামীম রেজা আমাকে সামনে বসিয়ে রেখে পুরোটা পড়েন। আমি কিছু শুনব না জেনেও তিনি আমাকে সম্পাদনার পরামর্শ দিয়েছিলেন [তা শুনলে ভালো হতো]। এবং বেশ কয়েকজন অগ্রজ কবিকে পড়তে দিয়েছিলেন, তারা পড়ে অনেক প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বইটি প্রকাশের উদ্যোগও নেন; কিন্তু তখন বইমেলা শুরু হয়ে গেছে, প্রকাশক পাণ্ডুলিপি পছন্দ হয়েছে জানিয়ে পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু আমার অপেক্ষা করার ধৈর্য ছিল না।
পরে সারফুদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে মেলার মধ্যেই ‘দূর্বা’ গোষ্ঠীর কয়েকটি বই প্রকাশের দায়িত্ব নেয় প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যধারা’। মেলা শেষ হয় হয় কিন্তু বই আসে না। প্রকাশকের বাণিজ্য করার মতো অন্য বই প্রকাশের ভীষণ চাপ, বাঁধাইখানায় সিরিয়াল পাচ্ছেন না। একদিন প্রকাশকের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বাংলাবাজার যাই। বামপন্থী নেতা প্রয়াত আসলাম উদ্দিনের সঙ্গে প্রেস থেকে সবকিছু এনে তার চেনা একটি বাঁধাইখানায় রাখি। বাইন্ডার চলমান কাজ বন্ধ রেখে আমার বইয়ের কাজ শুরু করেন। আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। সেদিন বাসায় ফিরেছিলাম কিনা জানি না, পরদিন বিকেলে বই নিয়ে রিকশায় উঠি। দোয়েল চত্ত্বরে পুলিশ আমাকে আটকে দেয়। বইয়ের স্তুপ কাঁধে নিয়ে বাংলা একাডেমির চত্তরে ঢুকে স্টলে ও বয়রা তলায় লিটলম্যাগাজিন চত্ত্বরে রাখি।
বইটি বেশ বিক্রি হয়, সতীর্থরা কেনেন, বিশেষত নব্বই দশকের কবিরা বইটি কিনে আমাকে অ্যাপ্রেশিয়েট করেন, কেউ কেউ ৫০০ টাকা দিয়েও কেনেন।
মেলা শেষে শূন্য দশকের ৫টি কবিতার বই নিয়ে ‘লোক’ একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাতে আমাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যদিও কয়েকজন সতীর্থ আমাকে বাদ রাখার জন্য আয়োজক ও আলোচকদের চাপ প্রয়োগ করেন। আলোচকরা অনঢ় ছিলেন, আয়োজক একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লে আমি লোকে তালা মারার হুমকি দেই [তখন আমার মিষ্টি কথাও বেয়াদবের মতো শোনাতো, বিনয়-টিনয় তো ছিলই না], আমার হুমকি বাস্তবায়নে গল্পকার পারভেজ হোসেন দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘ব্যাটা তুই এক্ষুনি তালা মার, দেখি কে ঠেকায়।’ ‘লোক’ সম্পাদক অনিকেত শামীম আমাকে অনেক পছন্দ করেন, আমি লোকেরও কর্মী। আমার বই নিয়ে আলোচনা করেছিলেন কবি মুজিব মেহদী। আবৃত্তি কে করেছিলেন মনে নেই। ওইসময় কবি কুমার চক্রবর্তীও আমাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলেন।
‘আর্তনাদও এক বায়বীয় ঘোড়া’ একটি ‘না-কবিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছিল। সতীর্থদের আমার ব্যাপারে আশাবাদী করতে কবি শামীম রেজা এক সন্ধ্যায় পিককে কয়েকজনকে নিয়ে পানসভার আয়োজন করেছিলেন, কিন্তু তারা আমার বই নিয়ে কথাই বলেননি।
হতাশা আর অবজ্ঞার মধ্যে হঠাৎ একদিন সকালবেলা প্রচুর ফোন পাচ্ছিলাম, ‘কালের খেয়া’য় একটি রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে, পত্রিকা কিনে দেখি কবি চঞ্চল আশরাফ আমার বইটি নিয়ে রিভিউ লিখেছেন। আমি তো অবাক! ওনার সঙ্গে তখনও ততটা আলাপ নেই, আমাকে চেনেন কিনা সন্দেহ। কবি মাসুদ হাসান ওনাকে রিভিউ লেখার জন্য বইটি দিয়েছিলেন। চঞ্চল আশরাফ আমার কবিতার নানাদিক উল্লেখ করে করে খুব পজেটিভ রিভিউ লিখেছিলেন। কয়েকটি আড্ডায় আমার বইয়ে প্রসঙ্গও তুলেছিলেন।
প্রশ্ন: ঢাকাকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চায় গোষ্ঠীবাদীতা লক্ষ্য করা যায়- এই গোষ্ঠীবাদী বৃত্তের বাইরে থেকে বা প্রান্ত থেকে সাহিত্যকর্মীর চর্চার ক্ষেত্র কতখানি মুক্ত বলে মনে করেন?
জাহিদ সোহাগ: আমি প্রশ্নের উত্তর অন্যভাবে, আমার অভিজ্ঞতার আলোকে দিতে চাই : গোষ্ঠীবাদীতা আমাদেও পীড়া দিয়েছিল। যখন আজিজে এসে দেখতাম কবিরা পরস্পরের আঞ্চলিক, একাডেমিক এবং নানা পত্রিকা-ক্ষমতা গোষ্ঠীর লোক। সেখানে আমি আগুন্তুক। আমার সমসাময়িক মাদারীপুর থেকে আসা কোনো কবির সন্ধান ঢাকায় এসে পাইনি। দুইএকজন অনুজ্জ্বল জ্যেষ্ঠ কবি সাধারণ আন্তরিকতাও দেখাননি। তার উপরে আমার মুখের ভাষা অবিনীত, কারো সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়া দূরে থাক, কারো ছায়া মাড়াতেও যেতাম না। এ কারণে আমার লেখা খুবই কম ছাপা হতো। আমি সম্পর্ক দিয়ে ছাপার যোগ্যতা গড়ে তুলতে চাইনি।
আমি ছিলাম সার্বক্ষণিক কবি, লেখার দিকেই মনোযোগ দিয়েছি বেশি, আসলে ছাপার কথা ভাবিইনি। তখন মনে হতো ছাপার কথা ভাবলে লেখা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অহেতুক মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
আমি মনে করি, প্রত্যাখ্যাত না হলে কবির মনে আগুন জ্বলে না। প্রত্যাখ্যানের অগ্নিশিখাই আমাকে জ্বালিয়ে রেখেছে।
আমি মনে করি, গোষ্ঠীবাদ কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না, যদি কবির মনে সত্যিকারের শিখা জ্বলতে থাকে। গোষ্ঠীর মুখে ছাই দিয়ে একজন কবি ক্রমাগত নিজেকে ভাঙচুর করবেন, লিখবেন, ভাববেন, বই ও মানুষ ছেনে ছেনে প্রকৃত পাঠ নেবেন। কবি নিজেই নিজের স্রষ্টা, সে কেন অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকবে?
ঢাকাকেন্দ্রিক সাহিত্য জগতে একজন লেখকের ব্যক্তিসত্তা সহজে গড়ে ওঠে। সহজে সমকালীনতা স্পর্শ করতে পারেন। ঢাকা বা রাজধানী হলো বহু জেদি স্রোতের মিলনমেলা। ঢাকার বাইরে একজন কবিকে তার সামাজিক পরিমণ্ডল পিছন থেকে টেনে ধরে, তার বিশ্বাস টলিয়ে দেয়, তিনি জেদি স্রোতগুলোর সন্ধান পান না, মফস্বলের স্লোথ জীবনে দুদণ্ড বসার লোকও পান না। আমি মনে করি, সবাইকেই ‘হিজরত’ করতে হয়, হিজরত না করলে নিজেকে চেনা যায় না। যারা ঢাকায় টিকে আছেন তাদের প্রত্যেকের জীবনে খুবই নির্মম একটি সার্ভাইবাল পিরিয়ড আছে, এবং প্রতিনিয়ত তাকে টিকে থাকার জন্য লড়তে হয়, যা প্রান্তের মানুষেরা কল্পনাও করতে পারবেন না।
প্রশ্ন: মাদারীপুর শিল্পসাহিত্যে কতটা সমৃদ্ধ আজকের দিনে? যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর অঞ্চলে সেকালে জন্মেছেন লালন সাঁই, মীর মশাররফ হোসেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, জলধর সেন, বিজয় সরকার, জসীমউদ্দিন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদারের মতো কবি। পদ্মাতীরবর্তী এই অঞ্চলে একদা এসেছেন রবি ঠাকুরও। আপনার কবিতায় এইসকল যুগশ্রেষ্ঠদের অনুভব করেন কীভাবে?
জাহিদ সোহাগ: মাদারীপুরে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রবাহ বহু আগেই অপসৃত। [কবি অসীম সাহা আমাকে দেখলে বলতেন, ‘তুমিই একমাত্র মাদারীপুরের কবি, বাবার চাকুরিসূত্রে আমি মাদারীপুর বসবাস করলেও আমার পৈত্রিক ভিটা মানিকগঞ্জে, আর তপন বাগচী শহরের বাইরে, কদমবাড়ি। তুমি একদম শহরের ছেলে’]। আপনি বরিশাল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বগুড়া থেকে আসা কবি পাবেন দিস্তা দিস্তা, প্রায় সব প্রজন্মের মধ্যেই এইসব অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কবি রয়েছেন।
মাদারীপুরে ভালো স্কুল কলেজ নেই। সৃজনশীল বইয়ের দোকান নেই। এখনও চিকিৎসার জন্য যেতে হয় বরিশাল বা ফরিদপুরে, পদ্মাসেতু হওয়ার কারণে এখন ঢাকায়।
মাদারীপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্ভবত দেশভাগ পূর্বকালের। বাসুদেব দাশগুপ্তর মতো গল্পকার এখানে জন্মেছিলেন, ভাবা যায়!?
মাদারীপুরে যে অগ্রজ ও সতীর্থদের ছেড়ে এসেছি, এখনও তারাই আছেন, প্রয়াত হয়েছেন কেউ কেউ। নতুন প্রজন্মের কবিতা বা কথাসাহিত্যের শহিদের খোঁজ এখনও পেলাম না।
আমিও বেঁচে থাকা সেখানকার কবিদের শেষ বংশধরদের একজন।
মাদারীপুরে বইমেলা, সাহিত্য আড্ডা, পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদি করেও নবীনদের মধ্যে লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জেগেছে বলে মনে হয় না।
শহরের এম. এম. হাফিজ মেমোরিয়াল লাইব্রেরি, যেটা আমার চেতনায় আলো ছড়িয়েছে; তখন অনেককেই দেখতাম বই নিতে আসতেন, বন্ধুদের সঙ্গে পড়ার প্রতিযোগীতা ছিল। এখন লাইব্রেরিটি প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী। বইপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বই-বান্ধব নন এমন ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে এর পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। ভবনটিও তথৈবচ। এটিকে বাঁচানোর সমস্ত উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে।
বলে রাখি, কবি বেলাল চৌধুরীর মামাতো ভাইয়ের নামে এই লাইব্রেরিটি। তিনি মাদারীপুরের এসডিও ছিলেন। তরুণ বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। কবি বেলাল চৌধুরী তার বই এখানে দান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দান গ্রহণের জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একটি শহরে বইপত্র নাই, সাহিত্য নিয়ে সিরিয়াস তর্ক-বিতর্ক নাই, অনুষ্ঠান নাই, নতুন নতুন প্রকশনা নাই, অনলাইন ম্যাগাজিন নাই, সেই শহর কীভাবে গুণীজনদের উত্তরাধিকার বহন করে?
আপনি যে যুগ-স্রষ্টাদের কথা বলেছেন, তারা শুধু আমার কেন, সমগ্র বাংলাভাষী লেখকদের মনেই মননের শিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন। তাদের পাঠ করেই তো আমার বড় হওয়া, তাদের রচনার কাছে গিয়েই তো আশ্রয় নেওয়া।
প্রশ্ন: সম্প্রতি আপনি নিজেকে নাট্য চর্চার সঙ্গেও যুক্ত করেছেন, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
জাহিদ সোহাগ: নাটক আমার ভাবনায় সবসময়ই ছিল, কিন্তু লিখব এটা ভাবিনি। আমি সিরিয়াসলি কবিতা চর্চায় নিবেদিত ছিলাম বলে নাটক ও কথাসাহিত্য পড়তাম না তা নয়; কবিতার পড়ে আমার কৌতূহলের জায়গা ছিল নাটক। প্রধানত আমি কবিদের লেখা নাটকই বেশি পড়তাম। ঢাকা এসে শিল্পকলায় প্রচুর নাটক দেখেছি।
তবে জীবনের একটি অধ্যায়ে এসে খুব ক্লিশে হয়ে যাচ্ছিল সব কিছু, তখন আয়োজন করে নাটক পড়তে শুরু করি। আমার সংগ্রহে এখন নাটকের বইই বেশি। নাটক আমাকে খুবই উদ্দীপ্ত রাখে। ১৫টি নাটক নিয়ে আমার একটি নাট্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে, একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। সম্প্রতি একটি দীর্ঘ নাটক লেখার মকশো করছি। আমার ভেতরে একজন পারফর্মারও আছে।
আমি কবিতা ও ছোটগল্প একসাথে চর্চা শুরু করেছিলাম, যদিও কবিতার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে গল্প লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি নিজেকে কেবল একটি জনরার লেখক মনে করি না, আমার আদর্শ রবীন্দ্রনাথ, বহু রকম লেখাজোখার প্রতি আমার ঝোঁক আছে।
প্রশ্ন: আপনার কবিতায় অলংকার এবং প্রতীকী বিষয় নানান রূপে এসে ধরা দেয়- বিষয় দুটি কবির ভাবনায় ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বিস্তার লাভ করে- এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলবেন?
জাহিদ সোহাগ: এককালে আমি সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আন্দোলন বিষয়ক পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছিলাম, এবং এতে আমার মন ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যাচ্ছিল। তখন সবকিছুতেই প্রতীক, চিত্রকল্প, পরাবাস্তববাদ বা ছন্দই আগে খুঁজে পেতাম। যা কবিতার রসাস্বাধনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি চাই না কবিতা পড়তে গিয়ে আগে ছন্দ চোখে পড়ুক, বা প্রতীক-চিত্রকল্পে কল্পিত কলম দিয়ে আন্ডার লাইন টেনে রাখি। আমি কবিতাকে বিশ্লেষণ করতেও চাই না। কবিতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনুভূতির, আর মুহূর্তকেই করে তুলি কবিতা।
যেহেতু আমরা বইপড়া-কবি, কবিয়াল বা চারণ কবি নই, তাই আমাদের দিন-দুনিয়ার সাহিত্যের বিবিধ বিষয় আপনাআপনিই জানা হয়ে যায়। এবং তার প্রভাব নিজের লেখায় পড়ে। এসব চিহ্নিত করা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রশ্ন: কোভিডপরবর্তী সময়ে সাহিত্য চূড়ান্তভাবে প্রজেক্টে রূপ নিয়েছে, নানামুখি প্রকল্প এসেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যাপ এসেছে। সৃষ্টিশীল জ্ঞানচর্চা এবং শিল্পচর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে নানাভাবে, এই বিষয়গুলিকে একজন কবি হিসেবে কীভাবে দেখেন?
জাহিদ সোহাগ: প্রযুক্তি মানুষের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয় ঠিকই, তবে মানুষই প্রযুক্তি ব্যবহার করে; মানুষ সবসময়ই অ্যাডাপটেশনের মধ্য দিয়ে টিকে থাকে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) দিয়ে হয়ত অনেক কাজই করা সম্ভব, এমনকি উপন্যাসও লেখা হয়েছে, কিন্তু তা মানুষের কল্পনা ও সৃজনশীলতার উপর চেপে বসবে বলে আমার মনে হয় না। যিনি কবি নন তিনি এআই ব্যবহার করে কবিতার মতো কিছু একটা লিখতে পারবেন হয়ত, তবে যিনি কবি তিনিই সফল হবেন বেশি।
সিলিকন দিয়ে বানানো কৃত্রিম নারী আর ঝগড়াটে স্ত্রী দুজনই কি বিছানায় সমান আনন্দ দিতে পারে? একজন বাধ্য, অন্যজনকে জয় [কনভেন্স] করে নিতে হয়। স্ত্রীর ঝামটা থেকে বাঁচতে এখন পুরুষরা যদি সিলিকনস্ত্রী ঘরে আনেন সেটা রাগ মোচনে সহায়ক হতে পারে, কিন্তু সঙ্গী হয়ে উঠবে না।
প্রশ্ন: প্রচলিত ধারার বাইরে আপনি সাম্প্রতিক সময়ে কবিতায় নতুন কোনো কাজ দেখেছেন, যা আপনাকে ভাবিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে, কিংবা নতুন সম্ভাবনা দেখছেন কী বাংলা কবিতায়?
জাহিদ সোহাগ: কবিতা বা অন্যকোনো শিল্প মাধ্যমে কোনোকিছু চিহ্নিত করতে হলে অনেকখানি দূরত্ব দরকার। শিল্প সমকালের হলেও ব্যবসাটা কিন্তু মহাকালের। তাই সমসাময়িক কাল নিয়ে বলা খুবই কঠিন। তবে মোটা দাগে কিছু কথা তো বলাই যায়। ‘নতুন কিছু লিখতে হলে পুরোনো বইয়ের কাছে যাও’ এমন একটি কথা [হুবহু মনে নেই] পড়েছিলাম। আমাদের এই বিশ্বভাণ্ডে সবকিছুই আছে, কেবল কালে কালে তার পুনসৃজন ঘটে, যার রূপরেখা একেকজনের হাতে একেক রকমের।
বাংলাদেশের প্রথম দশকের বেশিরভাগ কবিরই প্রবণতা সাবজেক্টিভ কবিতা লেখার প্রতি। সমাজ-রাজনীতির বাইরে গিয়ে নিজের হৃদয়ে কান পেতেছেন তারা, ব্যক্তিকে খুড়েছেন। তাই কলাকৈবল্যবাদ খানিকটা ঘাড়েও চেপেছে তাদের।
পরের প্রজন্মের কবিতার মধ্যে গদ্যরূপ আছে, আছে জনপ্রিয় টুলস ব্যবহারের প্রবণতা। সমসাময়িক বিষয় অনেককেই আলোড়িত করছে, তাদের কবিতা হয়ে উঠছে কনটেক্সচুয়াল। কেউ কেউ ইসলামি মিথ ও পরিভাষা ব্যবহার করছেন। রুমি-গালিবদের [বলা হয় সুফিবাদী কবিতা] মতো কবিতা লিখে ফেসবুকে বৃহত্তর পাঠকের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছেন, কেউ কেউ বিপুল পাঠকপ্রিয়তাও পাচ্ছেন। এখন আমাদের যুগের হাওয়া হচ্ছে রীলসের মতো, দ্রুত বদলে যাচ্ছে, এই বদলানোর মুহূর্তে যতটুকু চোখ রাখা যায় কবিতার রূপ ততটুকুই। এসব ভালো বা মন্দ কিনা আমি বলতে পারব না। যুগের চাহিদাকে অস্বীকারও তো করা যায় না।
প্রশ্ন: একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
জাহিদ সোহাগ: আগে মনে করতাম সামাজিক দায়বদ্ধতা বুঝি সংগ্রামী কবিতা লিখে পূরণ করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে চল্লিশের দশকের কবিরা যেভাবে মার্ক্সবাদী আদর্শে সংগ্রামী কবিতার চর্চা করেছেন, তার প্রভাব সমাজে কতটুকু পড়েছে তা আমার জানা নাই। বরং তখন ছিল মার্ক্সবাদী রাজনীতির কাল, সেই কালই বরং কবিদের উপর প্রভাব ফেলেছে। এখন বাংলাদেশে যেমন ইসলামি ভাবাদর্শের বিপ্লব ঘটছে, সবাই ইসলামিক কবিতা লেখার দিকে ঝুকছেন, বেশি বেশি আরবি ফার্সি শব্দ ব্যবহার করে ভাবছেন তারা বুঝি হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া-বিপ্লবী কবিতা লেখা [হচ্ছে] না হলেও মমতাময়ী কবিতা তো ঠিকই লেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী এবং তার রাজনীতি নিয়ে কবিতা লেখার বন্যাও তো আমরা দেখছি। সেসব কবিতা তো বাঘা বাঘা কবিরাও লিখেছেন। কেন? সোভিয়েত টিকে থাকলে এরা কমিউনিস্ট হতেন, রাশিয়ায় নিজে বা ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাতেন। মার্কস-লেনিনকে নিয়ে কবিতা লিখতেন। কেন? আসলে কে যে কাকে প্রভাবিত করে বোঝা মুসকিল!
তাছাড়া, খুব কম সংখ্যক কবিই রাষ্ট্র তথা কর্তৃত্ববাদের সঙ্গে বিরোধ করে চলেন, কালে কালে তারা রাজানুগ্রহই পেয়েছেন এবং এখনও চেয়েই আসছেন।
স্বৈরশাসক এরশাদের অনুগত কবিগোষ্ঠী ছিলো, অথচ তখন ছাত্ররা রাস্তায় প্রাণ দিচ্ছে। এই কবিদের এরশাদ বাড়ি বানানোর জন্য প্লট দিয়েছেন, বিদেশ ভ্রমণ ও টাকা-পয়সা দিয়েছেন, এরাই আবার নতুন সরকারের মধুভাণ্ডে গুঞ্জন তুলেছেন। শাসকের পরিবর্তন হয়, কিন্তু মধুভাণ্ডের চারপাশের গুঞ্জন কখনও থামে না। যদিও এরা প্রায় সবাই সামজ-রাজনীতি তথা জনগণের প্রতি কমিটেড, গরিব-বলিবর্দ এদের গল্প-কবিতার নায়ক। কী এক আশ্চর্য স্ববিরোধীতা!
আমর প্রথম বইটিও এই কথিত ‘দায়দ্ধতা’ মেটাতে চেষ্টা করেছিল, পরে সেখান থেকে সরে এসেছি; তারপরও সামাজিক নানা বিষয় যে আমাকে আলোড়িত করে না তা নয়; রাষ্ট্রযন্ত্রের চরিত্রচারিত্র্য নিয়ে লিখেছিও, কিন্তু তাতে রাষ্ট্রটির একটি নটে গাছও মুড়োয়নি, বরং সুযোগ পেলে খুনির হাতে পুষ্পমাল্য নিতে মাথা নত করে দাঁড়াবও!?